ঢাকা শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪ , ১৯ আশ্বিন ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

nogod
nogod
bkash
bkash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
nogod
nogod
bkash
bkash

জাতীয়করণই হোক শিক্ষক দিবসে শ্রেষ্ঠ উপহার

মতামত

আবু তাহের মুহাম্মদ নিজাম উদ্দিন

প্রকাশিত: ০০:১০, ৫ অক্টোবর ২০২৪

সর্বশেষ

জাতীয়করণই হোক শিক্ষক দিবসে শ্রেষ্ঠ উপহার

৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস। পৃথিবী জুড়ে দেশে দেশে দিবসটি পালনে শিক্ষকদের মধ্যে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করলেও বাংলাদেশে তেমনটা নেই। কারণ পৃথিবীর অন্যান্য দেশে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা ও মর্যাদা সর্বোচ্চ হলেও এদেশে তার বিপরীত, বিশেষ করে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে। দেশে এই স্তরের ৯৭ শতাংশ শিক্ষা এখনো এমপিও (মান্থলি পে অর্ডার) নির্ভর। অর্থাৎ এসব প্রতিষ্ঠানে একজন সহকারী শিক্ষক চাকরিতে যোগদান করে বেসিক বেতন পান ১২৫০০ টাকা, বাসা ভাড়া পান ১০০০ টকা, চিকিৎসা ভাতা পান ৫০০ টাকা। যেখান থেকে আবার অবসর-কল্যাণ ফান্ডের জন্য ১২৫০ টাকা কেটে রাখা হয়। মাস শেষে সর্বসাকুল্যে তার একাউন্টে ক্রেডিট হয় ১২ হাজার ৭৫০ টাকা। একই চিত্র একজন প্রভাষকের ক্ষেত্রেও। তাঁর বেসিক কিছুটা বেশি হলেও বাসা ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা একই। অর্থাৎ তিনি বেসিক বেতন পান ২২০০০ টাকা, বাসা ভাড়া ১০০০ টাকা, চিকিৎসা ভাতা ৫০০ টাকা। সেখান থেকে অবসর-কল্যাণ বাবদ ২২০০ টাকা কেটে রাখা হয়। সে হিসেবে মাস শেষে তাঁর একাউন্টে ক্রেডিট হয় ২১ হাজার ৩০০ টাকা। অবশ্যই করোনা পরবর্তী সময়ে নতুন পে স্কেল না হওয়ায় সবাইকে স্পেশাল বেনিফিট হিসাবে বেসিকের ৫ শতাংশ দেয়া হচ্ছে।

বর্তমানে দ্রব্যমূল্য ও মুদ্রাস্ফীতির বিবেচনায় যেখানে ২/৩ জনের একটি সংসার চালাতে ৩০ হাজার টাকার অধিক মাসিক খরচ লাগে সেখানে ১২ হাজার ৭৫০ টাকায় একজন সহকারী শিক্ষক কিভাবে সংসার চালান তা ভাবতেও কষ্ট হয়। এইতো গেলো প্রতি মাসের হিসাব। কিন্তু যখন ঈদ-কোরবান আসে তখন বোনাসের নামে শিক্ষকদেরকে যা দেয়া হয় তা তাদের জন্য যেমন অপমানের তেমনি জাতি হিসেবেও সবার জন্য লজ্জার! এই দুই ঈদে শিক্ষকদের  বেসিকের ২৫ শতাংশ বোনাস দেয়া হয়। অর্থাৎ একজন সহকারী শিক্ষক বোনাস পান ৩১২৫ টাকা এবং একজন প্রভাষক পান ৫ হাজার ৫০০ টাকা। নামমাত্র এসব বোনাস দিয়ে একজন শিক্ষক তাঁর পরিবারের জন্য কী কিনবেন? ঈদের আনন্দ কি তাদের পরিবারে আসে? এটাই সবার কাছে জিজ্ঞাসার বিষয়। অথচ সরকারি স্কুলে বা সমগ্রেডের যেকোনো চাকরিতে বেসিকের পাশাপাশি ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ বাসা ভাড়া এবং শতভাগ ঈদ বোনাস দেয়া হয়। ফলে মেধাবীরা বেসরকারি শিক্ষক হিসেবে আসতে আগ্রহী হন না। যার প্রমাণ মিলে বিগত গণবিজ্ঞপ্তি গুলোতে। যেখানে শূন্যপদের বিপরীতে ৩০ শতাংশও পূরণ হয়নি। এতে শিক্ষক সংকটে শিক্ষা সেক্টর দিনদিন পিছিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া বর্তমানে সরকারি স্কুল-কলেজগুলোতে শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতন ১০ থেকে সর্বোচ্চ ৩৫ টাকা। অথচ সেখানে বেসরকারি স্কুল-কলেজে নেয়া হচ্ছে ২৫০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত। ফলে উচ্চ দ্রব্যমূল্যের বাজারে লোকজন তাদের ছেলে-মেয়েদের ভালো স্কুল-কলেজে পড়াতে হিমশিম খাচ্ছেন।

স্বাধীনতার পর থেকে এই পর্যন্ত দেশে শাসনকার্য পরিচালনা করা সব সরকার বিভিন্ন সেক্টরে উন্নয়ন করলেও শিক্ষার মত গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরের নানা দুরবস্থা দেখেও যেন না দেখার ভান করে থাকতেন। তবে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণ হলেও মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সবসময় অবহেলার শিকার হয়েছে। মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষার অবস্থাতো আরো শোচনীয়। বিগত সরকার কিছু মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করলেও একটি মাদ্রাসাও জাতীয়করণ করা হয়নি। অথচ মাদ্রাসাগুলোতে ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি স্কুল-কলেজের মত সাধারণ বিষয়গুলোও পড়ানো হয়। তারপরেও মাদ্রাসাগুলোকে জাতীয়করণ করতে কোনো এক অদৃশ্য শক্তি বিগত সব সরকারকে প্রভাবিত করেছে।

সর্বশেষ গতবছরের জুলাই মাসে বেসরকারি শিক্ষকরা শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণের দাবিতে টানা ২২ দিন আন্দোলন করেন। ওইসময় তৎকালীন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এবং প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক উপদেষ্টা কবির বিন আনোয়ার শিক্ষকদের সাথে বৈঠক করেন। সেখানে তারা জাতীয়করণ না হলেও বেতন-ভাতা বাড়ানোর আশ্বাস এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বিবেচনার জন্য দুটি কমিটি করার ঘোষণা দেন। অথচ এর পরে একবছর পার হলেও কোনো কিছুই বাস্তবায়ন করা হয়নি। উল্টো শিক্ষকদের ছুটি কাটছাঁট করা হয়েছে। এতে শিক্ষক সমাজের মাঝে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।

তবে অন্তর্বর্তীকালীন নতুন সরকার ক্ষমতা নেয়ার পর শিক্ষকরা আবার আশায় বুক বেঁধেছেন। শিক্ষকদের দাবি, সরকার প্রতিষ্ঠানের আয় কোষাগারে নিয়ে সেটা  দিয়ে (চাকরি) জাতীয়করণ করলে এতবেশি ব্যয় করতে হবে না। এতে শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের দাবি- বেতন ভাতা বৃদ্ধি, শতভাগ ঈদ বোনাস, ইএফটিতে বেতন প্রদান ও বদলি চালু হবে এবং কমিটি প্রথার বিলোপ ঘটবে। ফলে শিক্ষার মানোন্নয়নের পাশাপাশি মেধাবীরা শিক্ষকতার প্রতি আগ্রহী হবেন। এতে বৈষম্যহীন মেধাভিত্তিক নতুন বাংলাদেশ গড়ার পথ সুগম হবে এবং এটাই হোক স্বাধীনতার পর শিক্ষক দিবসে শিক্ষকদের জন্য শ্রেষ্ঠ উপহার।

লেখক: প্রভাষক

জনপ্রিয়