মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে আমাদের অনেকের ধারণা কম। এমন কি এ বিষয়টি অনেকেরই অজানা। স্বাস্থ্য মানেই শরীর, এ ধারণা থেকে বের হওয়াটা জরুরি। আমাদের মনেরও যত্ন দরকার। তবে আমরা কি তাহলে সবাই মানসিকভাবে অসুস্থ? আসলে সেটা নয়। আজ বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসে তা নিয়েই জানার চেষ্টা করবো।
সম্প্রতি বাংলাদেশে একটি বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে। যার দ্বারা আমরা প্রত্যেকে প্রভাবিত। বিশেষ করে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা এ বিপ্লবের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন। শিক্ষার্থীসহ যারা এই বিপ্লবে সংঘটিত সহিংসতায় আহত হয়েছেন, বা সরাসরি প্রত্যক্ষ করেছেন, প্রভাবিত হয়েছেন তাদের মনে একটা ভয় বা ট্রমা কাজ করছে।
যার ফলে অনেকে অ্যাকিউট স্ট্রেস ডিসঅর্ডারে ভুগছেন, আবার কেউ কেউ পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডা, (পিটিএসডি) ভুগছেন। শুধু তাই নয় কেউ-কেউ ফোবিয়া (ভয়), হতাশা, ডিপ্রেশন (বিষন্নতা), উদ্বিগ্নতা, অমূলক চিন্তায় আবৃত হয়ে আছেন। সব সময় ভয়, উৎকন্ঠা, অনিশ্চয়তায় আমাদের দিনগুলো পার হচ্ছে। এসবের ফলে আমাদের অনেকের আচরণে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে, আমরা চারিদিকে নেতিবাচক ঘটনাগুলো নিয়ে খুব বেশি দুঃখ অথবা ভয়ের অনুভূতি পাচ্ছি। যার ফলে অনেক শিক্ষার্থীই পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারছেন না। এমনভাবে চলতে থাকলে আমাদের মেধার অপচয় হবে, আমরা সৃজনশীলতা হারাবো, আমাদের আচরণ আরো খারাপ হবে। তার প্রভাব দেশ থেকে সমাজ, সমাজ থেকে ব্যক্তি জীবনে চলে আসবে। এ মুহূর্তে দরকার আমাদের মনের সঠিক যত্ন।
এখন প্রশ্ন হলো- আমরা কিভাবে আমাদের মনের যত্ন নিতে পারি? উত্তর হলো আমরা প্রতিদিন মেডিটেশন (ধ্যান করতে পারি), পছন্দের কাজগুলো করতে পারি, নিজের সঙ্গে কথা বলতে পারি। এ ছাড়া সময় করে হাঁটা, ধর্মীয় চর্চা করা, শখের কাজগুলো করার মাধ্যমেও আমরা নিয়মিত মনের যত্ন নিতে পারি। পাশাপাশি পরিবারের সঙ্গে আলাপ করা, বন্ধুদের সঙ্গে আলাপ করা, যদি মনোযোগের অভাব হয় বা অস্থিরতা অনুভব হয় সেক্ষেত্রে আমরা শান্ত হয়ে কোথায়ও বসে, সম্ভব হলে চোখ বন্ধকরে, টানা ৩/৪ সেকেন্ড সময় নিয়ে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ৬ সেকেন্ড এর মতো বুকে আটকে রেখে মুখ দিয়ে ধীরে ধীরে ছাড়তে পারি। এভাবে ১০/১৫ টি শ্বাস নিতে হবে। দিনে অন্তত ৩/৪ বার করতে পারি।
এ ছাড়াও নতুন নতুন বই পড়া, সফট মিউজিক্যাল গান শোনা, কাউকে সাহায্য করা ইত্যাদির মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার উপায় খুঁজতে পারি। অর্থাৎ আমাদের ইতিবাচক কাজ করতে হবে। ধুমপান বা নেশা জাতীয় দ্রব্য থেকে দূরে থাকতে হবে এবং অতিরিক্ত রিচ ফুড গ্রহণ করা থেকেও বিরত থাকা উচিত। পাশাপাশি প্রচুর পানিপান করা উচিৎ এবং রাত জেগে মোবাইল ব্যবহার থেকেও বিরত থাকতে হবে।
কিন্তু যারা তীব্র মানসিক যন্ত্রণা নিয়ে প্রতিনিয়ত ছুটে চলেছি তাদেরকে সাইকোলজিসটের শরণাপন্ন হওয়াটা জরুরি। সাইকোলজিস্ট পাওয়ার জন্য অনলাইন মাধ্যম একটা ভরসা হতে পারে। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাছির উল্লাহ সাইকোথেরাপি ইউনিট, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউন্সিলিং সেন্টার, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা মেডিক্যা কলেজ, মিটফোর্ড হাসপাতালের মানসিক রোগ বিভাগ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও সরকারি ও বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করছেন। একজন মানসিক স্বাস্থ্যকর্মী হিসাবে আমার আহ্বান আপনারা মনের যত্ন নিন।
লেখক: সাইকোসোশ্যাল কাউন্সেলর, ব্রাক মাইগ্রেসন প্রোগ্রাম, বিএসসি (মনোবিজ্ঞান) জবি