ঢাকা সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০২৪ , ৫ কার্তিক ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

শিক্ষক নিবন্ধনে ভাইভার নম্বর যুক্ত না করা কেন অবৈধ হবে না

মতামত

সিদ্দিকুর রহমান খান, আমাদের বার্তা

প্রকাশিত: ০০:২০, ২০ অক্টোবর ২০২৪

সর্বশেষ

শিক্ষক নিবন্ধনে ভাইভার নম্বর যুক্ত না করা কেন অবৈধ হবে না

চোখ কপালে তুললে হবে না। জিহ্বায় কামড় দিলেও না। নিদেনপক্ষে মাথা চাপড়াতে হবে অথবা মাথার চুল ছিড়তে হবে। তবেই যদি কিছুটা প্রায়শ্চিত্ত হয় অমন আত্মঘাতী বা জাতিঘাতি কাণ্ডের খবর শুনে। এমনই একটা তথ্য অথবা দু:সংবাদ দিয়েছিলেন সচিব (পদনাম) সাহেব। তিনি মূলত বাংলাদেশ সরকারের একজন উপসচিব। বদলিভিত্তিক নিয়োগ পেয়ে হয়েছিলেন বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)-এর সচিব। দিনটি ছিলো চলতি বছরের ২০ মার্চ। স্থান রাজধানীর ইস্কাটনের এনটিআরসিএ অফিসের সামনের রাস্তা। ১ থেকে ১২তম নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মধ্যে যারা কোথাও চাকরি পাননি তাদের ক্ষুদ্রাংশের জটলা। সনদের মেয়াদ ও বয়স উত্তীর্ণ কিছু সংখ্যক নিবন্ধনধারী সেদিন সরাসরি শিক্ষক পদে নিয়োগের অবৈধ দাবিতে জড়ো হয়ে মিছিল করছিলেন। চল্লিশোর্ধ এই নিবন্ধনধারীদের ভরাট গলার মিছিলে এনটিআরসিএ কর্তাদের মুণ্ডুপাতও হচ্ছিলো মাঝে মধ্যে। ব্যস্ততম অফিস পাড়ার রাস্তা আটকে গোটা এলাকায় যানজট বাধিয়েছেন। এরই মধ্যে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তাদের সঙ্গে কথা বলতে নিজ অফিস থেকে নেমে এলেন এনটিআরসিএর সচিব মো. ওবায়দুর রহমান। তাকে দেখে ভুয়া ভুয়া ধ্বনি তুললেন শিক্ষক পদে জোরপূর্বক নিয়োগপ্রত্যাশীরা। এরই মধ্যে মাইক হাতে কথা বলা শুরু করলেন ওবায়দুর রহমান। এবং এক পর্যায়ে তিনি জানালেন চোখ কপালো তোলা সেই তথ্য। সচিব বললেন, ১-১২তম নিবন্ধনধারীদের জন্য ১৩-১৭তম নিবন্ধনে উত্তীর্ণদের ভাইভার নম্বর যুক্ত করা যাচ্ছে না। কেননা ১-১২তম নিবন্ধনে মৌখিক পরীক্ষা ছিলো না।১৩-১৭তম নিবন্ধনধারীদের ভাইভার নম্বর যুক্ত করা হলে ১-১২তমদের সঙ্গে নম্বরের ব্যবধান অনেক হয়ে যেত। সেজন্য নম্বর যুক্ত করা হয়নি।

এনটিআরসিএর সচিব আরও বলেন, ১৩-১৭তম নিবন্ধনধারীদের কেবল মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। তবে তাদের ভাইভার নম্বর যোগ করা হয়নি। কেউ যদি প্রমাণ করতে পারেন যে ১৩-১৭তম নিবন্ধনধারীদের মৌখিক পরীক্ষার নম্বর যুক্ত করা হয়েছে, তাহলে আমি আজই চাকরি ছেড়ে দেব। 

না, সচিব মহোদয়কে কেউ চ্যালেঞ্জ করেননি। শুধু এই নিবন্ধনের লেখক স্থির করেছিলেন যে, বিষয়টা নিয়ে একটা সম্পাদকীয় লিখতে হবে এবং যার শিরোনাম হবে ‘ভাইভার নম্বর যুক্ত না করা কেনো অবৈধ হবে না’।  নানা ঘটনা আর অঘটনে সেই সম্পাদকীয় লিখতে আজ মধ্য অক্টোবরও পায় হয়ে গেলো। ৫ আগস্টের পর অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি পেয়ে সচিব সাহেবও অন্যত্র চলে গেছেন। এনটিআরসিএর চেয়ারম্যানও বদলি হয়ে অন্য দপ্তরে চলে গেছেন। 

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত এনটিআরসিএ গত সপ্তাহে অষ্টাদশ শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষায় ফল প্রকাশ করেছে। ফের ভাইভার আলোচনা শুরু। বোর্ড গঠন ও অন্যান্য প্রস্তুতি চলছে। দৈনিক আমাদের বার্তার তুখোড় রিপোর্টার তুর্কী তরুণী সাবিহার সুমিরও ব্যস্ততা বেড়েছে বহুগুণ। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মধ্যে কেউ কেউ তাকে ফোন করে জানতে চাচ্ছেন ভাইভা বিত্তান্ত। এই লেখকের সঙ্গে আলোচনা হলো ভাইভার নানা বিষয়। অমনি মনে পড়লো ২০ মার্চে ঠিক করা সেই সম্পাদকীয় কাঠগড়ার শিরোনাম। লেখার শুরুতে মনে হলো কতো কথা। সেই যে প্রথমবার ভাইভা শুরু হয়েছিলো। তখন এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষের প্রায় সব কর্তার সঙ্গে নানা বিষয়ে আলোচনা। মনে মনে ভাবছিলাম আর দশটা চাকরির মতোই শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা হয়ে আসছিলো, সেটার বুঝি কিছুটা উন্নতি হবে এবার। বলা হয়, শিক্ষকতা অন্য দশটা পেশার মতো নয়, ব্যতিক্রম। তাহলে নিয়োগ প্রক্রিয়াওতো ব্যতিক্রম হওয়া উচিত। শুধু ভালো ফললাভ করলেই শ্রেণিকক্ষে ভালো পড়াবেন, এমনটা প্রমাণিত সত্য নয়। 

ভাইভার শুরুতে আমাদের সংশ্লিষ্ট রিপোর্টারদের সঙ্গে আমিও সরেজমিন গিয়েছিলাম। আজও মনে পড়ে ঠাকুরগাঁও থেকে ১৬ ঘন্টার জার্নি করে সাত সকালে ছয় মাসের বাচ্চা ও শাশুড়িকে নিয়ে ভাইভা দিতে এনটিআরসিএতে এসেছিলেন এক নারী। তার কষ্টের কথা মনে পড়লো। ভাইভায় তার কাছে কি কি জানতে চেয়েছিলো তা নিয়ে দৈনিক শিক্ষার পাঠকদের জন্য ভিডিয়ো প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছিলো। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে চলে আসছে দৈনিক আমাদের বার্তা ও দৈনিক শিক্ষার কার্যক্রম। ১৩তম থেকে ১৭তম প্রায় ১ লাখ হবু শিক্ষকের মধ্যে কমপক্ষে ৯০ শতাংশের সঙ্গে কথা বলেছে দৈনিক আমাদের বার্তা ও দৈনিক শিক্ষাডটকম-এর রিপোর্টাররা। ভাইভা দিতে আসা এবং দিয়ে ফের ঢাকার বাইরে চলে যাওয়ার মধ্যে কতো যে কষ্টকথা ও গাঁথা রয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। তবু তারা খুশী ছিলেন ভালো ভাইভা দিয়েছেন। দৈনিক শিক্ষার ভিডিও প্রতিবেদন খুব সহায়ক ছিলো। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন সবাই।   

দুষ্টের দমন শিষ্টের লালনের কথাই জেনে এসেছি সেই ছেলেবেলা থেকে। মেধাবীদের অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলি সবাই। কিন্তু ভাইভার নম্বর যোগ না করার যে বিস্ফোরক তথ্য দিলেন সচিব সাহেব তাতে মনে হলো, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এন্ট্রি লেভেলে শিক্ষক নিয়োগের লক্ষ্যে প্রার্থী বাছাইয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত একমাত্র প্রতিষ্ঠানটির কর্তাদের কি বিবেচনা কি জাতিঘাতী চর্চা। যেখানে ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবরের গেজেটে পরিষ্কার করে বলা আছে প্রিলিমিনারি, লিখিত ও ভাইভার কথা। সেখানে ভাইভার নম্বরই যোগ করেননি ১ম থেকে ১২তমদের স্বার্থ রক্ষায়। হয়তো তারা মামলা বা রায়ের দোহাই দেবেন। বছরের পর বছর ধরে হাজার হাজার মামলায় জর্জরিত এনটিআরসিএর বিরুদ্ধে যদি কেউ আরেকটি মামলা ঠুকে দেন এই বলে যে ভাইভার নম্বর যোগ না করলে লিখিত পরীক্ষায় পাস করেও আমাকে কেনো বাদ দেওয়া হলো? কেনো ও কিসের ভিত্তিতে আমাকে চূড়ান্ত বাছাই তালিকায় রাখা হলো না। যদি ভাইভার নম্বর যোগ না হয় তাহলে কেনো নেওয়া হলো? কেনো কষ্ট দেওয়া হলো?   

কোথায় আমরা ভাবছি পাঁচ মিনিটের ভাইভায় একজনকে জাতির মেরুদণ্ড গড়ার দায়িত্ব দেওয়ার চর্চা থেকে বেরিয়ে ডেমো ক্লাস নিয়ে তারপরই কেবল কাউকে শিক্ষক পদে নিয়োগের সুপারিশ ও পরে কোষাগার থেকে বেতন পাওয়ার চূড়ান্ত ব্যবস্থা করাতে পারি। আর সেখানে এনটিআরসিএ অমন জাতিঘাতী সিদ্ধান্ত চর্চা করে আসছে বছরের পর বছর ধরে। কর্তাদের জানা উচিত ছিলো ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে যাত্রা শুরুর সময় এই প্রতিষ্ঠানটির সনদের কার্যকরিতা ছিলো বেসরকারি শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য আবেদন করার প্রাক-যোগ্যতা নির্ধারণী। আরো সহজ কথায় ১থেকে ১২তম পরীক্ষায় দেওয়া সনদের কাজ হলো শিক্ষক পদে চাকরির আবেদন করার যোগ্যতার টিকিট। নিয়োগের জন্য বেসরকারি ব্যবস্থাপনা কমিটি কর্তৃক নেওয়া লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে প্রার্থী বাছাই করা ও নিয়োগ দেওয়া।  মানে হলো, ওই সনদ না হলে তিনি আবেদনই করতে পারবেন না। 

এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষ আরো একটা খারাপ করেছে সেটা হলো, রিট ব্যবসায়ীরা শত শত রিট করে আদালত থেকে নজিরবিহীন ও উদ্ভট রায় নিয়েছে সেটার বিরুদ্ধে শক্তভাবে যুক্তি তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে। সম্প্রতি আপিলের রিভিউতে যদিও কিছুটা মুক্তি পাওয়া গেছে বলে শুনেছি।

যদিও ব্যর্থতার দায় এনটিআরসিএর সব চেয়ারম্যান বা সচিবের নয়। খুবই দক্ষ, চৌকস এবং মানসিক ও আর্থিকভাবে সৎ কর্মকর্তারা এইসব পদে ছিলেন ও আছেন।

  

জনপ্রিয়