ঢাকা বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪ , ১৫ কার্তিক ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

রাজনৈতিক ঐকমত্য হলেই রাষ্ট্রপতির অপসারণ সম্ভব

মতামত

প্রশান্ত কুমার কর্মকার, আমাদের বার্তা

প্রকাশিত: ০০:১০, ৩১ অক্টোবর ২০২৪

সর্বশেষ

রাজনৈতিক ঐকমত্য হলেই রাষ্ট্রপতির অপসারণ সম্ভব

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর অপসারণের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা অনড়। আন্দোলনের পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা রাজনৈতিক মতানৈক্য তৈরীর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। রাজনৈতিক দলগুলো বিপ্লবী ছাত্রদের দাবির প্রতি একমত হলেও রাষ্ট্রপতি অপসারণের বা পদত্যাগ করানোর মতো বিষয়ে একমত হতে পারেনি। রাষ্ট্রপতি নিয়োগ পেয়েছেন সংসদের মাধ্যমে। সেই সংসদ নেই।

আমাদের সমাজে পার্টিকুলার একটি ধারণা আছে, ডকট্রিন অব নেসেসিটি, অর্থাৎ সময়ের প্রয়োজন সেটা পূরণ করে দেবে। আইন অনুসারে রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের কোনো সুযোগ নেই। বর্তমানে সংসদ নেই। এরপরও যেকোনো সময় রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করতে পারেন। রাষ্ট্রপতির পদত্যাগে কোনো বাধা নেই। কিন্তু তিনি কার কাছে পদত্যাগ করবেন। সংবিধানে স্পিকারের কথা বলা আছে। কিন্তু স্পিকার নেই, ডেপুটি স্পিকারও নেই। সংবিধান অনুযায়ী আরেকজন স্পিকারের পদে না আসা পর্যন্ত পদত্যাগ করা স্পিকারই দায়িত্ব পালন করবেন। সেও অনুপস্থিত এবং ফৌজদারী মামলার আসামি। রাষ্ট্রপতি চাইলে এখন ওনার পদত্যাগপত্র বঙ্গভবনের টেবিলে রেখে চলে যেতে পারেন। তা কিভাবে গ্রহণ করা হবে, তা সংবিধানে লেখা নেই। এছাড়া আরেকটি পথ হলো রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসন। কিন্তু তা করতে হলে সংসদের দুই তৃতীয়াংশের সই ও ভোট লাগবে। কিন্তু এখন তো সংসদই নেই। 

বাহাত্তরের সংবিধান অনুসারেই ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুথানে পট পরিবর্তনের অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু অন্তবর্তীকালীন সরকারের শপথ পড়ান। বঙ্গভবনে না গিয়ে রাজপথে বিপ্লবী সরকার গঠন করা হলে আজকের পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না। সংবিধান পুনর্লিখন বা ৭২ সংবিধান বাতিলের বিষয় নিয়ে এতো এতো চর্চার সুযোগ থাকতো না। কেনোনা জুলাই-২৪ গণ-অভ্যূথান বা বিপ্লব কোনো নিয়ম মেনে হয়নি। তাই বিপ্লবী সরকার গঠন করার সুযোগ ছিলো। সেই বিপ্লবী সরকার সব কিছু বাদ দিয়ে নতুন সংবিধান তৈরি এবং জনগণের মতামতকে যাচাই করে সব কিছু করতে পারতো।  

একথা ঠিক বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধানে ‘অন্তবর্তীকালীন সরকার’ নামে কোনও ব্যবস্থা নেই। তবে ছাত্র জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন। রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙ্গে দেন। তিনি আপিল বিভাগের রেফাসেন্স চেয়ে পাঠান এবং সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে আপিল বিভাগের মতামতের ভিত্তিতে অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠন করেন। যা পরবর্তী নির্বাচিত সরকার গঠিত হওয়ার পর জাতীয় সংসদের অন্তবর্তীকালীন সরকার ও তার কার্যক্রমের বৈধতার অনুমোদন নিতে হবে। সংবিধানে এর বাধ্যবাধকতা রয়েছে।  তা না হলে সংবিধান অবজ্ঞার প্রশ্ন উঠবে। বর্তমান সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে ৭ এর (খ) নতুন সংযোজিত অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, এই সংবিধানের কোনো কিছুকে যদি কেউ ভায়োলেট বা জোড়র্পূবক পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতা আসার চেষ্টা করে, সেটা হবে রাষ্ট্রদ্রোহীতার অপরাধ।   

অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান ও ক্ষমতা হস্তান্তারের লক্ষ্যে ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিধান-সংবলিত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধন আইন পাস করা হয়। এই সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের চতুর্থ ভাগে ‘২ক পরিচ্ছদ: নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ নামে নতুন পরিচ্ছেদ যোগ হয়। এই পদ্ধতি অনুসরণ করেই তিনটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তবে আওয়ামীলীগ সরকার আমলেই ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ জুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে অবৈধ ঘোষণা করে সংবিধান সংশোধন করা হয়। তবে আপিল বিভাগের রায়ে পরবর্তী দুই মেয়াদে এই পদ্ধতিতে নির্বাচন হতে পারে বলেও উল্লেখ করা হয়েছিলো। বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী, নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ক্ষমতায় থাকা সরকারের অধীনেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এরপর ওই সরকারই বিজয়ী রাজনৈতিক দল বা জোটের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করার বিধান রাখা হয়েছিলো। 

৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী গণ-অভ্যূত্থানের মুখে দেশত্যাগ করেন। রাষ্ট্রপতির দপ্তরে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগপত্র থাকার কথা নয়। এই পদত্যাগপত্র প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর বা কার্যালয়ে থাকবে। বেশকিছু দিন ধরেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জলপনাকল্পনা চলছে আলোচনার ঝড় বইছে, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেননি। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে ব্যাপক কৌতুহলের সৃষ্টি হয়েছে। সেই কারণেই কি কেউ কেউ পদত্যাগপত্র খোঁজ করছিলেন। দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সাক্ষাৎকার নেন। সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রপতি বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগপত্র তার কাছে নেই, তিনি দেখেনও নাই। রাষ্ট্রপতির এই বক্তব্যকে কেন্দ্র করে তার পদত্যাগের দাবি তোলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এ দাবিতে তারা জাতীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ ও বঙ্গবভন ঘোরাও করেন। অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারকে সময় বেঁধে দেন।  

বাহাত্তরের সংবিধান বাতিল এবং রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের অপসারণ দাবিতে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটি। এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন কোনো দল যদি বাহাত্তরের সংবিধান বাতিল ও রাষ্ট্রপতির অপসারণ দাবিতে জাতীয় ঐক্যের আহ্বানে না আসে তাহলে সে দলকেও তারা বয়কট করবেন। বাহাত্তরের সংবিধান থাকলে রাজনৈতিক সংকট থাকবে দূর হবে না। এই সংবিধানের মধ্য দিয়েই ফ্যাসিবাদ কাঠামো সব সময় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সংঘবদ্ধ হয়েছে। শেখ হাসিনা সব সময় বলেছিলেন যে- আমাদের সব সময় সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে। যখনই তাকে পদত্যাগ করতে বলা হতো, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা বলা হতো বা নির্দলীয় সরকারের কথা বলা হতো তখনই এই সংবিধান রক্ষা করার কথা বলতেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটি আওয়ামী লীগ ও আওয়ামীলীগ সরকার গঠনের সহায়তাকারী দল জাতীয় পার্টি বাদে বিএনপি, জামায়াত ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন। বিএনপি রাষ্ট্রপতি অপসারণের পক্ষে নন, রাষ্ট্রপতি অপসারণের ফলে রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হতে পারে বলে মতামত ব্যক্ত করেছেন।   
যদিও সংবিধানে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা সীমিত। তবে নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মতো বিরোধ সৃষ্টি হলেই রাষ্ট্রপতির ভূমিকার বিষয় চলে আসে। কেনোনা সীমিত ক্ষমতার মধ্যেই নির্বাচনের সময় রাষ্ট্রপতির হাতে দলগুলোর বিরোধ মীমাংসার চেষ্টা করাসহ কিছু ক্ষমতা রয়েছে। সংসদীয় পদ্ধতিতে রাষ্ট্রপতির নামেই রাষ্ট্রের সব কার্যক্রম চলে। রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের অন্য সব ব্যক্তির ঊর্ধ্বে স্থান লাভ করবেন। রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন রাষ্ট্রপ্রধান।

রাষ্ট্রপতি সর্ম্পকে সংবিধানের ৪৮ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের একজন রাষ্ট্রপতি থাকবেন, যিনি আইন অনুযায়ী সংসদ সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত হবেন।
রাষ্ট্রপতি পদের মেয়াদ

রাষ্ট্রপতি পদের মেয়াদ নিয়ে সংবিধানের ৫০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, (১) এই সংবিধানের বিধানাবলি সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি কার্যভার গ্রহণের তারিখ হইতে পাঁচ বৎসরের মেয়াদে তাহার পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন: তবে শর্ত থাকে যে, রাষ্ট্রপতির পদের মেয়াদ শেষ হওয়া সত্ত্বেও তাহার উত্তরাধিকারী-কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত তিনি স্বীয় পদে বহাল থাকবেন। (২) একাদিক্রমে হউক বা না হউক-দুই মেয়াদের অধিক রাষ্ট্রপতির পদে কোনো ব্যক্তি অধিষ্ঠিত থাকবেন না। (৩) স্পিকারের উদ্দেশে স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে রাষ্ট্রপতি স্বীয় পদত্যাগ করিতে পারবেন। (৪) রাষ্ট্রপতি তাহার কার্যভারকালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হইবার যোগ্য হইবেন না এবং কোনো সংসদ সদস্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হইলে রাষ্ট্রপতিরূপে তাহার কার্যভার গ্রহণের দিনে সংসদে তাহার আসন শূন্য হইবে।

রাষ্ট্রপতির অভিশংসন

অভিসংশন নিয়ে সংবিধানের ৫২ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে: 
(১) এই সংবিধান লঙ্ঘন বা গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগে রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসিত করা যাইতে পারবে; এর জন্য সংসদের মোট সদস্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের স্বাক্ষরে অনুরূপ অভিযোগের বিবরণ লিপিবদ্ধ করে একটি প্রস্তাবের নোটিশ স্পিকারের কাছে দিতে হবে; স্পিকারের কাছে নোটিশ দেওয়ার দিন হতে ১৪ দিনের পূর্বে বা ৩০ দিনের পর এই প্রস্তাব আলোচিত হইতে পারবে না; এবং সংসদ অধিবেশনরত না থাকলে স্পিকার অবিলম্বে সংসদ আহ্বান করবেন।
(২) এই অনুচ্ছেদের অধীন কোনো অভিযোগ তদন্তের জন্য সংসদ কর্তৃক নিযুক্ত বা আখ্যায়িত কোনো আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা কর্তৃপক্ষের কাছে সংসদ রাষ্ট্রপতির আচরণ গোচর করিতে পারবেন।  
(৩) অভিযোগ-বিবেচনাকালে রাষ্ট্রপতির উপস্থিত থাকবার এবং প্রতিনিধি-প্রেরণের অধিকার থাকবে।
(৪) অভিযোগ-বিবেচনার পর মোট সদস্য-সংখ্যার অন্যূন দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে অভিযোগ যথার্থ বলিয়া ঘোষণা করিয়া সংসদ কোনো প্রস্তাব গ্রহণ করিলে প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার তারিখে রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হইবে।
(৫) এই সংবিধানের ৫৪ অনুচ্ছেদ-অনুযায়ী স্পিকার কর্তৃক রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব-পালনকালে এই অনুচ্ছেদের বিধানাবলি এই পরিবর্তন-সাপেক্ষে প্রযোজ্য হইবে যে, এই অনুচ্ছেদের (১) দফায় স্পিকারের উল্লেখ ডেপুটি স্পিকারের উল্লেখ বলিয়া গণ্য হইবে এবং (৪) দফায় রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হইবার উল্লেখ স্পিকারের পদ শূন্য হওয়ার উল্লেখ বলিয়া গণ্য হবে; এবং (৪) দফায় বর্ণিত কোনো প্রস্তাব গৃহীত হইলে স্পিকার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালনে বিরত হবেন।

অসামর্থ্যের কারণে রাষ্ট্রপতির অপসারণ

৫৩ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, (১) শারীরিক বা মানসিক অসামর্থ্যের কারণে রাষ্ট্রপতিকে তাহার পদ হতে অপসারিত করা যাইতে পারবে; ইহার জন্য সংসদের মোট সদস্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের স্বাক্ষরে কথিত অসামর্থ্যের বিবরণ লিপিবদ্ধ করিয়া একটি প্রস্তাবের নোটিশ স্পিকারের কাছে দিতে হবে।

(২) সংসদ অধিবেশনরত না থাকলে নোটিশ প্রাপ্তিমাত্র স্পিকার সংসদের অধিবেশন আহ্বান করবেন এবং একটি চিকিৎসা-পর্ষদ (অতঃপর এই অনুচ্ছেদে ‘পর্ষদ’ বলিয়া অভিহিত) গঠনের প্রস্তাব আহ্বান করবেন এবং প্রয়োজনীয় প্রস্তাব উত্থাপিত ও গৃহীত হবার পর স্পিকার তৎক্ষণাৎ উক্ত নোটিশের একটি প্রতিলিপি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করবেন এবং তাহার সহিত এই মর্মে স্বাক্ষরযুক্ত অনুরোধ জ্ঞাপন করিবেন যে, অনুরূপ অনুরোধ জ্ঞাপনের তারিখ হতে ১০ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতি যেন পর্ষদের নিকট পরীক্ষিত হবার জন্য উপস্থিত হন।
(৩) অপসারণের জন্য প্রস্তাবের নোটিশ স্পিকারের নিকট প্রদানের পর হইতে ১৪ দিনের পূর্বে বা ৩০ দিনের পর প্রস্তাবটি ভোটে দেওয়া যাইবে না, এবং অনুরূপ মেয়াদের মধ্যে প্রস্তাবটি উত্থাপনের জন্য পুনরায় সংসদ আহ্বানের প্রয়োজন হইলে স্পিকার সংসদ আহ্বান করবেন।
(৪) প্রস্তাবটি বিবেচিত হবার কালে রাষ্ট্রপতির উপস্থিত থাকবার এবং প্রতিনিধি-প্রেরণের অধিকার থাকবে।
(৫) প্রস্তাবটি সংসদে উত্থাপনের পূর্বে রাষ্ট্রপতি পর্ষদের দ্বারা পরীক্ষিত হবার জন্য উপস্থিত না হইয়া থাকিলে প্রস্তাবটি ভোটে দেওয়া যাইতে পারিবে এবং সংসদের মোট সদস্য-সংখ্যার অন্যূন দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে তাহা গৃহীত হলে প্রস্তাবটি গৃহীত হবার তারিখে রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হবে।
(৬) অপসারণের জন্য প্রস্তাবটি সংসদে উপস্থাপিত হবার পূর্বে রাষ্ট্রপতি পর্ষদের নিকট পরীক্ষিত হবার জন্য উপস্থিত হয়ে থাকলে সংসদের নিকট পর্ষদের মতামত পেশ করবার সুযোগ না দেওয়া পর্যন্ত প্রস্তাবটি ভোটে দেওয়া যাবে না।
(৭) সংসদ কর্তৃক প্রস্তাবটি ও পর্ষদের রিপোর্ট (যাহা এই অনুচ্ছেদের (২) দফা অনুসারে পরীক্ষার সাত দিনের মধ্যে দাখিল করা হইবে এবং অনুরূপভাবে দাখিল না করা হইলে তাহা বিবেচনার প্রয়োজন হবে না) বিবেচিত হবার পর সংসদের মোট সদস্য-সংখ্যার অন্যূন দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে প্রস্তাবটি গৃহীত হলে তাহা গৃহীত হবার তারিখে রাষ্ট্রপতি পদশূন্য হবে।

অনুপস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি পদে স্পিকার

৫৪ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হলে কিংবা অনুপস্থিতি, অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হলে ক্ষেত্রমত রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত কিংবা রাষ্ট্রপতি পুনরায় স্বীয় কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত স্পিকার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করবেন।

সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, যদি কোনো সময়ে রাষ্ট্রপতির নিকট প্রতীয়মান হয় যে, আইনের এইরূপ কোনো প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে বা উত্থাপনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, যাহা এমন ধরনের ও এমন জনগুরুত্ব সম্পন্ন যে, সেই সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্টের মতামত গ্রহণ করা প্রয়োজন, তাহা হলে তিনি প্রশ্নটি আপিল বিভাগের বিবেচনার জন্য পাঠাতে পারবেন এবং উক্ত বিভাগ স্বীয় বিবেচনায় উপযুক্ত শুনানির পর প্রশ্নটি সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে স্বীয় মতামত জ্ঞাপন করিতে পারবেন। তবে কি রাষ্ট্রপতি নিজের অপসারণের বিষয়ে নিজেই মতামত চেয়ে পাঠাবেন। রাজনৈতিক মতানৈক্য না হলে অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে একটি মাত্র পথ খোলা, যেকোনো প্রকারে রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগ করতে রাজি করানো। 

লেখক: আইনজীবী, সাংবাদিক

জনপ্রিয়