ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ , ৬ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

প্রাথমিকের ১০ম গ্রেডের দাবি সর্বজনীন

মতামত

মো. সিদ্দিকুর রহমান, আমাদের বার্তা

প্রকাশিত: ০০:০০, ১৭ নভেম্বর ২০২৪

আপডেট: ১৩:১১, ১৭ নভেম্বর ২০২৪

সর্বশেষ

প্রাথমিকের ১০ম গ্রেডের দাবি সর্বজনীন

প্রাথমিকের ১০ম গ্রেড কার? স্বাভাবিকভাবে সহকারী শিক্ষকেরা বলবেন, এ দাবি আমাদের। পাশাপাশি প্রধান শিক্ষক, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, সচিব, উপদেষ্টা, রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারক সবাই একই সুরে বলবেন, প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের। এ ১০ম গ্রেড শিক্ষক সমাজের মর্যাদার ধাপ অতিক্রম করাসহ শিক্ষার বৈষম্য নিরসনে তথা জাতিকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নেয়ার দাবি। প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকদের বেতন ১৩তম গ্রেড, ও মর্যাদা থার্ড ক্লাস।

উন্নত বিশ্বসহ প্রায় সব দেশের শিক্ষকদের মর্যাদা ফাস্ট ক্লাস। সে দেশগুলোতে সবচেয়ে বেশি ট্যালেন্ট, মেধাবীদের নিয়োগ দেয়া হয়ে থাকে শিশুশিক্ষায়। সেসব দেশগুলোতে কাজের কাঠিন্য বিবেচনা করে প্রাথমিকের শিক্ষকদের সর্বাধিক বেতন দেয়া হয়। অথচ স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ চলছে তার উল্টো। বিগত আমলে সরকারগুলোর মন্ত্রী, সচিব সবাই মিলেমিশে প্রাথমিকের সমস্যা নিরসনের আন্তরিকতা দৃশ্যমান হয়নি। ভাবখানা এমন প্রাথমিক শিক্ষা তথা শিক্ষকদের সমস্যা দীর্ঘ সময় জিইয়ে রাখা বা না করা তাদের অন্যতম সেবা।

দেশের উন্নয়নের জন্য শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। অথচ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় চাকরি করে তাদের মানসিকতা হচ্ছে কীভাবে নিজেদের উন্নয়ন করবে। এ মানসিকতা তাদের দীর্ঘসময়ের। রাজনৈতিক দলগুলো মাঠে-প্রান্তরে বিভিন্ন সমাবেশে শিক্ষকদের জন্য তথা শিক্ষার জন্য তাদের দরদ উথলিয়ে পড়ে। বিশেষ করে শিশুরা আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ ও শিক্ষকেরা সম্মানের পাত্র। 

অথচ শিক্ষার জন্য তাদের কোনো কার্যকর তেমন উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়। ভাবলে অবাক লাগে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় পৃথক হয় দীর্ঘ ৩ যুগ হলো। অথচ স্বতন্ত্র ক্যাডারবিহীন চলছে মন্ত্রণালয়ের বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠী। প্রাথমিক শিক্ষা জাতীয়করণ করা হয়েছে ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে। অথচ থার্ড ক্লাস মর্যাদা তথা ১৩তম বেতন গ্রেড নিয়ে চলে আসছে শিক্ষক সমাজ। সব সরকারই দেশকে শিক্ষার বিপ্লব করে স্বর্গে রূপান্তরিত করেছে। অথচ এ কলঙ্কিত নিজস্ব ক্যাডারবিহীন থার্ড ক্লাস মর্যাদা মাথায় নিয়ে বয়ে বেড়াচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা। স্বাধীনতার পর অনেক আন্দোলন, বিপ্লব হয়েছে। এর মাঝে অনেক কিছু পরিবর্তন হলেও পরিবর্তন আসেনি আগামী দিনের সুনাগরিক তথা নাগরিক গড়ার কারিগরদের। প্রাথমিক শিক্ষকেরা সব শিক্ষিত নাগরিক গড়ার জন্মদাতা। অথচ প্রজন্মের ভবিষ্যতের শিক্ষিত নাগরিক গড়ার কারিগরদের অবদান বেমালুম ভুলে যায়। তাদের কাজকর্ম অতীতের স্মৃতির লেশমাত্র দৃশ্যমান নয়। শিক্ষকদের ত্যাগ তাদের পরিবারের নিদারুণ অভাবের মাঝেও কার্যক্রম করে ডিজি, সচিব, উপদেষ্টা, মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবার মনোতুষ্টি প্রতিষ্ঠিত করতে পারিনি। তারা যেনো স্বর্গীয় ছোঁয়ায় আজকের অবস্থানে এসেছে। প্রধান শিক্ষক সহকারী শিক্ষকেরা দীর্ঘ সময় একই ছাদের নিচে অবস্থান করে থাকেন। যিনি প্রধান তিনি শিক্ষকও বটে। আমার মতে ‘প্রধান শিক্ষক’ এক শব্দ। তিনি তার শিক্ষক পরিবারের দেখভাল করে থাকেন। তিনি পরিবারের সবচেয়ে বড় কাছের বন্ধু।

তার সক্রিয় তত্ত্বাবধানে প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবারটি হয়ে ওঠে সমৃদ্ধ। তিনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবারের অভিভাবকের ভূমিকা পালন করে থাকেন। পরিবারের কর্তা হিসেবে তিনি সহকারী শিক্ষকদের সুখে-দুখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিবারকে সন্তানের মতো আগলে রাখেন। পরিবারের সদস্যদের মাঝে খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে কমবেশি মতবিরোধ থাকা স্বাভাবিক। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিজেরাই এর সমাধান করে নেয়। অথবা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করে নেয়।
সুখী সমৃদ্ধশালী পরিবার হলো ওই পরিবার যারা নিজেদের বিরোধ বা সমস্যা নিজেদের মধ্যে সমাধান করে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে। প্রাথমিক শিক্ষক পরিবার হলো এক ও অভিন্ন। পরিবারটি হলো দেশ-বিদেশের সবচেয়ে সম্মানিত ও মর্যাদাশীল। এ পরিবারের কেউ খ্যাতি অর্জন করলে সবাই খুশি হয় তেমনি দুঃখ-কষ্ট তথা আক্রান্ত হলে বেদনায় ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ে। 
বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষকরা মর্যাদাসহ বেতন গ্রেড তথা আমলাতান্ত্রিক ও শিক্ষক নেতৃত্বের যাঁতাকলে পিষ্ঠ। তাদের কাজকর্ম একই, একসঙ্গে অবস্থান করেও কতিপয় নেতা নামধারী ব্যক্তি তাদের হীনস্বার্থ চরিতার্থ তথা নেতাগিরি দেখানোর জন্য আলাদা পথে হাঁটছেন। সহকারী শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষক একইসঙ্গে ঐক্যবদ্ধ চললে শিক্ষা পরিবার তথা শিক্ষাব্যবস্থার সমৃদ্ধ হবে।

বর্তমান দশম গ্রেড তথা মর্যাদার লড়াইয়ের আন্দোলনে কতিপয় প্রধান শিক্ষক নেতা বলে থাকেন, আমরা আলাদাভাবে প্রধান শিক্ষকদের সমস্যা নিয়ে আন্দোলন বা কার্যক্রম করবো। প্রধান শিক্ষকরা নিজেরা ঐক্যবদ্ধহীন বা ঐক্যবদ্ধ ভাবে কঠোর আন্দোলন বা কর্মসূচি দিলে সফলতা তথা ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দের মতো তিন মাস ছয় দিন বা কিছুদিন স্কুলে তালা বন্ধ করে দাবি আদায় করতে পারবে না। বিদ্যালয়ের পরিচালনায় কিছুটা বিঘ্ন হলেও সহকারী শিক্ষকের বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কাজকর্ম চালিয়ে যাবেন। কারণ, সহকারীরা প্রধান শিক্ষক থেকে আলাদা। প্রধান শিক্ষকেরা কেবলমাত্র মৌলিক অধিকার হরণ বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে মহামান্য উচ্চ আদালতে রিট করে তাদের অধিকার আদায় করতে পারবেন বা দুর্নীতি বা ঘুষের মাধ্যমে তাদের স্বার্থ সংরক্ষণ করা যাবে। এক্ষেত্রে দুর্নীতি বা ঘুষের ব্যাপক প্রসার লাভ করবে। সংগঠন করে আন্দোলনের পরিবর্তে দালালি বা দুর্নীতির প্রসার ছাড়া কিছুই দৃশ্যমান হবে না।

অন্যদিকে সহকারী শিক্ষকেরা প্রধান শিক্ষক ব্যতিরেকে প্রায় সব কাজে অভিভাবকহীন বা অনেকটা অসহায়। সহকারী শিক্ষকেরা বিদ্যালয়ের চালু থাকাকালীন প্রধান শিক্ষকের সহযোগিতা ব্যতিরেকে তাদের সমস্যা, মর্যাদা বা সংঘবদ্ধ কার্যক্রম করা দুরূহ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কতিপয় সহকারী শিক্ষক নেতাদের বলতে শোনা যায়, দশম গ্রেডের আন্দোলনে কোনো প্রধান শিক্ষকের ছায়াও যেনো না পড়ে। বিষয়টা আমাকে ও শিক্ষক সমাজকে ব্যথিত করে থাকেন। একই পরিবারের সদস্য হয়ে পরস্পরের এই দুঃখজনক মর্মাহত বক্তব্য কাম্য নয়। সহকারী শিক্ষক নেতারা বা শিক্ষকেরা যেমন সবাই ফেরেশতাতুল্য নয়। প্রধান শিক্ষকের ক্ষেত্রে অনুরূপ।

একই ছাদের নিচে অবস্থানরত কঠোর আন্দোলন বা কর্মসূচি শুধু সহকারীরা করলে বিঘ্ন সৃষ্টি হওয়াটা স্বাভাবিক। প্রধান শিক্ষক সহকারীদের বিষয়ে আন্তরিক হলেও প্রশাসনের চাপে আন্দোলনের ক্ষতি হতে বাধ্য।  দশম গ্রেড শুধু বেতন বৃদ্ধি হিসেবে চিহ্নিত করলে ভুল হবে। এ গ্রেড বেতন বৈষম্য নিরসনের লড়াইও। বৈষম্য নিরসনের প্রত্যয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠিত। বাস্তবায়নের দায়িত্ব ও কর্তব্য তাদেরও। শুধু প্রাথমিকের সহকারীদের এ দাবি নয় । এ দাবি সমগ্র শিক্ষক সমাজের। থার্ড ক্লাস মর্যাদা থেকে সেকেন্ড ক্লাস মর্যাদা এক ধাপ এগিয়ে নেয়ার দাবি। এ দাবি প্রধান শিক্ষকদের বেতন-ভাতা দশম গ্রেড এর পরবর্তী ধাপের ও পরবর্তীতে ১ম শ্রেণি হওয়ায় রুদ্ধ পথ খোলার দাবি। মেধাবীদের প্রাথমিকের শিক্ষকতায় আকৃষ্ট করে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠার দাবি। এ দাবি শিক্ষাব্যবস্থাকে উন্নত দেশের কাতারে নেয়ার পদক্ষেপ। প্রাথমিক শিক্ষা তথা শিক্ষাব্যবস্থার কলঙ্কমোচনের শুভ সূচনা। 

দশম গ্রেডের দাবি সর্বজনীন। সহকারী ও প্রধান শিক্ষক দলমত নির্বিশেষে সব নাগরিক, সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তা মহাপরিচালক, সচিব, উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টা সবাইতে দেশের প্রাথমিক শিক্ষা তথা শিক্ষার উন্নয়নে এ মর্যাদা লড়াইয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাই। এতে সমৃদ্ধ প্রাথমিক শিক্ষা জাতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
লেখক: শিক্ষাবিদ

জনপ্রিয়