ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ , ১১ পৌষ ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

ক্যাডার: মোড়ক নয়, বদলাতে হবে মানসিকতা

মতামত

রাজু আহমেদ, আমাদের বার্তা

প্রকাশিত: ০৮:৩০, ৬ ডিসেম্বর ২০২৪

সর্বশেষ

ক্যাডার: মোড়ক নয়, বদলাতে হবে মানসিকতা

ক্যাডার নামের মধ্যেই বহন করছে ঔপনিবেশিক ঘরানার একটা আতঙ্ক সৃষ্টিকারী ব্যাপার। শিক্ষা ক্যাডার শিক্ষকের চেয়ে অতিরিক্ত কিছু? শিক্ষক পরিচয়ের চেয়ে আরো বড় পরিচয়-সেটা কী? মানে গুণে সে কেমন শিক্ষক? সব শিক্ষকের সেরা শিক্ষক? অ্যাডমিন ক্যাডার-কেমন একটা বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন ব্যাপার। পুলিশ ক্যাডার-তাও মানায় যেহেতু পিস্তল-বন্দুক-বারুদ আছে। কিন্তু ক্যাডার-বাদ দিন। আমার অন্য কথা আছে। 

জনপ্রশাসনের সংস্কারের অংশ হিসেবে বিসিএস কর্মকর্তার পদবি থেকে ক্যাডার শব্দটি উচ্ছেদের সুপারিশ এসেছে। কিন্তু সমস্যা তো অন্য জায়গায়। বাবুর নাম পাল্টিয়ে যদি সাধু বাবু রাখি-তাতে চরিত্র বদলাবে কতোখানি? আমাদের তো চরিত্র বদলের দরকার। সরকার আয়োজন করে সংস্কারের নামে নাম পাল্টালে বিডিয়ার বিজিবি হবে কিন্তু বাকিসব কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন ঘটবে তো?

কোনো পদ-পদবির নাম পাল্টানোর জন্য যেহেতু আকিকার দরকার নেই। সেহেতু ক্যাডার শব্দটি আপাতত বাদ দিলাম। কিন্তু যেসব প্রশ্ন জনমনে, যে বৈষম্য ক্যাডারে-ক্যাডারে কিংবা যে দ্বন্দ্ব চেয়ারে চেয়ারে তা আদৌ সারানোর মতো উদ্যোগ নেয়া হয়েছে? শিক্ষকদের ক্যাডার বানালে শিক্ষার মান বাড়ে নাকি কমে সে প্রশ্ন এখন অবান্তর কিন্তু ক্যাডারেও যে বর্ণপ্রথা বিদ্যমান তা ঘুচবে তো? সবচেয়ে বড় কথা-আমলা-পুলিশের কাছে জনগণের যে প্রত্যাশা সেটা মিটবে? যদি না মেটে তবে সংস্কারের নামে নাম পাল্টানো বেহুদা কাজ হবে। কাজে মনোযোগ দেয়া উচিত।

আসলে তলে হাত দিতে হবে। যেখানে সমস্যা সেখানে খোঁড়াখুঁড়ি করতে হবে। মলম লাগাতে হবে এবং ওষুধ খাওয়াতে হবে। ক্ষমতার দৌরাত্ম্য, দুর্নীতির ব্যাপ্তি, দলকানা নীতি খতম করে যোগ্যকে উচ্চপদ দিতে হবে। রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রমোশন, লবিংয়ে পোস্টিং-এসব বন্ধ না হলে কিছুই শুদ্ধ হবে না। জনতার সঙ্গে ক্ষমতার সেতুবন্ধনের যে সিঁড়ি সেখানের সেবকদের মোহহীন হতে হবে। কী হনুরের ভাব না কমলে ক্যাডার-হ্যাডার সব শব্দ বাদ দিয়েও সংস্কারের নামে কাজের কাজ কিছুই হবে না। মোড়ক পাল্টিয়ে লাভ নেই বরং ভেতরের মাল পাল্টাতে হবে। জিনিস খাঁটি হলে কোন বোতলে রাখলেন সেটায় কিছুই যায় আসে না। 

ক্যাডারের বাংলা কী? পদালি! দেশের সব মানুষকে পদালি বোঝাতে আরেকবার জন্ম নিতে হবে। যারা রাষ্ট্র ও জনতার সেবক তাদের নাম এমন হোক যা শুনে রিকশাওয়ালা-মজুর বুঝে ফেলে এটা অমুক জিনিস। সমুক কাজে আসে। যেহেতু বেতনের পয়সা গরিবের ঘাম গড়িয়ে আসে। আমাকে জিজ্ঞেস করবেন না-ঘুষ কাদের ঘাম থেকে আসে, আমি অজ্ঞ। জনতার কাজের লোক যখন সব ক্ষমতার মালিক হয়ে ওঠে তখন যে বিপত্তি দেখা দেয় সেই বিপত্তিতে দেশটা বিগত কয়েক দশক ভুগছে। এর রেশ এখানেই ক্ষান্ত হওয়া উচিত। নয়তো আমজনতা খুন্তি পোড়া দেবে।

যে ক্ষমতা দেখায় ও যে ক্ষমতা দেখায় না-দুজনের পার্থক্য কীসে? বিবেকে। ক্ষমতা প্রয়োগ করার জন্য যে ন্যায্যতা দরকার তা বিবেকবুদ্ধি থেকে উৎসারিত হোক। ক্ষমতা দেখানোর অধিকার রাষ্ট্র যোগ্যদের কাছেই রাখুক। তবে দলান্ধতা, মতান্ধতায় কানা মানুষ এই জাতিকে ভুল পথে পরিচালিত না করুক-সেই কামনায় জনপ্রশাসনের সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা পুষি। আলো দেখানোর বাতিঘর সৃষ্টি করতে হবে। 

ক্যাডার, নন-ক্যাডার কিংবা ক্যাডার বহির্ভূত অ-ক্যাডার দিয়ে মানুষের বড়ত্ব-ক্ষুদ্রতা মাপা যায় না। আসলে মানুষ বোঝা যায় তার কাজে। আচরণ ও কথায় বিচার্য হয়ে দাঁড়ায় মানুষের কীর্তি।  ক্যাডার হওয়ার চেয়েও মানুষ হওয়া জরুরি। সংস্কার উদ্যোগ যাতে মানুষ গড়ে-তবেই সফলতা। রাষ্ট্র গঠনে ক্যাডারের চেয়ে মানুষের বেশি দরকার। যেভাবেই হোক-মানুষের চাষবাস বাড়ুক। আজকাল বড্ড শূন্য শূন্য লাগে। ক্ষমতার অপব্যবহার শুনে, অর্থ পাচারে জড়িতদের নাম শুনে, ঘুষখোর-দুর্নীতিবাজের তালিকা পড়ে যে মানসিক দুর্বলতা অনুভূত হয় তা অব্যক্ত।

লেখক: প্রাবন্ধিক

(মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন)

জনপ্রিয়