সেসিপের (সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম) একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ ছিলো, মাধ্যমিক শিক্ষায় প্রি-ভোকেশনাল কোর্স চালুকরণ। প্রায় ৬০৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ১০টি ট্রেড নিয়ে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি থেকে এই কোর্সের যাত্রা শুরু হয়। শুরুতে ১ হাজার ১৯৯ জন ট্রেড ইন্সট্রাক্টর গণের চাহিদা দিলেও, নিয়োগপ্রাপ্ত হোন মাত্র ৫৪০ জন ট্রেড ইন্সট্রাক্টর । দেখা গেলো অনেক প্রতিষ্ঠান ট্রেড ইন্সট্রাক্টর পান নি।
এসব প্রতিষ্ঠান কোনো না কোনোভাবে টেনেটুনে গুটিকয়েক শিক্ষার্থী নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে নিয়োগপ্রাপ্ত ট্রেড ইন্সট্রাক্টরদের বর্তমানে চাকরি অভিজ্ঞতা প্রায় ৫ বছরের কাছাকাছি। ২০২২ খ্রিষ্টাব্দ থেকে সেসিপের মাধ্যমিক ভোকেশনাল শাখার জন্য কয়েক হাজার কোটি টাকার ব্যবহারিক মালামাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে সরবরাহ করা হয়। অধিকাংশ মালামাল পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে আমদানি করা।
ছেলে মেয়েদের কারিগরি শিক্ষায় দক্ষ করার জন্য এই মালামালগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যন্ত্রপাতি পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ট্রেড ইন্সট্রাক্টরদেরও প্রশিক্ষণ জরুরি ছিলো । অত্যন্ত দুঃখের বিষয় আজ প্রায় ৫ বছর হয়ে গেলেও সেসিপের নিয়োগপ্রাপ্ত ট্রেড ইন্সট্রাক্টরদের প্রশিক্ষণ প্রদানের কোনো পদক্ষেপই নেয়া হয় নি। ফলশ্রুতিতে ট্রেড ইন্সট্রাক্টররা ব্যবহারিক ক্লাসগুলো যে যেভাবে পারছেন নিচ্ছেন। খবর নিয়ে দেখা গেছে, এমন অনেক প্রতিষ্ঠানে আছে যেখানে কোনো কোনো ট্রেডে ব্যবহারিক ক্লাসই করানো হচ্ছে না। এতে করে মাধ্যমিক শিক্ষায় কারিগরি শিক্ষা প্রসারের যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিলো, তা আশার আলো দেখছে না।
এছাড়াও সরবরাহ করা কোটি টাকার মালামাল বছরের পর বছর অব্যবস্থাপনায় নষ্ট হচ্ছে। মনিটরিংয়ের অভাবে এসব প্রতিষ্ঠানের ট্রেড ইন্সট্রাক্টরদের বেশিরভাগ ক্লাস নিতে হচ্ছে সাধারণ শাখায়। এছাড়াও এসব ট্রেড ইন্সট্রাক্টররা ভবিষ্যতে চাকরি ১০ বছর পূর্ণ হলে সহকারী প্রধান শিক্ষক হতে পারবেন কি-না, এ বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া নাই। তাই ট্রেড ইন্সট্রাক্টররা চাকরি পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছেন। এছাড়াও প্রি ভোকেশনাল কোর্সের অনুমতি প্রাপ্ত প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে ২ জন করে ল্যাব এসিস্ট্যান্ট নিয়োগ করার কথা থাকলেও ৭০ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে কোন ল্যাব এসিস্ট্যান্ট নেই। কারিগরি বোর্ডের পরিচালিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে ল্যাব এসিস্ট্যান্ট এর যোগ্যতা এসএসসি ভোকেশনাল হলেও সেসিপের প্রি ভোকেশনাল প্রতিষ্ঠানে ল্যাব এসিস্ট্যান্ট নিয়োগ যোগ্যতা ধরা হয়েছে এইচএসসি ভোকেশনাল পাস।
তাই অনেক প্রতিষ্ঠান ল্যাব এসিস্ট্যান্ট পাচ্ছেন না। সব মিলিয়ে সেসিপের ভোকেশনাল কার্যক্রম বর্তমানে হ-য-ব-র-ল অবস্থা। এই প্রেক্ষিতে নিম্নোক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে, মাধ্যমিকে ভোকেশনাল বা কারিগরি শিক্ষা কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়বে-
১. যতদ্রুত সম্ভব নিয়োগপ্রাপ্ত ট্রেড ইন্সট্রাক্টরদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ।
২. প্রি ভোকেশনাল প্রতিষ্ঠানে ট্রেড-ইন্সট্রাক্টরদের শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনার নির্দিষ্ট নির্দেশনা প্রদান।
৩. প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে ট্রেডের ব্যবহারিক ক্লাস মনিটরিং এবং তা নিয়মিত সেসিপের ওয়েবসাইটে প্রেরণ।
৪. সেসিপের ভোকেশনাল প্রতিষ্ঠানসমূহের রেটিং করণ।
৫. নিয়োগপ্রাপ্ত ট্রেড ইন্সট্রাক্টরদের সহকারী প্রধান শিক্ষক হওয়ার কাম্য যোগ্যতার নির্দেশনা প্রদান।
৬. নিয়োগপ্রাপ্ত ট্রেড ইন্সট্রাক্টররা, রেজিষ্ট্রেশন, ফর্ম ফিলাপ, ই-মেইল, তথ্য প্রেরণ ইত্যাদি কাজের সঙ্গে জড়িত বিধায় তাদের সেসিপ কর্তৃক বিনামূল্যে ল্যাপটপ, ইন্টারনেটের ব্যবস্থাকরণ।
৭. সর্বোপরি নিয়োগপ্রাপ্ত ট্রেড ইন্সট্রাক্টরদের সঙ্গে জেলাভিত্তিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের যোগাযোগ সুবিধা বৃদ্ধিকরণ।
৮. ল্যাব এসিস্ট্যান্ট নিয়োগ যোগ্যতা এসএসসি ভোকেশনালকরণ।
লেখক: ট্রেড-ইন্সট্রাক্টর
জাফরনগর অপর্ণা চরণ উচ্চ বিদ্যালয়
(মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন)