মানুষ তার ব্যক্তিত্ব বিকাশ ও আত্মোপলব্ধির জন্য জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে যে ধরনের সম সুযোগ-সুবিধা প্রত্যাশা করতে পারে কিংবা দাবি করতে পারে সেগুলোই মানবাধিকার। মানুষ হিসেবে একজন ব্যক্তি যে সম্মান, অধিকার, শ্রদ্ধা ও নিরাপত্তা প্রাপ্ত হবার অধিকার রাখে, সেসবকেই মানবাধিকার বলা হয়।
মানবাধিকার, জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত ও স্বীকৃত অধিকারসমূহ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকে। ফলে নাগরিক অধিকার ও মানবাধিকার দুইটি পৃথক বিষয়, বৈশিষ্ট্য ও স্বরূপের দিক থেকেও এরা আলাদা। রাষ্ট্রীয় পরিমণ্ডলে সীমিত, স্ব রাষ্ট্রের অন্তর্গত নাগরিকদের অধিকার। অপরপক্ষে সমাজ, রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল অর্থাৎ বৈশ্বিক ও সর্বজনীনভাবে স্বীকৃত মানবাধিকার। মানুষের জীবনকে ভালো ও সুন্দর করে তুলতে সাহায্য করে মানবাধিকার।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় মানবাধিকারের সনদ ও জাতিসংঘ। জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার পর বিশ্ব বড় কোনো যুদ্ধের মুখোমুখি হয়নি। বলা যায় এটিই জাতিসংঘের সবচেয়ে বড় অর্জন। তবে বৈশ্বিক শান্তি ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার অন্তরালে জাতিসংঘ সনদ ও মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্রই কাজ করেছে। প্রতিবছর ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে বিশ্ব মানবাধিকার দিবস পালিত হয় । ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দ থেকে জাতিসংঘ এই দিনটি পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। মানবাধিকার কোনো নতুন কিছু নয়।
জাতিসংঘ এই ধারণাটিকে একটি বিধিবদ্ধ রূপ দিয়েছে, যা একে বৈশ্বিকভাবে আরো জনপ্রিয় করে তুলেছে। বিশেষ করে জাতিসংঘের এই সনদের আলোকেই রাষ্ট্রগুলো নিজদেশের জন্য মানবাধিকারের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া শুরু করে। বর্তমানে বিশ্বের অনেক দেশ তাদের সংবিধানেও মানবাধিকারের বিষয়গুলো তুলে ধরেছে। বিভিন্ন বিষয়ে জাতিসংঘের অনেক সনদ থাকলেও মানবাধিকারের মতো এতো জনপ্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ আর কোনো বৈশ্বিক দলিল নেই।
জাতিসংঘ-সনদের চেয়েও মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্রটি বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করেছে বলে অনেকে মনে করেন। অনেক দেশের মানবাধিকারের মানদণ্ড নির্ণয় ও প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এই দলিলটি রেফারেন্স হিসেবে কাজ করে। মানবাধিকারের সনদের মাধ্যমে বিশ্বে মানবাধিকারের ধারণা ও সূচকের আমূল পরিবর্তন হয়েছে। তবু প্রশ্ন থাকে ব্যাপক অর্থে মানুষে-মানুষে বৈষম্য কি কমেছে?
এক কথায় এর উত্তর মেলে না। ধনী-দরিদ্রের, ক্ষমতাশালী ও ক্ষমতাহীনের মধ্যে বৈষম্য এখনো কমেনি। বরং অনেক ক্ষেত্রে বেড়েই চলেছে। এক কথায় বলা যায়, মানবাধিকারের সংস্কৃতি এখনো পুরোপুরি গড়ে ওঠেনি। বিশ্বের খুব কম দেশ মানবাধিকারকে একটি সংস্কৃতি হিসেবে গড়ে তুলতে পেরেছে। গণতন্ত্র ও মানবাধিকারকে পরিপূরক বলা যায়। একটি অপরটিকে শক্তিশালী করে তোলে। গণতন্ত্র ছাড়া মানবাধিকার কল্পনা করা যায় না। আবার মানবাধিকার অবহেলা করে নিজেকে গণতান্ত্রিক বলেও দাবি করা যায় না। তবে প্রায়শই দেখা যায়।
এ দুটোর অনুপস্থিতেও দেশ অর্থনৈতিকভাবে উন্নতির শিখরে উঠতে পারে। মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে যে গণতন্ত্র বা মানবাধিকারের কোনো অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক রয়েছে তেমনটি নয়। তবে নিঃসন্দেহে উন্নত অর্থনীতিতে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার আরো ভালোভাবে বিকাশ লাভ করতে পারে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন আর মানবিক উন্নয়ন এক নয়। মানবিক উন্নয়নের সঙ্গে মানুষের মর্যাদার বিষয়টি জড়িত।
আর উন্নয়ন সে তো প্রবৃদ্ধি ও আয়-ব্যয়ের হিসাব। পঞ্চাশের দশকে যে স্বপ্ন নিয়ে মানবাধিকার সনদ প্রণয়ন করা হয়, সেটি ওই মানবিক উন্নয়নের কথা মাথায় রেখেই করা হয়েছিলো। মানবিক উন্নয়নের সঙ্গে শিক্ষার বিকাশ, সাংস্কৃতিক অগ্রগতি ও রাজনৈতিক সচেতনতার সম্পর্ক গভীর। এগুলোর বিকাশ ঘটলে মানবাধিকার লঙ্ঘন বা অস্বীকারের সংস্কৃতি গড়ে ওঠতে পারে না। মানবাধিকারের ঘোষণাপত্রের ১ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে-‘সকল মানুষ স্বাধীনভাবে এবং সমান মর্যাদা ও অধিকার নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। তারা যুক্তি ও বিবেকের অধিকারী এবং ভ্রাতৃত্বের মনোভাব নিয়ে তাদের একে অপরের প্রতি আচরণ করা উচিত।’
এ অধিকারগুলো মানুষের জন্মগত অধিকার। অথচ সব মানুষের সমান স্বাধীনতা, মর্যাদা ও অধিকার বাস্তবে একটি অবাস্তব বিষয়। কাজেই এই কথাটিকে একটি আদর্শ চেতনা হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। এটিই ওই অনুচ্ছেদের মূল কথা। সব মানুষ জন্মগতভাবেই স্বাধীন এটা বিশ্বাস করতে পারলে কোনো মানুষ বা জাতিগোষ্ঠীকে পরাধীন করে রাখা যায় না। বর্তমান বিশ্বে যে বৈষম্য তা মানুষের সহজাত স্বাধীনতার অবিশ্বাস থেকে জন্মলাভ করেছে। তাই বিশ্বে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আগে মানবাধিকারের আদর্শপাঠ জরুরি।
মানবাধিকরের চেতনা ও আদর্শ উপলব্ধি ব্যতীত বিচ্ছিন্নভাবে মানবাধিকারের সূচক পরীক্ষা করা ও সে অনুযায়ী বৈশ্বিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে প্রকৃত অর্থে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করা যাবে না।
জাতি-বর্ণ, লিঙ্গ-ভাষা, ধর্ম, রাজনৈতিক বা অন্যান্য মতাদর্শ, জাতীয় বা সামাজিক সূত্র ও অন্যান্য মর্যাদা-নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষই সমান। সব মানুষের সমান ও অবিচ্ছেদ্য অধিকার এবং সহজাত মর্যাদার স্বীকৃতি ছাড়া বিশ্বে শান্তি-স্বাধীনতা এবং ন্যায়বিচারের ভিত্তি রচনা করা সম্ভব না।
মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে বিশ্ববাসী মানবাধিকার, মানব দেহের মর্যাদা ও মূল্য এবং নারী-পুরুষের সমান অধিকারের প্রতি তাদের বিশ্বাস পুনর্ব্যক্ত করেছে। এটি একটি বৈশ্বিক অঙ্গীকার। এই অঙ্গীকারই মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতাসমূহের ভিত্তি তৈরি করে। মানবাধিকারে সর্বজনীন ঘোষণাপত্রের ৩০টি ধারা রয়েছে। মানুষের অধিকার বাস্তবায়নে বিশ্ববাসীর অঙ্গীকারগুলো সুনির্দিষ্টভাবে সেখানে সন্নিবেশিত করা হয়েছে। ঘোষণাপত্রটিকে মানবাধিকারের মৌলিক নীতিমালাও বলা যায়।
জাতিসংঘের অপরাপর মানবাধিকার-সংক্রান্ত দলিলগুলোও এই সনদকে অনুসমর্থন করে। বিভিন্ন দেশও এই সনদের অনুসমর্থনে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে যায়। বাংলাদেশের সংবিধানেও রয়েছে এই ঘোষণাপত্রের ছায়া। এমনকি দেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রেও মানবাধিকারের ঘোষণাপত্রের আদর্শ প্রতিফলিত হয়েছে। সংবিধানের বাইরেও মানবাধিকার বাস্তবায়নের জন্যে এদেশে বিভিন্ন আইন রয়েছে।
মানবাধিকার একটি বিস্তৃত ধারণা। কাজেই, কোনো একটি আইন দিয়ে একে সীমাবদ্ধ বা বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। পৃথকভাবে শুধু মানবাধিকার বাস্তবায়ন তদারকির জন্য ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে একটি জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশ জারি হয়েছে। এর আলোকে, ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন প্রণয়ন করা হয়।
দেশে মানবাধিকারের উন্নয়ন কতোটুকু সেই প্রশ্ন থেকেই যায়। তবে সব প্রশ্নেরই উত্তর নিহিত রয়েছে দেশে মানবাধিকারের চেতনাগত উন্নয়ন কতোটুকু হয়েছে তার ওপর। আমাদের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে মানবাধিকারের চেতনা তুলে ধরতে পারলে সমাজ ও রাষ্ট্রে মানবাধিকার উন্নয়ন আরো ত্বরান্বিত হবে বলে আশা করা যায়। আমাদের দেশে মানবাধিকার কমিশনের নানা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। পাশাপাশি জনবল-সংকট ও আইনগত দুর্বলতা রয়েছে।
এরপরও মানবাধিকার রক্ষায় এটি সক্রিয় ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে বলে মনে হয়। মানবাধিকার বাস্তবায়নে সরকার তথা প্রশাসনের ভূমিকাই বেশি। এটি লঙ্ঘনের ব্যাপারে এদের জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা করা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। যদিও জনবলের অভাবের কারণে, মানবাধিকার কমিশনের পক্ষে দেশের সর্বস্তরে মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা সম্ভব নয়। সত্যি কথা বলতে বাংলাদেশের বিদ্যমান বিচারব্যবস্থায় সাধারণ নাগরিকের জন্য ন্যায়বিচার পাওয়া সহজ নয়।
আদালতের মাধ্যমে প্রতিকার পাওয়া বেশ কষ্টসাধ্য, সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল। কিন্তু তারপরও আদালত ছাড়া উপায় নেই। কিন্তু, অনানুষ্ঠানিক বিচার পাওয়ার সুযোগ আরো বাড়াতে হবে। স্থানীয় প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে এটি করা সম্ভব। এক সময় গ্রাম্য সালিসি ব্যবস্থায় অনেক বিষয়ই সুরাহা হতো। এখন সে পথ প্রায় বন্ধ। যথাযথ প্রশিক্ষণ ও সচেতনতার মাধ্যমে স্থানীয়ভাবেই মানুষের অনেক সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।
বিশাল জনবহুল একটি দেশের জন্য আনুষ্ঠানিক বিচারালয়ে শুধু মামলার জটই বাড়ছে। বিলম্বিত হচ্ছে ন্যায়বিচার। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে আমাদের। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন একটি আধা বিচারিক প্রতিষ্ঠান। মানবাধিকার লঙ্ঘনের কোনো অভিযোগ এলে কমিশন সরকারসংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে ব্যাখ্যা চাইতে পারে। ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে গৃহকর্মী খাদিজাকে গৃহকর্তা কর্তৃক অমানুষিক নির্যাতনের বিষয় তুলে ধরে কমিশনের কাছে প্রতিকার চাওয়া হয়।
কিন্তু কমিশনের কার্যক্রম সন্তুষ্ট হতে না পেরে ভুক্তভোগী ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের কমিশনের বিরুদ্ধে সিসিবি ফাউন্ডেশন একটি রিট করে। ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে হাইকোর্ট উক্ত রিটের রায়ে মন্তব্য করেন-কমিশন গাফলতির পরিচয় দিয়েছে। মানবাধিকার কমিশন মানবাধিকার রক্ষায় ‘জেগে জেগে ঘুমাচ্ছে’।
হাইকোর্ট তখন আরো বলেছিল, ‘সরকার যদি কমিশনের সুপারিশ না শোনে তবে কমিশন যেনো হাইকোর্টের কাছে আসে।’ সত্যি বলতে কি যতোই দিন যাচ্ছে ততোই দুনিয়াব্যাপী নানা দেশ ও অঞ্চলে মানবাধিকার ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয়ভাবে অধিকার প্রতিষ্ঠা করা যাচ্ছে না। একজন মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত যে নাগরিক অধিকার পাওয়ার কথা ছিলো, সেটি অনেক দেশ ও অঞ্চলে বাস্তবায়ন হয়নি।
দুনিয়ার নানা দেশে অসংখ্য জাতি-গোত্র তাদের সামাজিক ধর্মীয় ও রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। অনেকে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সমাজ ও রাষ্ট্রের মধ্যে নানা সংগ্রামে সোচ্চার। বাংলাদেশের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য অধিকারহারা মানুষ নানাভাবে প্রতিবাদ করেছে। দেশের মানুষ নানাভাবে অর্থনৈতিক সংকট এবং মুক্তির জন্য তাদের সর্বশক্তি দিয়ে বেঁচে থাকার লড়াই করছে। জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতে গিয়ে আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সমন্বয় করতে পারছে না। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষার মতো মৌলিক অধিকার নিরীহ জনগণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
রাষ্ট্রপরিচালনার জন্য সংবিধান আছে। সেখানে জনগণের মৌলিক অধিকারের বিবরণ রয়েছে। সেই অধিকার প্রতিষ্ঠা করা রাষ্ট্রপরিচালনায় নিয়োজিত সরকারের কর্তব্য। গোটা বিশ্বে সাম্প্রতিক সময়ে কোথাও না কোথাও মানবজাতি তার নাগরিক ও মৌলিক রাষ্ট্রীয় অধিকারের জন্য যুদ্ধ-সংগ্রাম করছে। বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারে অব্যাহতভাবে সেই দেশের নিরীহ বিভিন্ন ধর্ম-গোত্রের ওপর জুলুম-হত্যা চালাচ্ছে দেশটির সেনাসমর্থিত জান্তা সরকার। রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর বাড়িঘর ধ্বংস করে জুলুম ও হত্যা করে তাদের বসতভিটা ফেলে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে।
সেসব মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে বাংলাদেশে সাময়িক আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। পাশের দেশ হওয়াতে তারা জীবন বাঁচানোর জন্য বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে পেরেছে। বাংলাদেশ সরকারের মহানুভবতায় তাদের এ আশ্রয় পাওয়া সম্ভব হয়েছে। এ সময়ে ফিলিস্তিনের স্বাধীন নিরীহ মজলুম মানুষগুলোকে ইসরাইল ভারী অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করে পশুপাখির মতো হত্যা করছে। দুনিয়ার মানবাধিকারের ফেরিওয়ালারা বৃহৎ শক্তি ইসরায়েলকে ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করছে। দুনিয়ার শান্তিপ্রিয় জনগণ ফিলিস্তিনের মানুষের পক্ষে প্রতিবাদ করলেও পরাশক্তিধর ইহুদি গোত্র ও তাদের মিত্ররা এখনো যুদ্ধ বন্ধ করছে না।
মানবতা নীরবে-নিভৃতে কাঁদছে; কিন্তু শোনার কেউ নেই। কোথায় মানবাধিকার? যারা মানবাধিকার দিবস ও মানুষের নাগরিক অধিকার নিয়ে দেশ থেকে দেশান্তরে ফেরি করে বেড়ায়, তারা নিজেদের মধ্যে প্রকৃত মানবাধিকার বাস্তবায়ন করতে পারছে কি? দুনিয়ার নিরীহ নিরস্ত্র মানুষ আজ জালিম শোষক-অস্ত্রবাজ শক্তির হাতে জিম্মি। এ সময়ে মানবাধিকার নিয়ে বলা, লেখা ও প্রতিবাদ করা আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।
প্রকৃতপক্ষে নিরীহ জনগণের অধিকার নিয়ে দুনিয়াব্যাপী যাদের কথা বলার সামর্থ্য আছে, তারা কিন্তু জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসছে না। কমিশনকে সদিচ্ছা ও সাহসের সঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে। মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। কমিশনকে তার সাধ্যানুযায়ী এগিয়ে আসতে হবে। জনগণকেও শুধু তার নিজের অধিকারই নয়, সবার অধিকার মানে মানবাধিকার বিষয় সচেতন হতে হবে। রাষ্ট্রকেও এ বিষয়ে উদারতা ও সদিচ্ছার পরিচয় দিতে হবে। তবেই এর সফলতা আশা করা যায়।
লেখক: শিক্ষক, সুনামগঞ্জ
( মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন)