ঢাকা রোববার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ , ৭ পৌষ ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

তারুণ্যের বিজয়ের মাস ডিসেম্বর

মতামত

এম. আবুল ফয়েজ মামুন, আমাদের বার্তা ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৮:৩০, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪

সর্বশেষ

তারুণ্যের বিজয়ের মাস ডিসেম্বর

এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বীর বাঙালি বিজয় ছিনিয়ে এনেছিলো ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ ডিসেম্বর। দেখতে দেখতে আমরা পেরিয়ে এলাম ৫৩টি বছর। ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে এবারের বিজয়ের মাস নতুনভাবে উদযাপনের গুরুত্ব পেয়েছে। ৫ আগস্ট দীর্ঘ ১৬ বছরের স্বৈরাচার শাসনের পতনের মাধ্যমে আবু সাঈদ, ওয়াসিম ও মুগ্ধসহ প্রায় দুই হাজার শহীদের রক্তে তারুণ্যের নতুন বাংলাদেশ তৈরি হয়েছে। বছর ঘুরে আবার এলো বিজয়ের মাস ডিসেম্বর।

প্রতিবছর ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশে দিনটি বিশেষ ভাবে পালিত হয়। ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ২২ জানুয়ারি প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনে এই দিনটিকে বাংলাদেশের জাতীয় দিবস হিসেবে উদযাপন এবং সরকারিভাবে এই দিনটি ছুটি ঘোষণা করা হয়। আমরা যে আজ বিজয় দিবস উদযাপন করছি তা কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনের সময় যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বীরদের বীরত্বের কারণেই সম্ভবপর হয়ে উঠেছে।

তাই পরলোকগত ও জীবিত সব মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। একই সঙ্গে ২০২৪ এ ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে নিহতদের প্রতিও গভীর শ্রদ্ধা জানাই। স্বাধীনতাকামী বাঙালির হৃদয়ে মাসটি মহা আনন্দের, মহা গৌরবের, অপার্থিব সৌরভের, একইসঙ্গে শোকেরও। দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে পাকিস্তান সৃষ্টি হলেও তা যে টিকবে না তা আঁচ করেছিলেন অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক। তারপর নিপীড়ন-নির্যাতন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের স্বাধিকার এবং স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে প্রবল করে তোলে।

পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের স্বাধিকারের চাওয়াকে পশ্চিম পাকিস্তানিরা ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে অস্ত্রের মুখে রুদ্ধ করতে প্রয়াস চালিয়ে যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছিলো এই ভূ-খণ্ডের মানুষের ওপর।
একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হলেও বাঙালির স্বাধীনতার রক্তলাল সূর্যোদয়ের ভিত্তি সূচিত হয়েছিলো বেশ আগেই। ২৫ মার্চের কালরাতে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর নির্মম নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর বাংলার দামাল ছেলেরা রুখে দাঁড়িয়েছিলো শোষণের বিরুদ্ধে। এরপর টানা ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম আর আত্মদানের মাধ্যমে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ ডিসেম্বর বিকেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাকিস্তানি বাহিনীর প্রায় ৯১ হাজার ৬৩৪ সদস্য বাংলাদেশ ও ভারতের সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনীর কাছে আনুষ্ঠানিক ভাবে আত্মসমর্পণ করে। এর ফলে পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ নামে একটি নতুন স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে।

১৬ ডিসেম্বর এই দিনটিই আমাদের বিজয় দিবস। বাঙালি জাতির জীবনের পরম আরোধ্যের বিষয়। এই দিনটি অর্জনের জন্য আমাদের দীর্ঘ প্রতীক্ষার পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। আর প্রত্যেকটি ধাপে বাঙালি জাতি তাদের দেশপ্রেম এর সর্বোচ্চ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলো। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে কোটা সংস্কার আন্দোলন ও সর্বশেষ ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানসহ প্রত্যেকটি সংগ্রামে বাঙালি জাতি তাদের সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে এবং যার সামষ্টিক পরিণতি আমাদের আজকের বাংলাদেশ। স্বাধীনতার পর তলাবিহীন ঝুড়ি আখ্যায়িত করে যারা অপমান করেছিলো সেই তাদের কণ্ঠেই এখন বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসা।

দারিদ্র্য আর দুর্যোগের বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিসহ আর্থসামাজিক প্রতিটি সূচকে বাংলাদেশ অনেক অগ্রগতি অর্জন করেছে। সেই অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করতে হবে। বাঙালি হিসেবে প্রত্যেকেরই এই দেশের প্রতি কিছু কর্তব্য রয়েছে। কেবল বিজয় দিবসের একটি দিনেই নয়, একটি মাসেই নয় বরং বিজয়ের চেতনায় উদ্দীপ্ত হয়ে প্রত্যেক বাঙালির উচিত সারা বছরই দেশ-জাতি, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের পক্ষে নিজ নিজ অবস্থানে থেকে কাজ করে যাওয়া।

বিজয়ের সঠিক ইতিহাস সংরক্ষণ ও প্রচারে জাতীয়ভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। যারা স্বাধীনতা সংগ্রাম ও বিজয়ের ইতিহাস বিকৃত করে পরবর্তী প্রজন্মকে লক্ষ্যভ্রষ্ট করতে সচেষ্ট তাদেরকে চিহ্নিত করে, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া বাঙালির জাতীয় কর্তব্য। বাঙালি জাতি যতোদিন বেঁচে থাকবে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গৌরব করবে, অহংকার করবে। রাজনৈতিক স্বাধীনতা, অর্থনৈতিক স্বয়ংসম্পূর্ণতা এবং শ্রেণি বৈষম্যহীন ও শোষণমুক্ত সমাজ গঠনই হোক বিজয়ের মাসের শিক্ষা। 
লেখক: কলামিস্ট 
 

জনপ্রিয়