ঢাকা শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪ , ৬ পৌষ ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

মহার্ঘ ভাতা হোক সর্বজনীন ও বৈষম্যহীন

মতামত

মো. সিদ্দিকুর রহমান, আমাদের বার্তা ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৮:৩০, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪

সর্বশেষ

মহার্ঘ ভাতা হোক সর্বজনীন ও বৈষম্যহীন

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে জীবনযাপনের ভারসাম্য রক্ষার জন্য যে ভাতা বা আর্থিক সহযোগিতা দেয়া হয় তাকে বলা হয় মহার্ঘ ভাতা। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মহার্ঘ ভাতা দেয়ার ঘোষণা বিশেষ করে সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে স্বস্তির আভাস লক্ষ্য করা গেছে।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের পাঁচ শতাংশ প্রণোদনা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির তুলনায় এতোই নগণ্য ছিলো যে, তরকারি রান্না করতে সামান্য তেল যেমন পাতিলেই পড়ে ধোঁয়া হয়ে উড়ে যায়। এ প্রণোদনার স্বাদ কিন্তু ১০ম থেকে ১৯তম গ্রেডের কর্মচারীরা পাননি। বঞ্চিত হয়েছেন প্রজাতন্ত্রের আউটসোর্সিং কর্মচারীরাও।

এ প্রসঙ্গে দুঃখ ও ক্ষোভ জানিয়ে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার আইট পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরি কাম প্রহরী মোহাম্মদ উজ্জল হোসেন বলেন, রাষ্ট্রের প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের সেবা দানকারী জনবল তথা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সার্বিক দেখভালের দায়িত্বে নিয়োজিত দপ্তরি কাম প্রহরীরা। বিগত সরকারের আমলে ৫ শতাংশ প্রণোদনাও তাদের ভাগ্যে জোটেনি। একই ছাদের নিচে তথা রাষ্ট্রের বসবাসকারীরা সব কর্মচারী একই বাজার থেকে দ্রব্য সামগ্রী ক্রয় করে থাকেন।

দপ্তরি কাম প্রহরীরা সবার আগে এসে কাজের প্রস্তুতি পর্ব শুরু করেন। সবার শেষে দায়িত্ব সমাপ্ত করেন। অথচ তারা উৎসবভাতাসহ সরকারের নানা সুযোগ-সুবিধা হতে বঞ্চিত। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বৈষম্য নিরসনের প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। আশা করি প্রাথমিকের দপ্তরি কাম প্রহরী তথা সব আউটসোর্সিং কর্মচারীরা মহার্ঘ ভাতা থেকে বঞ্চিত হবে না।

সরকারের বর্ধিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশ প্রণোদনা বা মহার্ঘ ভাতা যাদের ভাগ্যে মাসে মাসে জোটে না তারা হলেন সরকারি শতভাগ পেনশন সমর্পণকারী কর্মচারীর। তাদের মাসে ২ হাজার ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা একমাত্র প্রাপ্তি। বিগত সরকারের সময়ে এক প্রজ্ঞাপনে ১৫ বছর পর শতভাগ পেনশন সমর্পণকারীদের পুনঃপেনশন প্রতিস্থাপনের এক আদেশ জারি করেছেন।

তা অনেকটা শুভংকরের ফাঁকির মতো। সাধারণত খুবই নগণ্য সংখ্যক অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী উক্ত সময় পর্যন্ত জীবিত থাকেন। শতভাগ পেনশনভোগীরা এককালীন যে টাকা গ্রহণ করেছেন, তা অতি সামান্য। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের পূর্বের বেতনস্কেল কম থাকায় জীবনযাত্রা মেটানোর ফলে তারা নিঃস্ব ও অসহায় ।

তারা এককালীন যে অর্থ গ্রহণ করেছেন, মাসে মাসে সে অর্থ গ্রহণ না করায় আট বছর চার মাসে তা পরিশোধ করা হয়ে থাকে। ১৫ বছরের স্থলে ১০ বছরে পেনশন প্রতিস্থাপন করা হলে জীবিত থেকে বেশির ভাগ পেনশনভোগীরা সুফল পেতেন। পেনশন পুনস্থাপনের প্রত্যাশার সঙ্গে মহার্ঘ ভাতার বর্ধিত টাকা শতভাগ পেনশনভোগীদের মাসে মাসে চিকিৎসা ভাতার সঙ্গে দেয়ার নিবেদন রইলো।

৭০ বছরের বয়সের বেশি প্রবীণদের পুরাতন বেতনস্কেলের মহার্ঘ ভাতা দেয়া হলে তাদের মহার্ঘ ভাতা হবে অতি নগণ্য। এ বিষয়টি পেনশনারদের একই পদে সিনিয়ররা যাতে জুনিয়র থেকে শুধু মহার্ঘ ভাতা নয়, পেনশনের অর্থের পরিমাণও যাতে কম না হয় বিষয়টির দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সব কর্মচারীদের সমানভাবে বিপর্যস্ত করেছে। তবে প্রথম শ্রেণির মর্যাদায় বেতন গ্রেড প্রাপ্তদের তেমন নাভিশ্বাস আসেনি। মহার্ঘ ভাতা দেয়া হয়েছে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে যাতে তাল মেলানো যায়। এখানে সব পর্যায়ে কর্মচারীরা একই বাজার থেকে সমমূল্যে জিনিসপত্র ক্রয় করে থাকেন। বেতন গ্রেড নির্ধারণ করা হয় মর্যাদার লিভিং স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী।

যেহেতু জিনিসপত্রের দাম সবার ক্ষেত্রে সমানভাবে বেড়েছে সেহেতু রাষ্ট্রের সব পর্যায়ে কর্মচারীদের একই মহার্ঘ ভাতা হওয়া যথার্থ। এখানে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ শ্রেণির মর্যাদা মহার্ঘ ভাতা বৈষম্য করাও কতোটা যৌক্তিক? এখানে তো দোকানি শ্রেণিভেদে দ্রব্যের দাম কম-বেশি রাখেন না।

বৈষম্য নিরসনের প্রত্যয়ে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আশা করি আউটসোর্সিং কর্মচারী, শতভাগ পেনশন সমর্পণকারীদের মাসে মাসে চিকিৎসা ভাতার সঙ্গে মহার্ঘ ভাতাসহ সব পর্যায়ের কর্মচারীর সমপরিমাণ মহার্ঘ ভাতা দেবেন। এ হোক আজকের প্রত্যাশা। মহার্ঘ ভাতা হোক সর্বজনীন ও বৈষম্যহীন।

লেখক: শিক্ষাবিদ

 

জনপ্রিয়