ঢাকা রোববার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ , ৭ পৌষ ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

আগস্ট বিপ্লব ও সেনাবাহিনীর ভূমিকা

মতামত

মো. মোস্তফা মিয়া, আমাদের বার্তা

প্রকাশিত: ০৮:৩০, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

সর্বশেষ

আগস্ট বিপ্লব ও সেনাবাহিনীর ভূমিকা

অতীতের ন্যায় ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত-গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষিতে দেশের ক্রান্তিলগ্নে সেনাবাহিনী তথা সশস্ত্র বাহিনী অসাধারণ ভূমিকা পালন করে বাংলাদেশকে চরম বিপর্যয়ের হাত থেকে সুরক্ষা করেছে।

ঐতিহ্যগতভাবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সব সময় জনগণের সঙ্গেই একাত্ম থাকে, দেশ এবং জনগণের স্বার্থ সুরক্ষায় সেনাবাহিনী ঐক্যবদ্ধ। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে আমাদের গর্বিত সেনাবাহিনী মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমেই গড়ে উঠেছিলো।

১৯৯০-এর গণ-অভ্যুত্থানে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সঙ্গে না গিয়ে সেনাবাহিনী জনগণের সঙ্গে একাত্ম হয়েছিলো।

সেই সংকটময় সময়ে সেনাবাহিনী প্রধান ছিলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোহাম্মদ নূরউদ্দীন খান। ৩৪ বছর পর আরেক ইতিহাস সৃষ্টি করলেন বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।

জেনারেল ওয়াকার আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর গুলির নির্দেশ না দিয়ে জন-আকাঙ্ক্ষার প্রতি সম্মান দেখিয়েছিলেন। এভাবে সেনাবাহিনী জনতার পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলো। এটা ছিলো এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত।

গত ৩ আগস্ট সেনাপ্রধান সেনাসদরে বিভিন্ন স্তরের সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে মতবিনিময় করেন। সেখান থেকে সেনাপ্রধান উপলব্ধি করেন যে, সেনা কর্মকর্তারা সরকার টিকিয়ে রাখার জন্য কোনো হত্যাকাণ্ডের অংশীজন হতে চান না। এ ছাড়া ৪ আগস্ট আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে যাওয়ার প্রেক্ষিতে সেদিন সেনাবাহিনীর কিছু অবসরপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন। এই খবর দ্রুত দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ঢাকার রাজপথে ছাত্র-জনতা যেভাবে সেনাবাহিনীর সদস্যদের প্রতি ভালোবাসা, সম্মান দেখিয়েছে এবং একাত্ম করে নিয়েছে, তা অভূতপূর্ব। সেনাবাহিনীকে তাই ভবিষ্যতেও জনগণের এই আবেগ, ভালোবাসা ও আকাঙ্ক্ষার সম্মান রাখতে হবে। দেশ ও জনগণের পক্ষে তাদের ভূমিকা হবে টেকসই।

গত ১৪ সেপ্টেম্বর রাওয়া রিসার্চ অ্যান্ড স্টাডি ফোরাম (আরআরএসএফ) ‘জুলাই-আগস্ট ২০২৪ বিপ্লবে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান এবং বিপ্লবোত্তর ভূমিকা’ শীর্ষক এক সেমিনারের আয়োজন করেন।

এতে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান নিয়ে বক্তারা আলোচনা করেন।

২০২৪-এর এই গণ-অভ্যুত্থান এবং পরবর্তী সংকটময় সময়ে বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান এক ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছেন। দেশের এক ক্রান্তিলগ্নে সেনাপ্রধান খুব সুন্দরভাবে ও অসাধারণ পরিপক্বতার সঙ্গে দেশের দায়িত্ব ড. ইউনূস সরকারের কাছে হস্তান্তর করেন।

সেনাবাহিনী তথা সশস্ত্র বাহিনী গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী প্রায় নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে অনেক সংকট ও সমস্যা সমাধানে সরকারকে ব্যাপকভাবে সাহায্য করছে। বিশেষত সরকার গঠনের প্রথম দিকে বাংলাদেশ পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার সময় দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে ও করছে। দেশে ও বিদেশে এই সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। ডাকাতি, জুডিশিয়াল ক্যু, আনসার বিদ্রোহ, গার্মেন্টস শ্রমিকদের নৈরাজ্যমূলক কর্মকাণ্ড দমনে এবং সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে সেনাবাহিনী অসাধারণ ভূমিকা পালন করেছে এবং তা অব্যাহত আছে। আগস্ট মাসে ফেনী-কুমিল্লা অঞ্চলে বন্যাদুর্গত অসহায় মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলো সশস্ত্র বাহিনী।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত ৬ অক্টোবর সেনা সদর নির্বাচনী পর্ষদ ২০২৪-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের সময় বলেন, ছাত্র-জনতার জুলাই বিপ্লবের পর সেনাবাহিনী জনগণের আস্থার প্রতীক হয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, দেশের ক্রান্তিলগ্নে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে এবং একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে দেশকে এক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির হাত থেকে রক্ষা করেছে।

আশা করি, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আগামী দিনগুলোতেও দেশের সব বিপদে জনগণের পাশে থাকবে। অতীতের ন্যায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ভবিষ্যতেও দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের গৌরবের উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে এবং জনগণের নির্ভরযোগ্য আস্থার প্রতিক হয়ে টেকসই দায়বদ্ধতা সুনিশ্চিত করতে সক্ষম হবে। ২০২৪ আগস্ট বিপ্লবের রক্তাক্ত গণঅভ্যুত্থানে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

লেখক: অধ্যক্ষ এবং এনজিও ব্যক্তিত্ব

 

 

জনপ্রিয়