বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের দীর্ঘ প্রতীক্ষিত বদলির নীতিমালা জারি সম্প্রতি জারি হয়েছে। এতে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) সুপারিশপ্রাপ্ত একাংশ খুশি হলেও চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কমিটির আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত বিপুল সংখ্যক শিক্ষক।
বেসরকারি শিক্ষকদের ব্যাপক দাবি-দাওয়ার প্রেক্ষিতে অবশেষে এনটিআরসিএ কর্তৃক সুপারিশপ্রাপ্তদের বদলি নীতিমালা জারি হলো। এতে হতাশ হয়েছেন কমিটির সুপারিশে নিয়োগ প্রাপ্ত শিক্ষকেরা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে তারা ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। আংশিকদের জন্য জারিকৃত বদলি নীতিমালা প্রত্যার করে সর্বজনীন বদলি চালু না করলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন বদলিপ্রত্যাশী এমপিওভুক্ত শিক্ষক ফোরাম। তাদের দাবি, ২০২৪ বিপ্লবের মূল চেতনা ছিলো বৈষম্য নিরসন।
সেই বিপ্লবী সরকারের বৈষম্যমূলক বদলি নীতিমালা চালু খুবই দুঃখজনক। এতোদিন বেসরকারি শিক্ষকদের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ ছিলো না। কিন্তু এ নীতিমালা জারির পর বেসরকারি শিক্ষকদের মধ্যে দুটি গ্রুপের সৃষ্টি হলো, যা একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে।
দৈনিক আমাদের বার্তা ও দৈনিক শিক্ষার এক রিপোর্টে জানা যায়, শিক্ষা উপদেষ্টা বৈষম্যহীন বদলি চালুর কথাই বলেছেন। যাতে সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করা হবে। এতদসত্বেও বৈষম্যমূলক শুধু সুপারিশপ্রাপ্তদের বদলি নীতিমালা জারি চরম হতাশাজনক।
শিক্ষকদের দাবি, প্রকাশিত নীতিমালায়ই সব শিক্ষকের বদলি সম্ভব। এখানে সুপারিশপ্রাপ্ত কথাটা তুলে দিলেই হয়। কারণ, বদলির সমস্ত প্রক্রিয়ায় এনটিআরসিএর সনদের মার্কস কোনো বিবেচনা করা হবে না। একই পদে একাধিক আবেদন আসলে জ্যেষ্ঠতা, নারীও দূরত্ব এই তিনটি বিষয় বিবেচনা করে বাছাই করা হবে। যদি এমনটাই হয় তাহলে এ প্রক্রিয়ায় সব শিক্ষককে অন্তর্ভুক্ত করা যায়।
কর্তৃপক্ষ হয়তো ভাবছেন, বিপুল সংখ্যক শিক্ষককে বদলির আওতায় আনা অসম্ভব। কিন্তু বিষয়টা মোটেও ঝামেলাপূর্ণ নয়। নীতিমালায় বলা হয়েছে একটি প্রতিষ্ঠান থেকে বছরে মাত্র একজন শিক্ষক বদলি হতে পারবেন। তাই এতেই ঝামেলা কমে যাবে। যদিও এটা নিয়েও শিক্ষকদের মধ্যে আপত্তি আছে। তারপরও বদলি যেহেতু স্বয়ংক্রিয় সফটওয়্যারের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হবে তাই এটা তেমন কঠিন বিষয়ও না।
নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ বলতে যা বলা হয় সেটাও একটা অবান্তর কথা। সরকার যখন যে নিয়ম করেছে তা মেনেই বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এনটিআরসিএ গঠিত হওয়ার পর শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা নেয় এনটিআরসিএ। এর আগে নিয়োগ পরীক্ষা নিতেন ডিজির প্রতিনিধি সমন্বয়ে গঠিত নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ড। সেখানেও লিখিত, মৌখিক ও সনদের মার্কস বিবেচনা করে প্রার্থী বাছাই করা হতো। এখানে তেমন পার্থক্যটা কোথায়?
পূর্বের সকল এমপিও নীতিমালায় বদলির কথা উল্লেখ ছিলো। বর্তমানে মাদরাসা ও কারিগরি এমপিও নীতিমালায় বদলির কথা আছে। যদিও স্কুল কলেজের নীতিমালয় শুধু সুপারিশপ্রাপ্তদের বদলির কথা আছে। তা ছাড়া বদলি এমন কোনো কঠিন কর্মযজ্ঞ নয় যে তা করা ই যাবে না। সব দপ্তরে বদলি আছে। নাই শুধু বেসরকারি শিক্ষকদের। বাড়ির কাছে শূন্যপদ না থাকায় অনেক শিক্ষক দূর দুরান্তে চাকরি নিয়েছেন। বর্তমান বাজারে সামান্য বেতন দিয়ে দূরে অবস্থান করে চাকরি করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। তাই মানবিক দিক বিবেচনা করে হলেও সব শিক্ষককে বদলির আওতায় আনা দরকার। বিষয়টির প্রতি যথাযথ কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
(মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন)
লেখক: শিক্ষক, জিরাইল আজিজিয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদরাসা, বাকেরগঞ্জ, বরিশাল