ঢাকা শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ , ১২ পৌষ ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

গুচ্ছ থেকে বের হওয়া কেনো

মতামত

মো. ইউসুফ আলী, আমাদের বার্তা

প্রকাশিত: ০৮:৩০, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

আপডেট: ১৩:০৫, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

সর্বশেষ

গুচ্ছ থেকে বের হওয়া কেনো

২০২২ খ্রিষ্টাব্দে ভর্তি পরীক্ষায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা ঘটনা দিয়ে লেখা শুরু করছি। ছেলে-মেয়েরা পরীক্ষা হলে ঢোকার পর আগত অভিভাবকরা জটলা পাকিয়ে গল্পের আসরে বসে গেছেন। আমি বেরসিক অপরিচিত কারো সঙ্গে মিশতে না পেরে আনমনা হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।

কিছুক্ষণ পর দেখি আমার পাশে ৫০ ঊর্ধ্ব এক ব্যক্তি ক্লান্ত-শ্রান্ত অবস্থায় উদাস হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। তো আমি কুশল বিনিময় শুরু করলাম। বেচারি সুদূর দিনাজপুর থেকে মেয়েকে নিয়ে এসেছেন। দিনাজপুর থেকে রাতের ট্রেনে এসে পরীক্ষা দিচ্ছেন। আবার রাতের ট্রেনেই ফিরে যাবে। সার্মথ্য না থাকায় দীর্ঘ জার্নির পরও মেয়েকে বিশ্রামের সুযোগ করে দিতে পারেননি অসহায় বাবা।

এভাবেই অনেক অসহায় বাবা ছেলে মেয়েকে নিয়ে ভর্তি যুদ্ধ নামক পরীক্ষার জন্য দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে চলেন। ঢাবি, জাবি, চবি, রাবি, বুয়েট--শুধুমাত্র এই ৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে দিনাজপুর থেকে একজন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করতে কমপক্ষে ২৫-৪০ হাজার টাকা লাগবে। এরপর ভর্তি ফি ও অন্যান্য খরচ মিলে ৫০-৬০ হাজারের ওপরে লাগে।

এ ছাড়া এক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি বাতিল করে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হলে আরো ১৫-২০ হাজার টাকা অতিরিক্ত লাগে। অনেক মেধাবী অসচ্ছল শিক্ষার্থী এ বিশাল খরচের সার্মথ্য না থাকায় তাদের স্বপ্ন ফিকে হয়ে যায়।

এটা মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করার নামান্তর। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্বায়ত্তশাসিত নামে স্বেচ্ছাচারিতা হচ্ছে কি না? ’২৪ এর গণ-অভ্যুত্থানের পরও যদি মৌলিক অধিকার থেকে জনগণ বঞ্চিত হয় তাহলে আর কোনোদিন অধিকার হারা মানুষ অধিকার পাবে না।

দৈনিক শিক্ষাডটকম সূত্রে জানা যায়, গুচ্ছ থেকে বের হওয়ার প্রতিবাদ জানিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। শুরু থেকেই কতিপয় বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছকে বিতর্কিত ও অকার্যকর করার দুরভিসন্ধি করে আসছে বলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ।

পরীক্ষা গ্রহণ, ফলাফল প্রকাশ ও ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে অহেতুক সময়ক্ষেপণ করার অভিযোগ আছে। নাগরিকের মৌলিক অধিকার শিক্ষা।

স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও নাগরিকের মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নে রাষ্ট্র ব্যর্থ হয়েছে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নের নামে বিভিন্ন দাতা সংস্থা থেকে চড়া সুদে ঋণ আনলেও সিংহভাগই দুর্নীতি করে লোপাট করা হয়। শিক্ষা বাণিজ্যকরণে অসচ্ছল শ্রেণির মানুষের সন্তানেরা পিছিয়ে পড়ছে। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে ইউনূস সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশা অনেক। বিশেষ করে শিক্ষায় দুর্নীতি, বাণিজ্যকরণ বন্ধে কার্যকর ভূমিকা দেখতে চায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অত্যধিক ব্যয় ও ভোগান্তিতে জনগণ চরম ক্ষুব্ধ।

জনগণের আকাঙ্ক্ষা ছিলো সব বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছে অন্তর্ভুক্ত হবে। তা না হয়ে উল্টো গুচ্ছ ভেঙে যাওয়ার পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে। গুচ্ছ থেকে বের হয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখে মনে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে জনগণের অধিকার ও আকাঙ্ক্ষার প্রতি ভ্রূক্ষেপ করছে না। গুচ্ছে চলমান ভর্তি প্রক্রিয়া অনেকটা স্বচ্ছ ও জনপ্রিয়। তবে অহেতুক সময়ক্ষেপণ করে ভর্তি কার্যক্রম বিলম্বিত করার ষড়যন্ত্র রোধ করা প্রয়োজন।

শিক্ষার্থীদের দাবি হচ্ছে ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও বুয়েটকে গুচ্ছে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তা না হলে গুচ্ছকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।

মেডিক্যালে একক ভর্তি পরীক্ষা আছে। এখন সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়, ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এ চার স্তরের গুচ্ছ করে প্রতি সপ্তাহে একটি গুচ্ছে পরীক্ষা নিলে এক মাসে পরীক্ষা সম্পন্ন করা যাবে। এক্ষেত্রে প্রতিটি বিভাগীয় শহরে পরীক্ষার কেন্দ্র করা যেতে পারে।

দুই সপ্তাহের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করতে তেমন সমস্যার হওয়ার কথা নয়। গুচ্ছে বিদ্যমান বিশ্ববিদ্যালয় মাইগ্রেশন আরো আপডেট করলে শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে। অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছে অন্তর্ভুক্ত থাকায় অসচ্ছল, নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীরা উপকৃত হচ্ছে। গুচ্ছ ভেঙে গেলে উচ্চশিক্ষা থেকে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী ছিটকে পড়বে শুধু অর্থনীতির কারণে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ যেসব বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছে অন্তর্ভুক্ত নয় তাদের গুচ্ছে অন্তর্ভুক্ত করতে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া জন দাবি।

লেখক: সহকারী প্রধান শিক্ষক, দনারাম উচ্চ বিদ্যালয়, সিলেট

 

জনপ্রিয়