ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০২ জানুয়ারি ২০২৫ , ১৮ পৌষ ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

দুর্নীতি প্রতিরোধের এখনই সময়

মতামত

জাকির আহমদ খান কামাল , আমাদের বার্তা

প্রকাশিত: ০৮:৩০, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪

সর্বশেষ

দুর্নীতি প্রতিরোধের এখনই সময়

‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে তারুণ্যের একতা, গড়বে আগামীর শুদ্ধতা’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে গত ৯ ডিসেম্বর সারা দেশে পালিত হয় আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী দিবস। নীতি শব্দটি দুর্নীতির সঙ্গে মিশে গেছে। অর্থাৎ দুঃ+নীতি। [দুঃ= অভাব] যেখানে নীতির অভাব পরিলক্ষিত হয়, সেখানেই দুর্নীতি দানা বাঁধতে শুরু করে।

অন্যভাবে বলা যায় যখন কেউ নীতির বিপরীতে অবস্থান করে সে মূলত দুর্নীতিকেই আলিঙ্গন করে। আদিতে অভাবই ছিলো দুর্নীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ। বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট দেখলে বোঝা যায় ভোগবাদী মানসিকতাই গুরুত্বপূর্ণ কারণ। সর্বশেষ ঘটে যাওয়া এনবিআরের মতিউর রহমানের ‘ছাগল কাণ্ড’ অন্যতম।

মানুষ জন্মগতভাবে অনেকগুলো মৌলিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে জন্মায়। এর মধ্যে অন্যতম বৈশিষ্ট্য লোভ। লোভ একসময় বিস্তৃতি লাভ করে নীতিহীন লোভে পরিণত হয় তখন আইনের সঙ্গে ধর্মীয় অনুশাসন ও স্থানীয় প্রথার বাধ্যবাধকতা তাকে আটকাতে পারে না। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, আমাদের ছোটবেলায় দেখেছি কেউ যদি এসএসসি পরীক্ষায় নকল করে ধরা পড়তো, তাহলে সে পরীক্ষার হল থেকে আর বাড়ি না এসে আত্মগোপনে চলে যেতো। অথচ বর্তমানে দেখা যায় শিক্ষক কিংবা পিতা মাতাই সন্তানের জন্য নকল সরবরাহ করে। এর মানে হল লোভকে ভয় দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি বরং দুর্নীতি সামাজিক স্বীকৃতি পেয়েছে।

বাংলাদেশে বর্তমানে সব শ্রেণির ব্যক্তির মধ্যেই ঘুষ গ্রহণের প্রবণতা দেখা যায়। তবে উচ্চ পর্যায়ের কর্তারা মূলত তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করতে গিয়ে ঘুষ গ্রহণ তাদের অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছে। উচ্চবিত্তের পাশাপাশি মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তরাও তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে ঘুষ গ্রহণের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে। জনৈক হাইব্রিড প্রাথমিক শিক্ষক নেতা মো. আবুল কাসেম চাকরি দেয়ার নামে ফ্যাসিষ্ট সরকারের তৎকালীন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যোগসাজশে কোটি কোটি টাকার ঘুষ বাণিজ্যে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। বর্তমানে তিনি পদ হারিয়ে বিভাগীয় শাস্তির আওতায় রয়েছেন। তার অনুসারী দালাল চক্র এখনো বিভিন্ন শিক্ষা অফিসে সততার লেবাসধারী অসৎ কর্মকর্তা কর্মচারীদের যোগসাজশে ঘাপটি মেরে বসে অনৈতিক সুবিধা লুফে নিতে তৎপর।

এ কথা স্বীকার করতে অনেকে লজ্জা পাবেন, কিন্তু সহজ সত্য হচ্ছে আমাদের সমাজে এখনো মাঠ পর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা নিজেকে ‘সৎ মানুষ’ দাবি করে সততার বুলি আউড়িয়ে বক্ষস্ফীত করে ফেলে। তাদের বেশিরভাগের ভেতরেই থাকে অসততার লোভ লালসা। তারা সুযোগের অভাবে তথাকথিত ‘সৎ মানুষ’। সুযোগ পেলে অথবা পারিপার্শ্বিক অনুচরদের সাহস ধার করতে পারলেই এদের ভেতর লুকিয়ে থাকা নেকড়ে বাঘের আচরণ বেরিয়ে আসে। এ ধরনের সৎ মানুষ আরো বেশি বিপজ্জনক। কারণ, এরা লুকিয়ে থাকে আমাদের খুব কাছেই। কখনো বন্ধু, কখনো আত্মীয়, কখনো সমব্যাথি বা কখনো সময়ের চাহিদা রূপে।

সুতরাং এ কথা স্পষ্ট যে লোভ যখন ভয় (আইন, ধর্ম বা স্থানীয় প্রথা) দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা যায় না তখন অনিয়ম বেড়ে যায়। অনিয়মের আরেক নাম হলো দুর্নীতি।

যেমন ধরুন নীতিতে আছে অফিস সময় সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা, এখন কেউ যদি কোনো বৈধ কারণ ছাড়া বিকেল ৪টায় অফিস ত্যাগ করেন তাহলে তিনি দুর্নীতিগ্রস্ত। আবার কেউ সপ্তাহে পাঁচ কর্মদিবসের তিন দিন অফিস করেন দুই দিন বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে অনুপস্থিত থাকেন, সেটাও ভালো না। দুর্নীতি হওয়ার আরেকটি কারণ হলো আইন যখন মানুষের জীবনযাপনের উপযোগী করে তৈরি করা না হয়। তাই জীবনের প্রয়োজনে আইনকে পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে সংস্কার করা দরকার।

১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে বেসরকারি সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল দ্বারা প্রতিবছর দুর্নীতির সূচক প্রকাশ করে থাকে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের সম্প্রতি প্রকাশিত জরিপে দেখা যায় পৃথিবীব্যাপী প্রায় ৪০০ বিলিয়ন ইউএস ডলারের দুর্নীতি হয়। দুর্নীতির হারে ১৪৬টি দেশের মধ্যে ১০৬টি দেশের স্কোর হলো ১০ এর মধ্যে ৫ বা তার কম, এর মধ্যে আবার ৬০টি দেশের স্কোর হলো ৩ বা তার কম এবং ২ এর কম পেয়েছে বাংলাদেশসহ বেশ কয়েকটি দেশ। এখানে যার স্কোর যতো কম সেই দেশ ততো বেশি দুর্নীতিপরায়ণ।

জীবন আর বাস্তবতা এখন একটু একটু করে আমাদের আত্মাকে কলুষিত করে তুলছে। অর্থ আর স্বার্থ এখন ভালোবাসা বা বন্ধুত্বের চেয়ে অনেক বেশি ভারী। এই কলুষতাকে অতিক্রম করার ক্ষমতা সবারই থাকে না। স্বৈরশাসকের দোসরদের ছড়িয়ে দেয়া লোভে সবাই পা দেয় না। আর লোভহীন এই তারুণ্যের সামনে দাঁড়াতে না পেরে দোর্দণ্ড প্রতাপশালী স্বৈরশাসক ভূলুণ্ঠিত হতে বাধ্য হয়েছে।

গত ৫ আগস্টের বিপ্লব মূলত দুর্নীতির বিরুদ্ধে তারুণ্যের জয়। তাই দুর্নীতি কমানোর জন্য একদিকে যেমন অবৈধ লোভের বিরুদ্ধে কার্যকর ভয় দরকার, অন্যদিকে জীবনের প্রয়োজনে দরকার আইনি সংস্কার। বর্তমান সরকারের নীতি নির্ধারণী মহলের কাছে প্রত্যাশা থাকবে দুর্নীতিবাজ ও সততার লেবাসধারীদের চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে দেশকে আগামী প্রজন্মের জন্য উপযোগী করে যাবেন।

(মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন)

লেখক: শিক্ষক

 

জনপ্রিয়