ঢাকা রোববার, ০৫ জানুয়ারি ২০২৫ , ২১ পৌষ ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

মা না থাকলে বাবার সম্পত্তিতে মেয়েদের প্রাপ্য

মতামত

ব্যারিস্টার ইফফাত গিয়াস আরেফিন, আমাদের বার্তা

প্রকাশিত: ০৮:৩০, ৩ জানুয়ারি ২০২৫

সর্বশেষ

মা না থাকলে বাবার সম্পত্তিতে মেয়েদের প্রাপ্য

মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী, মৃত ব্যক্তির মেয়েই যদি একমাত্র সন্তান হন, তাহলে সেই মেয়ে মোট সম্পত্তির অর্ধেক পাবে। যদি একাধিক মেয়ে থাকে ও ছেলে না থাকে, মেয়েরা মোট সম্পত্তির দুই–তৃতীয়াংশ পাবে এবং এ অংশ সব মেয়ের মধ্যে সমানভাবে ভাগ হবে। বাকি সম্পত্তি অন্যরা পাবে।

বাবার মৃত্যুর সময় যদি তার স্ত্রী অর্থাৎ মেয়ের মা বেঁচে থাকেন তাহলে তার স্ত্রী সম্পত্তির এক–অষ্টমাংশ পাবে এবং একমাত্র মেয়ে সম্পত্তির অর্ধেক পাবে এবং বাকি সম্পত্তি অন্যরা পাবে। যদি স্ত্রী বেঁচে থাকেন এবং একাধিক মেয়ে থাকে এবং কোনো ছেলে না থাকে, তাহলে মেয়েরা সম্পত্তির দুই–তৃতীয়াংশ পাবে।

আর যদি মৃত ব্যক্তির স্ত্রী অর্থাৎ মেয়ের মা বেঁচে না থাকেন, তাহলে তাদের পুরো সম্পত্তির অর্ধেক তার একমাত্র মেয়ে পাবে। একাধিক মেয়ে থাকলে পুরো সম্পত্তির দুই তৃতীয়াংশ তার মেয়েরা পাবে। এর পর বাকি সম্পত্তি অন্য ওয়ারিশরা পাবে।

এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, মৃত ব্যক্তির বাবা কিংবা মা জীবিত থাকলে কন্যা সন্তানের পাশাপাশি বাবা, মা এক-তৃতীয়াংশ পায়। মৃত ব্যক্তির অন্য কোনো ধরনের ওয়ারিশ না থাকলে তখনই কেবল কন্যা বা কন্যারা পুরো সম্পত্তি পাবে।

মৃত ব্যক্তির এক বা একাধিক মেয়ে থাকলে এবং তার ভাই, বোন জীবিত না থাকলে, ভাই বা বোনের ছেলেরা ক্রমান্বয়ে সম্পত্তির ভাগ পায়। আপন ভাই বা বোন না থাকলে সৎভাই, সৎবোন (যারা অন্য মায়ের সন্তান) কিংবা তারা না থাকলে সৎভাইয়ের পুত্র থাকলেও অবশিষ্টভোগী হিসেবে তারাও সম্পত্তির ভাগ পাবে।

ছেলে না থাকলে, কন্যাসন্তানকে বা স্ত্রীকে যেনো মৃত ব্যক্তির ভাই বা ভাইয়ের ছেলেরা মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করতে না পারে সেজন্য কেউ তার এক বা একাধিক মেয়েকে জীবিত অবস্থায় সম্পত্তি হেবা বা দান করে যেতে পারেন।

তবে এ দান করতে হবে যথাযথ উপায়ে এবং দানের সব আইন মেনে। যেমন-দানটি অবশ্যই ঘোষিত হতে হবে। দ্বিতীয়ত, দানকৃত সম্পত্তি মেয়ের দখলে দিয়ে দিতে হবে বা হস্তান্তর করে দিতে হবে এবং দানের লিখিত দলিল অবশ্যই রেজিস্ট্রি করতে হবে। অপ্রাপ্তবয়স্ক কন্যাকেও দান করা যাবে। তবে সম্পত্তির দখল মেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরই দিয়ে দিতে হবে।

আবার মেয়েকে উইল করে সম্পত্তি দেয়া যাবে। মনে রাখতে হবে, মেয়েকে পুরো সম্পত্তির এক–তৃতীয়াংশের বেশি উইল করা যাবে না। এর বেশি উইল করলে অন্য উত্তরাধিকারীদের সম্মতি লাগবে। আর উইল কার্যকর হবে উইলকারীর মৃত্যুর পর। অনেকে মেয়ে বা মেয়েদের হেবা করে দিয়ে মেয়ের কাছে থেকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দলিলের মাধ্যম সম্পত্তি বিক্রি এবং তত্ত্বাবধান করার ক্ষমতা নিয়ে থাকে। এ ধরনের পাওয়ার অব অ্যাটর্নি হতে হবে রেজিস্ট্রিকৃত এবং সাবালক মেয়েদের সম্মতিতে।

মৃত বাবার সম্পত্তিতে তার স্ত্রী ও কন্যা সন্তানদের অধিকার আছে। আমাদের দেশে একজন পূর্ণ বয়স্ক মুসলিম নারী, তিনি বিবাহিত হন বা নাই হন সম্পদের মালিক হতে পারেন, মালিকানা হস্তান্তরও করতে পারেন। তার মাতাপিতার পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে ন্যয়সঙ্গত অধিকার ও রয়েছে।

স্বামীর পরিত্যক্ত সম্পত্তিতেও রয়েছে নারীর অধিকার। ইসলামে স্বামীর সম্পত্তিতে স্ত্রীর অধিকার খুব মজবুতভাবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। যদি কারো স্বামীর মৃত্যু হয় আর সে স্বামীর কোনো সন্তান না থাকে তাহলে স্বামীর সমূদয় সম্পত্তির এক-চতুর্থাংশ পাবেন। আর যদি স্বামীর সন্তান থাকে তাহলে স্ত্রী পাবেন এক-অষ্টমাংশ (আট ভাগের এক ভাগ)।

কোনো ভাইয়ের যখন পুত্রসন্তান থাকে না তখন ‘মৃত ব্যক্তির’ ভাই এর ‘মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে’ যেমন অধিকার দেওয়া হয়েছে, তেমনই মৃত ব্যক্তির নাবালক সন্তানদের ভরণপোষণ এর এবং কন্যা সন্তানদের বিয়ে সাদীর খরচ এর দায়িত্বও কিন্তু দেয়া হয়েছে। অথচ আমরা আমাদের দেশে দেখি যে মৃত ব্যক্তির ভাইয়েরা মৃত ব্যক্তির স্ত্রী সন্তানদের (নাবালক/কন্যা সন্তান) সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করেন।

চাচাতো ভাইয়েরা যদি মৃত ব্যক্তির স্ত্রী ও সন্তানদের শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করেন এবং চাচাত বোনদের সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করে, তবে প্রথমে উকিল নোটিস পাঠাতে পারেন। এরপর আপোষবণ্টনের প্রস্তাব দিতে পারেন। এতে কাজ না হলে নিম্ন আদালতে মামলা করতে হবে।

লেখক: অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট

 

জনপ্রিয়