ঢাকা মঙ্গলবার, ০৭ জানুয়ারি ২০২৫ , ২৩ পৌষ ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

অবসরপ্রাপ্তদের কষ্ট লাঘবে দৃষ্টি দিন

মতামত

মো. সিদ্দিকুর রহমান, আমাদের বার্তা

প্রকাশিত: ০৮:৩০, ৫ জানুয়ারি ২০২৫

আপডেট: ১৫:০৯, ৫ জানুয়ারি ২০২৫

সর্বশেষ

অবসরপ্রাপ্তদের কষ্ট লাঘবে দৃষ্টি দিন

বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে ৮০ বছরের বেশি বয়সকে বার্ধক্য ধরা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের ৬০ বছরের অধিক সময়কে বার্ধক্য বলে গণ্য করা হয়। সরকারি হিসাবে ১ কোটি ৫০ লাখের অধিক প্রবীণ রয়েছেন।

যার সংখ্যা প্রতিবছর ৩০ লাখ করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বার্ধক্যদের মধ্যে কিছু কর্মক্ষম রয়েছেন আমাদের দেশে তাদের তেমন কাজ করার সুযোগ দৃশ্যমান নয়। তাই সুযোগ না থাকার ফলে তারা কর্মহীন থাকতে থাকতে নানা প্রকার চিন্তা ভাবনা, একাকীত্ব, মানসিক অশান্তিতে রোগে শোকে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। বার্ধক্যকালে শারীরিক দুর্বলতা এবং রোগ-ব্যাধি মারাত্মকভাবে ক্লান্ত করে ফেলে।

যার ফলে একাকী চলাফেরা বা কাজ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। বিশেষ করে স্বামী বা স্ত্রী তাদের একাকীত্ব জীবন যাপনের কষ্ট একমাত্র তারাই এর মর্মস্পর্শী বেদনা হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করতে পারেন। সুস্থ দেহ মন নিয়েও একাকীত্ব মানুষকে অচল করে ফেলে ফলে, তাদের দেখভাল করার জন্য পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রের সহযোগিতা আবশ্যক।

বেশিরভাগ বার্ধক্যের পক্ষে অতিরিক্ত পরিশ্রমের কাজ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। যার ফলে উপার্জনহীন করা ছেড়ে তাদের বেকারত্বের জীবন যাপন করতে হয়। উপার্জনের ব্যক্তির পরিবার তথা সমাজ ও রাষ্ট্রের বোঝা হয়ে বেঁচে থাকতে হয়। বার্ধক্যের ফলে দেহের মধ্যে জন্মাতে নানা রোগ। লোপ পায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও শরীরের শক্তি।

অনেকে অনিচ্ছা সত্ত্বেও অভাবে তাড়নায় সক্ষমতার বাহিরে কাজ করতে বাধ্য হন। এ বয়সে কেউ কেউ পরিবার থেকে অবহেলা শিকার হয়ে থাকেন। চিকিৎসার অভাবে অসুস্থ জীবনযাপন করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। সরকার থেকে প্রদত্ত বয়স্ক ভাতা নিতান্তই কম। তাই এতে প্রবীণদের সুরক্ষা হচ্ছে না। প্রবীণদের জন্য নেই কোনো আলাদা প্রবীণ হাসপাতাল। অসহায় অসচ্ছল প্রবীণদের চিকিৎসাসহ সকল ওষুধ বিনামূল্যে প্রাপ্তির কোনো সুযোগ নেই। প্রবীণদের জন্য শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দায়িত্ব ও নৈতিকতা বোধ জাগ্রত করা প্রয়োজন। সরকারি কর্মচারীদের বর্তমান চিকিৎসা ভাতা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।

আশা করা যাচ্ছে, বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার খুব শিগগির যথার্থ চিকিৎসা ভাতা প্রদান করবেন। এক্ষেত্রে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীদের চিকিৎসা ভাতা যৌক্তিকতা বিশেষভাবে বিবেচনা করার দাবি রাখে। সরকারি প্রবীণ অবসরপ্রাপ্তরা দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধসহ সব স্বাধিকার আন্দোলনের গর্বিত সৈনিক। আজকের যে স্বাধীন সার্বভোম বাংলাদেশ,তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম রক্তে গড়ে তোলা। এই মহান সৈনিকদের যথার্থ মূল্যায়ন প্রত্যাশা। প্রবীনদের বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে থাকে।

স্বাধীনতার পর ১০টি স্কেলে বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে। পরবর্তীতে সরকারগুলো ১০টি স্কেলের পরিবর্তে ২০টি করে কর্মচারীদের মধ্যে বৈষম্যের পাহাড় তৈরি করেছেন। আগামী দিনে বেতন স্কেল পুনরায় ১০টি স্কেলে এনে বৈষম্য সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনবেন এ আশাবাদ ব্যক্ত করছি। বর্তমানে চলেছে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। পাশাপাশি অন্তবর্তীকালীন সরকার সাধারণ মানুষের নিত্যপণ্যের মালামাল টিসিবির মাধ্যমে সুলভ মূল্যে দিচ্ছে। এর মধ্যে নানা মহাসংকটে জীবন কাটাচ্ছে সিনিয়র পেনশনভোগীরা। তাদের সংকট উত্তরণে রইলো কতিপয় পরামর্শ-

• শতভাগ পেনশন সমর্পনকারীদের করুণ হৃদয় বিদারক অবস্থা প্রসঙ্গে-

যেহেতু বেশিরভাগ শতভাগ পেনশন সমর্পনকারীরা মাসিকভাতা পাচ্ছে না। সেহেতু ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে সরকারের ৫ শতাংশ প্রণোদনাসহ মাসিক সুযোগ সুবিধা বঞ্চিত। তাদের ক্ষেত্রে উৎসব ভাতা ছাড়া অন্য স্বপ্ন দেখার প্রশ্নই আসে না। সরকার শতভাগ পেনশন সমর্পনকারীদের ১৫ বছর পর পেনশন পুনঃস্থাপনের এক মহতী উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। এতে খুবই নগন্য সংখ্যক পেনশনভোগী ১৫ বছর পর্যন্ত বেঁচে থেকে পেনশনের সুবিধাসহ ৫ শতাংশ প্রণোদনা ও বর্তমান মহার্ঘভাতা পাওয়ার সুযোগ পেয়ে থাকবেন। তাদের শতভাগ পেনশনের ৫০ ভাগ অর্থ ৮ বছরের মধ্যে যথারীতি মাসিক ভাতা গ্রহণ না করে পরিশোধ করা হয়েছে। বর্তমানে সবচেয়ে বেশি অসহায় অবস্থায় আছেন শতভাগ পেনশন সমর্পনকারীরা। তাদের অসহায়ত্বের কথা বিবেচনা করে সরকার শতভাগ পেনশনসমর্পন বন্ধ করে দিয়েছেন। তাই তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে না। বরং মৃত্যুজনিত কারণে তাদের সংখ্যা দ্রুত কমছে। তাদের স্বস্তিতে বেঁচে থাকার জন্য ১৫ বছরের স্থলে ১০ বছর পেনশন পুনর্স্থাপনের বিষয়টি সুবিবেচনার আশা রইলো।

প্রবীণ পেনশনভোগীদের চিকিৎসা ভাতা

নবীনদের তুলনায় প্রবীণরা বার্ধক্য জনিত কারণে রোগে-শোকে জর্জরিত। স্বাভাবিক ভাবে তাদের চিকিৎসা ব্যয় অনেক বেশি। বিশেষ করে ওষুধসহ চিকিৎসার ব্যয় বহুগুণ বৃদ্ধি যৌক্তিক হিসেবে চিকিৎসা ভাতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। এ প্রসঙ্গে প্রস্তাব- ৬৫ বছরের নিচে ৫ হাজার টাকা। ৬৫ বছর থেকে ৭০ বছরে ৭ হাজার ৫০০ সাত হাজার পাঁচশত টাকা। ৭০ বছরের ঊর্ধ্বে ১০ হাজার টাকা চিকিৎসা ভাতা দেয়ার প্রস্তাব রইলো।

একই পদে পেনশনের বিশাল বৈষম্য

বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার বৈষম্য দূরীকরণের প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছে। কর্মরত কর্মচারী জুনিয়ররা সিনিয়রদের চেয়ে কম বেতন পেয়ে থাকেন। অথচ পেনশনের ক্ষেত্রে জুনিয়র পেনশনভোগীরা সিনিয়রদের চেয়ে ভাতা বেশি পান। পেনশনভোগীদের এ বৈষম্য অনেকটা গীতিকবি হাছন রাজার গানের মতো। ‘সবাই বলে বয়স বাড়ে, আমি বলি কমে’। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে আয়ু কমে কিন্তু সামাজিক মর্যাদা ও অর্থনৈতিক দায়ভার কমে না। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের পূর্বে সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ছিলো খুবই কম। তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে জীবনধারণ ছিল অতি কষ্টের। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের পর এ কষ্ট কিছুটা লাঘব হয়েছে। ওই সময় তাদের বেতন স্কেল দ্বিগুন বৃদ্ধি হওয়ায় বিশাল বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে। এ বৈষম্য স্বাভাবিক নিয়মনীতির পরিপন্থি। এ আমানবিক বৈষম্য দূর করা জরুরি।

সামাজিক মর্যাদা

সিনিয়র পেনশনভোগীরা রোগে-শোকে আর্থিক অসচ্ছল থাকলেও সমাজে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা ও মর্যাদার অধিকারী। জীবনের দীর্ঘসময় দেশ ও জাতির সেবা করে আজকে তারা মানসিক, শারীরিক ও আর্থিক দৈন্যতায় পর্যুদস্ত। সিনিয়র পেনশনভোগীরা মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা আন্দোলনে বিশাল কর্মযজ্ঞের অংশীদার। তাদের সিনিয়র সিটিজেন হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে হাসপাতাল, যানবাহনসহ সব ক্ষেত্রে আলাদা সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। দুঃখ ও ক্ষোভের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, আজও যুবক-যুবতি সবার সঙ্গে প্রবীণদের একই লাইনে হুমড়ি খেয়ে চিকিৎসাসহ অবস্থান করতে হয়।

প্রবীণদের বয়সের ভারে অসহায় বিবেচনা করে, তাদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা দেয়া প্রয়োজন। তাদের দেশ ও জাতির প্রতি ত্যাগ ও অবদানের কথা স্মরণ করে যৌক্তিক সমস্যা দূরীকরণ প্রত্যাশা রইলো। স্বস্তিতে ও সুখে থাকুক প্রবীণ ও সিনিয়র পেনশনভোগীরা। এ আশা করছি।

লেখক: শিক্ষাবিদ

জনপ্রিয়