বাংলাদেশের অনেক পরিচিতির মধ্যে আরেকটি পরিচিতি হচ্ছে ‘শিক্ষিত বেকারের দেশ’। উচ্চশিক্ষা অর্থাৎ গ্র্যাজুয়েশন ও মাস্টার্স পাস করেও ২৮ লাখের মতো বেকার রয়েছে দেশে। যুগোপযোগী কারিকুলাম অনুসরণ না করা, বাজারের চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের দক্ষতা তৈরি না হওয়া এবং শিক্ষাব্যবস্থার ত্রুটির কারণে এই অবস্থা।
বিপরীতে দেশে যে পরিমাণ কারিগরি দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবল থাকা প্রয়োজন, রয়েছে তার অনেক নিচে। একই অবস্থা বিদেশে যে শ্রমিকরা যাচ্ছেন তাদেরও নেই কারিগরি কোনো দক্ষতা। ফলে, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের দিকটা এই কারণে দুর্বল। এই অবস্থার অবসান প্রয়োজন।
বিশ্বের শিল্পোন্নত দেশগুলোয় দক্ষ ও অতি দক্ষ জনসংখ্যা ৬০ শতাংশের কাছাকাছি থাকে। জার্মানিতে প্রায় ৭৩ শতাংশ জনসংখ্যা দক্ষ। জাপানে ৬৬, সিঙ্গাপুরে ৬৫, অষ্ট্রেলিয়ায় ৬০, চীনে ৫৫, দক্ষিণ কোরিযায় ৫০, মালয়েশিয়ায় প্রায় ৪৬ শতাংশ শিক্ষার্থী কারিগরি মাধ্যমে অধ্যয়ন করে।
বিপরীতে বাংলাদেশে সার্বিকভাবে স্বল্পদক্ষ ও দক্ষ জনশক্তি ৩৮ শতাংশ বলা হলেও কারিগরিভাবে দক্ষ, মধ্যমানের দক্ষ কিংবা স্বল্প দক্ষ জনশক্তি মাত্র ১৪ শতাংশ। বাংলাদেশে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৭ হাজার ৮১৯টি (ব্যানবেইস ২০২২)। গত দুই বছরে হয়তো আরো কিছু বেড়েছে, তবে জনসংখ্যা ও শিক্ষিত বেকারের সংখ্যানুযায়ী এই পরিমাণ নিতান্তই কম।
আমরা প্রায়ই কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাকে এক মনে করি, যদিও বিষয়টি তা নয়। বৃত্তিমূলক শিক্ষার পরের ধাপ কারিগরি শিক্ষা। সরকার কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাকে এক করে হিসাব করছে, ফলে কারিগরির প্রকৃত চিত্র উঠে আসছে না। নবম থেকে দ্বাদশ পর্যন্ত কারিগরির আওতায় অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা সরকারি হিসেবে দেখানো হয়, যা ১৪ শতাংশ। কিন্তু এসব সার্টিফিকেট কোর্স আন্তর্জাতিক কারিগরি শিক্ষার আওতায় পড়ে না। আবার কারিগরি শিক্ষার অধীনে রয়েছে ২ হাজার ৬১৭টি বিজনেস ম্যানেজমেন্ট স্কুল ও কলেজ। এসব শিক্ষার্থীদের অধ্যয়ন করার জন্য সেগুলো রয়েছে ব্যবসায় বিজ্ঞান শাখায়। এটিও কারিগরি শিক্ষার আওতায় পড়ে না।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী বিএম কলেজও কারিগরি শিক্ষার অধীনে পড়ে না। কারণ, তাদের অধ্যয়নের বিষয়গুলো রয়েছে সাধারণ শিক্ষা ও ব্যবসা প্রশাসনেও। এসব কলেজে অধ্যয়ন করছেন ৩৫ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী। বিএম কলেজের শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাদ দিলে কারিগরিতে শিক্ষার হার দাঁড়ায় ৮ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
বিদ্যমান কারিগরি প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মান কিছুটা থাকলেও সেখানে চলছে পশ্চাৎপদ শিক্ষাদান পদ্ধতি, নেই মান সম্পন্ন শিক্ষক, নেই সঠিক উপায়ে প্রশ্ন ও উত্তরপত্র মূল্যায়নের ব্যবস্থা, নকল ও উত্তপত্র মূল্যায়ন জালিয়াতি, ল্যাব ফ্যাসিলিটির স্বল্পতা, আর্থিক বরাদ্দ প্রভৃতি বহুমাত্রিক সংকট। দেশের একমাত্র সরকারি বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব গ্লাস অ্যান্ড সিরামিক্সের শিক্ষকেরা অধিকাংশই চুক্তিভিত্তিক। অল্প কিছু নিয়মিত শিক্ষক আছেন, যাদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা খুব একটা উপকৃত হতে পারছেন না।
ব্যবহারিক ক্লাসে উপকরণের অভাবে ফলপ্রসূ ক্লাস হয় না, উপকরণ যা আছে সেগুলো অধিকাংশই ব্যবহার অনুপযোগী। বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোর অবস্থা আরো ভয়াবহ। কোথাও নেই পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি। কারো কারো খুব ছোট একটি ল্যাব থাকলেও নেই প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ, প্রাকটিক্যালের জন্য নেই কোনো ভারী, মূল্যবান ও অতি প্রয়োজনীয় উপকরণ। রাজধানীর বাইরে বেসরকারি কারিগরি শিক্ষা চলছে নামসর্বস্ব অবস্থায়। এখানকার শিক্ষার্থীরা পলিটেকনিক্যালে পড়েন নামে মাত্র, স্বল্প কিছু মুখস্থ বিদ্যা দিয়েই চলছে প্রতিষ্ঠানগুলো। নেই প্রাকটিক্যাল ক্লাসের উপকরণ। প্রতিবছরের বাজেটে কারিগরি শিক্ষার কারিকুলাম, এগিয়ে নেয়ার উদ্যোগের কথা বলা হয়। ন্যানো টেকনোলজি, বায়োটেকনিলজি, রোবোটিকস, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ম্যাটেরিয়াল সায়েন্স, ইন্টারন্টে অব থিংস, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, ব্লকচেইন টেকনোলজিসহ আধুনিক বিষযগুলোর ওপর জোর দেয়া হবে বলে আশ্বাস দেয়া হয়। কিন্তু এখনো পর্যন্ত সেগুলো বাস্তবায়নের কোনো গতি লক্ষ্য করা যায়নি। তা ছাড়া রোবোটিক্স মেইনটেন্যান্স, কন্ট্রোল সিস্টেম মেইনটেনন্যান্স সাপোর্ট, ওয়েস্টেজ রি-সাইক্লিং, সোলার এনার্জি ও রিনিউয়্যাবল এনার্জির মতো বহু নতুন বিষয় শুরুর প্রস্তুতিও দেখা যাচ্ছে না যদিও এগুলো এখন খুবই প্রয়োজন। ট্যুরিজম ও হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্টের দেশে ও দেশের বাইরে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কয়েক বছর আগে বগুড়া পলিটেকনিকে বিষয়টি যুক্ত করা হয়েছে কিন্তু কোনো হাউসকিপিং ল্যাব, রিসার্চ সেল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ ক্লাস সমাগ্রী, এমনকি একজন মাত্র প্রশিক্ষিত শিক্ষক না নিয়েই বিষয়টি যাত্রা করেছে। উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের বিষয়টির দিকে নজর দেয়া প্রয়োজন।
শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে অথচ সমাজে কারিগরি শিক্ষার প্রতি অনাগ্রহ দেখা যাচ্ছে। এর বহুবিধ করাণ রয়েছে। ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং চার বছরের সার্টিফিকেটশন কোর্স হলেও এই শিক্ষায় কয়েকটি এন্ট্রান্স ব্যারিয়ার রয়েছে। সমাজে এখনো মনে করে কারিগরি শিক্ষা আর্থিক ও শিক্ষাগতভাবে পিছিযে পড়াদের শিক্ষা, এটি প্রিভিলেইজডদের নয়। ফলে, অসচ্ছল পরিবারের ছেলেমেয়েরাও সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে চান। কারিগরি শিক্ষা গ্রহণ করার পর প্রার্থীদের মর্যাদাবান কর্ম ক্ষেত্রের ও মানসম্পন্ন কাজের পরিবেশের অভাব, বেতনও তুলনামূলক কম। রয়েছে ওয়ার্ক লাইফ ব্যালান্সহীনতা। বিদেশে দক্ষ শ্রম বাজার খোঁজায় সরকার ও প্রশাসনের ব্যর্থতা, সরকারি পলিটেকনিকে সীমিত আসন সংখ্যা। নয়। কারিগরি শিক্ষা গ্রহণ করার পর অনেক উচ্চশিক্ষা বা বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং করতে চান কিন্তু তাদের জন্য অবারিত সুযোগ নেই। বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষিত বেকারত্ব বেশি হওয়ায়, বিশেষভাবে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে চাকরির বেশ অভাব থাকায় ইঞ্জিনিয়ারিং চাকরির বিজ্ঞাপনের বিপরীতে মোট ডিপ্লোমা ও বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার সংখ্যায় অনেক বেশি। ফলে বহু কোম্পানি একই ওয়ার্ক-স্কিলের পদবিতে ডিপ্লোমা ও বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারদের যুগপৎ নিয়োগ করার বিকল্প দেয়। এতে বিএসসি ইঞ্জিনিয়াররা আগ্রধিকার পেয়ে বসেন। যদিও এই ধরনের মধ্যমান কারিগরি কাজে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগের প্রয়োজন পড়েনা, শুধু ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার হলেই চলে। ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়াংয়ের কারিগরি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভয় ঢুকে গেছে যে, বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং না করলে চাকরি পাওয়া যাবে না। আরো দুটি বড় সমস্যা বিদ্যমান। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের উচ্চশিক্ষার চালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি। ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীরা পাস করার পর চাইলেই যেকোনো ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটতে ভর্তি হতে পারেন না। তাদের শুধু একটি সরকারি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালযে (ঢাকা ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (ডুয়েট) এবং কয়েকটি পর্যাপ্ত ও অপর্যাপ্ত মানের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং করার অতি সীমিত সুযোগ থাকে। ফলে একদিকে চাকরির স্বল্পতাজনিত মানসিক ও কর্মসংস্থান চাপ থাকে, অন্যদিকে থাকে উচ্চশিক্ষা বা বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং করার সুযোগের অভাব। আবার ডুয়েটে আসন সংখ্যা কম, আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ থাকলেও আর্থিক কারণে অনেকের পক্ষে সেটি সম্ভব হয় না।
দেশের বেকার সমস্যা দূরীকরণ ও দক্ষ জনশক্তি তৈরির লক্ষ্যে কারিগরি শিক্ষার ওপর প্রকৃত অর্থেই জোর দিতে হবে। এক্ষেত্রে আমরা নিম্নলিখিত দেশগুলোর উদাহরণ যেগুলো আমাদের দেশের জন্য প্রয়োজ্য সেগুলো গ্রহণ করতে পারি। বিশেষ করে জার্মানি ও মালয়েশিয়ার উদাহরণ অনুসরণ করার মতো। জার্মানিতে ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দ থেকে প্রচলিত রয়েছে ডুয়েল ভোকেশনাল প্রশিক্ষণ। এখানে একই সঙ্গে একজন শিক্ষার্থী ভোকেশনাল ট্রেনিং স্কুলে অধ্যয়ন করে এবং একটি সত্যিকারের কোম্পানিতে কাজ করে বাস্তব জ্ঞান লাভ করে। ভোকেশনাল স্কুলে প্রধানত তত্ত্বীয় অংশ, যা ইন্ডাস্ট্রিতে কাজের জন্য দরকার হয় সেটা শেখানো হয়। ভোকেশনাল প্রশিক্ষণ গ্রহণকালীন একজন ট্রেইনি কোম্পানি থেকে মাসিক বেতন পেয়ে থাকে। ফিলিপাইনে প্রথমে ছয় বছরের প্রাইমারি স্কুল এবং ৪ বছরের হাইস্কুলকে প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি লেভেলের এডুকেশনের অন্তর্ভূক্ত করা হয়। এরপর টারশিয়ারি লেভেল যেখানে শিক্ষার্থীদের হাতে কয়েকটি অপশন থাকে। যেমন ৪/৫/৬বছরের ডিগ্রি প্রোগ্রামে পড়াশোনা করা অথবা কারিগরি শিক্ষা অর্জন করা। টেসডা (টেকনিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড স্কিল ডেভেলপমেন্ট অথরিটি)-র আওতায় টেকনিক্যাল এডুকেশন ভোকেশনাল ট্রেনিং (টিইভিটি) এর এই প্রোগ্রাম ফিলিপাইনে শুধুমাত্র হাইস্কুল পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্যই উপযোগী না, দেশটির বেকার, আর্থিকভাবে অসচ্ছল।
কোনো কারণে পূর্বের কাজ হারিয়েছে, বিদেশে কর্মরত সেই সব শ্রমিক যারা এখন দেশে আছে সবার জন্য উন্মুক্ত। দক্ষিণ কোরিয়ার শিক্ষাব্যবস্থায়ও হাইস্কুল থেকে গ্র্যাজুয়েশসের পরে শিক্ষার্থীদের হাতে তিনটি অপশন থাকে। ১. তারা সরাসরি কাজে ঢুকে যেতে পারে ২. দুই/তিন বছরের ভোকেশনাল ট্রেনিং করতে পারে ও ৩. বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে পারে। দেশটিতে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে ২৯ শতাংশে উন্নীত করেছে। জাপানে ভোকেশনাল শিক্ষা তিন ধাপে সম্পন্ন করা যায়। প্রথমে শিক্ষার্থীদের ৯ বছরের আবশ্যিক শিক্ষা সম্পন্ন করতে হয়। পরে সেকেন্ডারি ও টারশিয়ারি ধাপে ভোকেশনাল শিক্ষা সম্পন্ন করা যায়। জাপানে পূর্বে একাডেমিক পড়াশোনা ভোকেশনালের চেয়ে বেশি গুরুত্ব পেতো। ভোকেশনাল ছিলো মূলত লো গ্রেডের শিক্ষার্থীদের এবং আর্থিকভাবে অসচ্ছলদের জন্য। কিন্তু বর্তমানে ইন্ডাস্ট্রির কাজের ধরনের কারণে ভোকেশনাল শিক্ষা অনেক জনপ্রিয় হচ্ছে। ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দ থেকে সিঙ্গাপুরে ভোকেশনাল ট্রেনিং বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের ভোকেশনাল শিক্ষায় উৎসাহ প্রদান করছেন। ভোকেশনাল শিক্ষায় শিক্ষিতদের ৮৪ শতাংশ কোর্স সম্পন্ন করার ছয় মাসের মধ্যে কাজ পেয়ে যান। মালয়েশিয়াতে শিক্ষার্থীরা ভোকেশনাল শিক্ষার সার্টিফিকেট গ্রহণের পর ক্রেডিট ট্রান্সফার করে উচ্চশিক্ষায় অংশ নিতে পারে। চীনা শিক্ষাব্যবস্থার তিন ধাপে কারিগরি শিক্ষায় অংশগ্রহণ করা যায়। জুনিয়র সেকেন্ডারি, সিনিয়র সেকেন্ডারি ও টারশিয়ারি।
বিগত চার দশকে বাংলাদেশের প্রত্যোক কারিগরি শিক্ষার চাহিদার কথা বিবেচনায় রেখে এবং দেশে শিক্ষিত বেকার তৈরি না করার জন্য ’৯০-এর দশকে বেসরকারি খাতে কারিগরি শিক্ষাদানকে উৎসাহিত করা হয়। তবে, সেটি কাঙ্ক্ষিত ফল বয়ে আনেনি বরং বাণিজ্যিক রূপ ধারণ করেছে। কারণ, গ্রামে গঞ্জে অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে যেগুলোতে নেই কোনো যন্ত্রপাতি, উপযুক্তমানের শিক্ষক আর আর্থ-সামাজিক কাঠামো। এগুলো শুধু সার্টিফিকেট বিতরণের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। ফলে, এসব প্রতিষ্ঠান থেকে সার্টিফিকেট নিয়ে উপযুক্ত কাজ পাচ্ছেন না শিক্ষার্থীরা। তবে জেলা শহরের সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, টেকনিক্যাল স্কুল কলেজগুলোর শিক্ষার মান মোটামুটি গ্রহণযোগ্য, সেগুলোকে আরো উন্নত করা প্রয়োজন, বর্তমান যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগুলোর কারিকুলামে পরিবর্তন আনা আশু প্রয়োজন। এতো বিশাল জনসংখ্যা ও এতো বেকারের দেশে মাত্র একটি কারিগরি শিক্ষাবোর্ড, এই অবস্থাই প্রমাণ করে আমাদের কারিগরি শিক্ষা কোনো অবস্থায় আছে। একটি বোর্ডের পক্ষে বিদ্যমান কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো তত্ত্বাবধান করা, মূল্যায়ন ব্যবস্থা উন্নত করা কঠিন কাজ। এটি যেনতেন প্রকারে হয়ে থাকে। কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের স্যংখা বাড়ানো প্রয়োজন যদিও আমরা দেখতে পাচ্ছি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের সংখ্যা নয়টি। এ ছাড়া জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ দেশে একটি কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সুপারিশ করেছিলো সেটির বাস্তবায়ন তো দূরের কথা বিষয়টি নিয়ে কোন কথাই শোনা যাচ্ছে না। অথচ দেশকে স্বাবলম্বী করতে হলে ও বেকারের সংখ্যা কমাতে হলে কারিগরি শিক্ষা জনপ্রিয় করা, প্রসার ঘটানো ও উন্নত করার কোনো বিকল্প নেই।
লেখক: ক্যাডেট কলেজের সাবেক শিক্ষক