ঢাকা বুধবার, ২২ জানুয়ারি ২০২৫ , ৮ মাঘ ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

অ্যানুয়াল স্টুডেন্টস অ্যাসেসমেন্ট: বেসরকারিভাবেও করা জরুরি

মতামত

মাছুম বিল্লাহ, আমাদের বার্তা

প্রকাশিত: ০৮:০০, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫

সর্বশেষ

অ্যানুয়াল স্টুডেন্টস অ্যাসেসমেন্ট: বেসরকারিভাবেও করা জরুরি

আমাদের বোর্ড পরীক্ষার ফল ও সার্টিফিকেট দ্বারা একজন শিক্ষার্থীর প্রকৃত একাডেমিক উন্নয়ন, দুর্বলতা ও দক্ষতা কোনোটিই প্রকাশ পায় না। আন্তর্জাতিক অ্যাসেসমেন্টের সঙ্গেও এর কোনো মিল নেই। শিক্ষার্থীরা প্রকৃত অবস্থা জানার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর একটি চমৎকার কাজ করছে সেটি হচ্ছে ‘অ্যানুয়াল স্টুডেন্টস অ্যাসেসমেন্ট (এএসএ)’। এখানে যদিও অনেক কিছু করার আছে তারপরেও এটি শুরু করাই একটি মহত কাজ। এ বিষয়টি মাধ্যমিকেও দরকার কিন্তু এ স্তরে সেটি সেভাবে নেই। ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে প্রথমবারের মতো সেকেন্ডারি এডুকেশন কোয়ালিটি অ্যান্ড অ্যাকসেস এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্টের আওতাভুক্ত বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রকাশ করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের ‘মনিটরিং অ্যান্ড ইভালুয়েশন উইং’। ওই বছর শুধু নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের দক্ষতা যাচাই করা হয়েছিলো। ২০১৩ ও ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে ষষ্ঠ ও অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের দক্ষতা যাচাই করা হয়। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে জাতীয় পর্যায়ে এ প্রতিবেদন প্রকাশ শুরু হয়। ২০১৭ ও ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে ষষ্ঠ ও অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদেরও বাংলা, ইংরেজি ও গণিতের দক্ষতা যাচাই করা হয়। সর্বশেষ ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে ‘ন্যাশনাল স্টুডেন্টস অ্যাসেসমন্টে রিপোর্ট অব সেকেন্ডারি স্টুডেন্টস’ এর প্রতিবেদনে শিক্ষার্থীদের ইংরেজি ও গণিতে অধিক দুর্বলতার চিত্র উঠে আসে। রিপোর্টে সারা দেশের ২৮ হাজার ১৯৪ জন ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী, ২৭ হাজার ৭৩৭ জন অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী এবং ২৭ হাজার ২৮৪ জন দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীর তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়। এতে শিক্ষার্থীদের পারফরম্যান্সকে পাঁচটি স্তরে ভাগ করা হয়। এর মধ্যে সর্বনিম্ন স্তর ব্যান্ড ২ এবং সর্বোচ্চ স্তর ব্যান্ড ৬ ধরা হয়।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, ষষ্ঠ শ্রেণির ৯ দশমিক ৩ শতাংশ শিক্ষার্থী, অষ্টম শ্রেণির ২৬ দশমিক ৪ শতাংম ও দশম শ্রেণির ৪০ দশমিক ৪ শতাংশ শিক্ষার্থী ইংরেজিতে ব্যান্ড ৬ পর্যায়ের দক্ষতা অর্জন করেছে। গণিতের ক্ষেত্রে ষষ্ঠ শ্রেণির মাত্র ৫ দশমিক ১ শতাংশ শিক্ষার্থী, অষ্টম শ্রেণির ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ ও দশম শ্রেণির ২৮ দশমিক ৪ শতাংশ শিক্ষার্থী গণিতে ব্যান্ড ৬ পর্যায়ের দক্ষতা অর্জন করেছে। তবে এ প্রতিবেদনে শিক্ষার্থীরা বাংলায় তুলনামূলক ভালো ফল করে। ষষ্ঠ শ্রেণির ২৫ দশমিক ৮ শতাংশ শিক্ষার্থী, অষ্টম শ্রেণির ৪৭ দশমিক ৭ শতাংশ ও দশম শ্রেণির ৬৪ দশমিক ৩ শতাংশ শিক্ষার্থী ইংরেজিতে ব্যান্ড ৬ পর্যায়ের দক্ষতা অর্জন করেছে। এই ব্যান্ড ২ ও ৬ এর মানে কী? এর ব্যাখ্যা না দিলে অন্যদের কাছে এর কোনো মূল্য থাকছে না। দ্বিতীয়ত, বাংলা, ইংরেজি ও গণিতে কী কী প্রশ্ন দেয়া হয়েছিলো, কী মূল্যায়ন করা হয়েছে সেগুলোর উল্লেখ থাকা একান্ত প্রয়োজন যা প্রাথমিক স্টুডেন্টস অ্যাসেসমেন্টে বলে দেয়া হয়। তৃতীয়ত, কোনো পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে, কোন কোন এলাকার স্যাম্পল নেয়া হয়েছে তারও উল্লেখ নেই। যেমন-ঢাকসহ বড় বড় সিটির নাম বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গ্রামীণ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দক্ষতা ও বেসিক ধারণার মধ্যে আকাশ পাতাল ব্যবধান, সেটি কীভাবে মিনিমাইজ করা হয়েছে সেুগলোর উল্লেখ না থাকলে এই মুল্যায়ন সবার কাছে মুল্যহীন। এসব মুল্যায়ন প্রতিবছরই করা উচিত, শুধু সরকারিভাবে নয় বেসরকারি পর্যায়ে করা উচিত। তাহলে একটি চিত্র দেশের শিক্ষার সঙ্গে জড়িতরা জানতে পারবেন এবং সেখান থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য ‘ফুড ফর থট’ পাবেন। এখন মাউশি এটি করলে তার গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন থেকে যায়। কারণ, সরকার কি চাইবে তাদের শিক্ষার্থীদেও দুর্বলতা প্রকাশ করতে?

শিক্ষার্থীদের বর্তমান অর্জিত দক্ষতা বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যায়, আমাদের শিক্ষার্থীরা কতোটা শিখতে পারছেন, কোন কোন ক্ষেত্রে তাদের ঘাটতি রয়েছে এবং আমাদের কোন ক্ষেত্রে উন্নয়ন দরকার। এ কারণে কারিকুলাম পরিবর্তন বা শিক্ষা ক্ষেত্রে যেকোনো প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের বর্তমান দক্ষতার স্তর মূল্যায়ন অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু কয়েক বছর ধরেই করোনার প্রাদুর্ভাবসহ বিভিন্ন কারণে এ মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রকাশ হয়নি। ফলে আমাদের শিক্ষার্থীদের বর্তমান অবস্থা কী, তারা কতোটা শিখতে পারছে এবং শিখন-শেখানোর ক্ষেত্রে সংকটগুলো কী সে বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট চিত্র পাওয়া যাচ্ছে না। মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের শ্রেণি অনুযায়ী অর্জিত দক্ষতা যাচাইয়ের জন্য ‘ন্যাশনাল স্টুডেন্টস অ্যাসেসমেন্ট রিপোর্ট অব সেকেন্ডারি স্টুডেন্টস’ প্রতিবেদনে শিক্ষার্থীদের বাংলা, ইংরেজি ও গণিতের দক্ষতার স্তর বিশ্লেষণ করে। দুই বছর পর পর এ শিক্ষার্থী মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার কথা রয়েছে কিন্তু তাও হচ্ছে। মাউশি সর্বশেষ এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে। এরপর প্রায় পাঁচ বছর পর হলেও জাতীয় পর্যায়ে মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের নতুন কোনো মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রকাশ করতে পারেনি মাউশি। আমরা মনে করি, মাউশি এ দায়িত্বটি শিক্ষাবিষয়ক কোনো প্রতিষ্ঠানকে দিতে পারে। ‘দৈনিক শিক্ষা ও আমাদের বার্তার’র শিক্ষা ও গবেষণা সেল এই কাজটি ভালোভাবে করতে পারে। মাউশির ‘মনিটরিং অ্যান্ড ইভালুয়েশন উইং’ একটি করুক, আরেকটি যদি দৈনিক শিক্ষা ও আমাদের বার্তা করে তাহলে এটি একটি পারফেক্ট মূল্যায়নে পরিণত হবে ও অর্জন করবে বিশ্বাসযোগ্যতা।

এ মূল্যায়ন প্রতিবেদন থেকে সহজেই মাধ্যমিক স্তরের সংকটগুলো নির্ণয় করা যায়। এ কারণে মাধ্যমিক শিক্ষার মান উন্নয়নবিষয়ক পরিকল্পনা গ্রহণে এ মূল্যায়ন রিপোর্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখন পর্যন্ত প্রকাশিত প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের মূল্যায়ন প্রতিবেদনগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রতিটি শ্রেণিতেই আমাদের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই কাঙ্ক্ষিত দক্ষতা অর্জন করতে পারছেন না। অর্থাৎ আমাদের শিখন-শেখানোর যে সংকট সেটি প্রাথমিক স্তর থেকেই শুরু হচ্ছে এবং এটি পরবর্তী স্তরেও থেকে যাচ্ছে। এর একটি কারণ হলো আমাদের এ ঘাটতি দূর করতে যে ধরনের উদ্যোগ দরকার, বাস্তবে সে ধরনের উদ্যোগ নেই। এখন পর্যন্ত কারিকুলাম পরিবর্তনসহ যেসব উদ্যোগ নেয় হয়েছে, তার বেশির ভাগই যথাযথ প্রস্তুতিসহ নেয়া হয়নি এবং মাঠ পর্যায়ের বাস্তবতা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই উপেক্ষিত হয়েছে। তা ছাড়া এসব প্রতিবেদনের ফল কতোটা ব্যবহার করা হচ্ছে শিক্ষাক্ষেত্রে সে তথ্য থাকা প্রয়োজন এবং সেটিও প্রকাশ করা উচিত। কারণ, যেকোনো সার্ভে বা গবেষণা কোনো বিষয়ের উন্নয়নের জন্য, কোনো বিষয়ে পরিবর্তন আনার জন্য। সেটি যদি কোথাও ব্যবহারই করা না হয় তাহলে তো সেটি মূল্যহীন হয়ে পড়ে।

মাধ্যমিক পর্যাযের শিক্ষার্থীদের গণিত ও ইংরেজিতে দুর্বলতার চিত্র উটে এসেছে ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষার ফলেও। ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অন্যান্য বিষয়ের তুলনায় গণিতে অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থী ফেল করেছিলো। প্রকাশিত ফলে দেখা গেছে, গণিতে নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড ও মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড মিলে ফেলের হার ৮ দশমিক ৮১ শতাংশ। সংখ্যার হিসেবে এটি প্রায় ১ লাখ ৬৬ হাহার ৬০২ শিক্ষার্থীর অকৃতকার্যতা। গণিতের পরই শিক্ষার্থীরা সবেচেয়ে বেশি ফেল করেছিলো ইংরেজিতে। বোর্ড পরীক্ষায় যেভাবে ট্রাডিশনাল প্রশ্ন করা হয় এবং যে সহানুভূতির সঙ্গে এবং অনিভিজ্ঞ পরীক্ষকদের দ্বারা খাতা মূল্যায়ণ করানো হয় তাতে বোর্ড পরীক্ষার ফল খুব কমই মূল মূল্যায়নকে প্রতিফলিত করে। তারপরেও ফেলের হার যদি এই হয়, তাহলে বোঝা যাচ্ছে যে, প্রকৃত অবস্থা ককো শোচনীয়, কতোটা বেগতিক! আমরা যারা শিক্ষার কাজে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাই, শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলি শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করি তখন প্রকৃতি চিত্রটা আমরা দেখতে পাই যার সঙ্গে বোর্ড পরীক্ষার ফলাফলের কোনো মিল নেই।

করোনা মহামিারির কারণে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে মাউশির মনিটরিং অ্যান্ড ইভাল্যুয়েশন উইং। তারা আরো বলেছেন ‘বর্তমানে ন্যাশনাল স্টুডেন্সেটস অ্যাসেসমেন্ট রিপোর্ট অব সেকেন্ডারি স্টুডেন্সটস রিপোর্ট ২০২৩-এর কাজ চলমান। এরই মধ্যে অষ্টম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের তথ্য সংগ্রহ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী দুই মাসের মধ্যে ২০২৩ -এর মুল্যায়ন প্রতিবেদন প্রকাশ করার কথা বলছেন। আমরা আবারো দাবি করছি, মূল্যায়ন টুলস, পদ্ধতি, স্যাম্পল জনসমক্ষে স্পষ্ট করা হোক। শুধু মূল্যায়নের জন্য মূল্যায়ন নয়, এটির উদ্দেশ্য এবং ব্যবহার নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সঙ্গে সঙ্গে বেসরকারি পর্যায়ে যাতে কমপক্ষে আরো একটি মুল্যায়ন হয়, মাউশিকে সেই বিষয়টি নিশ্চিতভাবে দেখার অনুরোধ করছি।

জনপ্রিয়