আমি আসলে এই একজীবনে সবকিছুর বিচার চাই না। কোনোদিন যদি কোনো শিক্ষার্থীর দ্বারা অপমানিত হই, লাঞ্ছিত হই এমনকি প্রহৃতও হই-তবুও বিচার চাই না। যদি অন্যের কাছে শুনে কেউ বিচার করতে এগিয়ে আসেন তবে সেটা আমার জন্য দ্বিতীয়বার অপমান, লাঞ্ছনা ও প্রহার হবে। এইজীবনে বিকল্প জীবিকার বহু দরজা উম্মুক্ত আছে। শিক্ষকতার সম্মান যেদিন হারিয়ে ফেলবো সেদিন ভিন্ন পেশা বেছে নেবো। বিকল্প হিসেবে স্বেচ্ছা মৃত্যু সহজ।
সমাজে শিক্ষকদের যে অপমান তা একদিনে তৈরি হয়নি। রাষ্ট্র-রাজনীতি রাস্তা তৈরি করে দিয়েছে এবং শিক্ষকেরা সেই রাস্তা প্রশস্ত করেছেন। যে শিক্ষক পরীক্ষার পূর্বে প্রাইভেটে শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন বলে দেন, অতিরিক্ত খাতির করে নম্বর বাড়ান কিংবা পরীক্ষার হলে নীতিবহির্ভূতভাবে সুবিধা দেন -সেই শিক্ষকদের সম্মান করতেই হবে? যে জ্ঞান টাকার বিনিময়ে ভাগাভাগি হয়, সেখানে ক্রেতা-বিক্রেতার সম্পর্ক না দেখে সমাজ গুরু-শিষ্যের সম্পর্ক কেনো দেখে? শিক্ষকদের ওপর শিক্ষার্থীদের চোখ রাঙানি, পদত্যাগে বাধ্য করা কিংবা সম্মানহানি করার পরিবেশ একদিনে সৃষ্টি হয়নি। দায় কারো থেকে কারো কম নয়।
শিক্ষার্থীরা কি ক্লাসে আছে? বর্তমান শিক্ষার্থীদের অধিকাংশকে দিয়ে লেখাপড়া ছাড়া আর সবকাজ করানো যায়! জমি দখল করানো যায়, বাজার মনিটরিং করানো যায়, সহমত ভাই বলানো যায় কিংবা রাস্তা পরিষ্কারও করানো যায়! বড়সড় সেটেলমেন্ট তো এখন শিক্ষার্থীদের নৈমিত্তিক কাজ! নরম নরম কথা বলে আর মাথামাখানো আচরণ করে শিক্ষার্থীদেরকে ক্লাসরুমে ফেরানো যাবে? জাতি ও রাষ্ট্রের স্বার্থে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরা খুব জরুরি।
মেধাবীদের শিক্ষকতায় টানার জন্য আকর্ষণীয় জীবনযাত্রার পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে। শিক্ষার্থীরা জ্ঞান-বিজ্ঞানে যতোদূর যাবে এই রাষ্ট্রও ততোদূর পৌঁছাবে। শিক্ষক্ষদের মধ্যে নৈতিকতা থাকতে হবে, অভিভাবককে সচেতন হতে হবে ও শিক্ষার্থীদেরকে আন্তরিক করে গড়ে তুলতে হবে। পড়াশোনার বিকল্প আসলে কিছুই নেই। শিক্ষার্থীদের মন পড়াশোনা ছাড়া সবকিছুতে আকর্ষণ করে। কিন্তু সবকিছুর ঊর্ধ্বে জ্ঞানচর্চার দিকে আকৃষ্ট করতে হবে। রাষ্ট্র তৎপরতা দেখালে এটা সম্ভব।
লেখক: প্রাবন্ধিক