ঢাকা বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারি ২০২৫ , ১৬ মাঘ ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

খোলাবাজারে পাঠ্যবই, এনসিটিবিকে আরো তৎপর হতে হবে

মতামত

মাছুম বিল্লাহ, আমাদের বার্তা

প্রকাশিত: ২৩:২৬, ২৫ জানুয়ারি ২০২৫

সর্বশেষ

খোলাবাজারে পাঠ্যবই, এনসিটিবিকে আরো তৎপর হতে হবে

নতুন শিক্ষাবর্ষের একমাস শেষ হতে চলেছে, এখনো অর্ধেক শিক্ষার্থীর হাতে বই পৌঁছায়নি। বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীরা হাতে বই পেলে এক ধরনের আনন্দ অনুভব করেন। সেই বিষয়টিতে ভাটা পড়েছে। শিক্ষার্থীরা বিনামূল্যের বই হাতে পাননি। অথচ তাদের বই পাওয়া যাচেছ খোলা বাজারে। দেশের বিভিন্ন জেলার বাজার ছেয়ে গেছে পাঠ্যবইয়ে। এ ঘটনা এবার নতুন নয়, প্রতিবছরই হয়।

অন্তর্বর্তী সরকার কিন্তু বিষয়টি ঠেকাতে তৎপর। কিন্তু, অসাধু চক্র বই বিতরণ প্রচেষ্টা নস্যাৎ করতে এবং আর্থিকভাবে লাভবান হতে এই অপতৎপরতা চালিয়ে যাচেছ। ইতোমধ্যে খোলাবাজারে বই বিক্রি ও মজুতকারী চক্রের দুই সদস্যকে গোয়েন্দা পুলিশ আটক করেছে। এ ছাড়াও ১৯ হাজার বই জব্দ করা হয়েছে।

দৈনিকশিক্ষা ও আমাদের বার্তার অনুসন্ধানে জানা গেছে, পূর্ববর্তী সরকারের শিক্ষামন্ত্রীর আশীর্বাদপুষ্ট কিছু কর্মকর্তা ও এনসিটিবির কিছু অসৎ কর্মকর্তার যোগসাজশে এ ধরনের অপকর্ম ঘটছে। এনসিটিবির পাঠ্যপুস্তকের মান নিয়ন্ত্রণ, কাগজ ও আর্টকার্ড মজুত, গাইড বই মুদ্রণ ও সরকারি বই বাজারে বিক্রির বিরুদ্ধে শুরু থেকেই মাঠে আছে তদারকি দল এবং সরকারের বিভিন্ন সংস্থা। তারপরও অসাধু চক্রের অপকর্ম ঠেকানো যাচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রে তদারকির সঙ্গে জড়িতরাও এই কাণ্ডে জড়িত বলে অভিযোগ উঠছে।

আমরা অবগত যে, পাঠ্যবইয়ে সঠিক ইতিহাস সংযোজন, পরিমার্জন ও দ্বিতীয়বার টেন্ডার করা, ভারতে বই ছাপা বন্ধ করাসহ নানা কারণে এবার বই ছাপার প্রক্রিয়া বিলম্বে শুরু করতে বাধ্য হয়েছে সরকার। শিক্ষাক্রমে পরিবর্তন, সংশোধন- পরিমার্জন করতে হয়েছে পাঁচ শতাধিক বই। পাঠ্যবইয়ে ইতিহাস সংযোজন, পরিমার্জন ও দ্বিতীয়বার টেন্ডার, ভারতে বই ছাপা বন্ধ করাসহ নানা কারণে বই ছাপার প্রক্রিয়ায় বিলম্ব হয়। ৪০ কোটি ১৬ লাখ বই ছাপানো চাট্টিখানি কথা নয়। বিগত বছরগুলোতে এত বিশাল অঙ্কের বই ছাপাতে হয়নি। এবারকার মতো শিক্ষা প্রশাসনে এতো পরিবর্তন ছিলনা, যারা এসব কাজে যুক্ত ছিল তারা সবাই ওয়াকেবহাল ছিলেন বই সংক্রান্ত কাজে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এ সব ক্ষেত্রে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। উপরোক্ত কারণগুলোর জন্য বই ছাপাতে বিলম্ব ও বিতরণে বিলম্ব হচেছ। সব বই স্কুলে না পৌছানোয় প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের কিছু ক্লাসের বই কালোবাজারে পাওয়া যাচেছ। এটি বাজারের স্বাভাবিক নিয়ম। এটিও এনসিটিবিকে বুঝতে হবে যে, শিক্ষার্থীরা যখন সময়মতো বই হাতে পাবেন না তখন বিকল্প উপায়ে তারা, তাদের অভিভাবক বই পাওয়ার চেষ্টা করবেন এবং সেই প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত হবে অসাধু ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা। এনসিটিবি সম্ভবত এতো বিষয়কে একসাথে মানিয়ে নিতে এবং ব্যবস্থা গ্রহণে পিছিয়ে আছে।

বিষয়টি সামলাতে এনসিটিবিকে আরও তৎপর হতে হবে। সুনির্দিষ্ট কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

আমরা জানি, দেশে শিক্ষা অফিসগুলো বইয়ের চাহিদা পাঠায়। এরপর বই বিতরণ শেষ হলে অতিরিক্ত বইগুলো নাকি তারা খোলাবাজারের চক্রের কাছে বিক্রি করে। কিছু ক্ষেত্রে ছোট ছোট প্রেসগুলো অতিরিক্ত বই ছাপিয়ে খোলাবাজারে বাড়তি দামে বিক্রি করে। এসব বিষয় এনসিটিবির জানা থাকা প্রয়োজন এবং সে অনুযায়ী কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন ছিলো অনেক আগেই। সেটি করা হয়নি। বইয়ের চাহিদা কমবেশি দেয়ার কারণে বই ছাপা ও বিতরণে গ্যাপ পড়ে যায়। এই বিষয়টিতে বেশ জোর দিতে হবে।

ব্যানবেইজে শিক্ষার্থীদের ডাটা সংগ্রহ করা থাকে সেখান থেকে এনসিটিবি ডাটা নিয়ে ক্রসচেক করতে পারে, যতো বই প্রয়োজন শিক্ষা অফিসগুলো তার চেয়ে বেশি বা কম বইয়ের চাহিদা দিয়েছে কিনা। উপজেলা ও জেলার শিক্ষা অফিসগুলোর দায়িত্ব এ ব্যাপারে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তারা দেখা যায় শুধু বিদ্যালয়ের চাহিদার উপরই নির্ভর করে, কোন ক্রসচেক করেনা। উপজেলা ও জেলা শিক্ষা অফিসগুলো বইয়ের চাহিদা নিরূপনের জন্য দায়ী। সেখান থেকেই সমস্যাগুলো হয়। তারা যাতে সঠিকভাবে তৎপর হয় সেই বিষয়টি এনসিটিবিকে নিশ্চিত করতে হবে।

এছাড়াও এনসিটিবিকেও একটি বিশেষ সেল গঠন করতে হবে, তাদেরকে শুধু অন্যদের সংগ্রহ করা তথ্যের উপর নির্ভরশীল হলে চলবে না। এনসিটিবির নিজস্ব প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থী সংখ্যা, ঝরে পড়া শিক্ষার্থী সংখ্যা, কিছু শিক্ষার্থী মাইগ্রেশনের কারণে এলাকাভিত্তিক বেড়ে কমে যেতে পারে- সেই সংখ্যা এনসিটিবির কাছে থাকতে হবে। তাদের ডাটা হতে হবে লেটেস্ট। ব্যানবেইজের ডাটা অনেক সময় পুরনো ও সঠিক সময়ে পাওয়া যায় না। এনসিটিবিকে আরও একটি উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে যে, যেসব বই প্রথমদিকে পড়ানো হবে অর্থাৎ বেশি জরুরি সেই বইগুলো যাতে শিক্ষার্থীরা যথাসময়ে পায়।

জনপ্রিয়