ঢাকা বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ , ২২ মাঘ ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

জাতি গঠনে গ্রন্থাগার আলোকবর্তিকা

মতামত

এস ডি সুব্রত, আমাদের বার্তা

প্রকাশিত: ২০:০০, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সর্বশেষ

জাতি গঠনে গ্রন্থাগার আলোকবর্তিকা

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছিলেন, ‘জীবনে তিনটি জিনিসের প্রয়োজন। বই, বই এবং বই।’ প্রবাদ আছে, যে জাতি ইতিহাস জানে না, সে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে না। সামনে এগোতে হলে ইতিহাস জানতে হবে। আর সে ইতিহাস জানতে হলে বই পড়তে হবে। বই পড়তে হলে যেতে হবে গ্রন্থাগারে। কারণ, অনন্য সব বই থরে থরে সাজানো থাকে গ্রন্থাগারে। যে জাতির গ্রন্থাগার যতো উন্নত সে জাতি ততো উন্নত। গ্রন্থ পাঠের মাধ্যমে জ্ঞান, সাধকদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আমরা নিজেদের সমৃদ্ধ করি, জাতির ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারি। অতীত জানতে, মানব সৃষ্টির ইতিহাস জানতে, মানবসভ্যতার ক্রমবিকাশ জানতে গ্রন্থ পাঠের বিকল্প নেই। গ্রন্থ পাঠের অবারিত দ্বার উন্মোচন করে দেয় গ্রন্থাগার। [inside-ad]

বাংলাদেশে গ্রন্থাগার উন্নয়নের সূচনা হয় প্রায় দুই হাজার বছর আগে। খ্রীষ্টীয় তৃতীয় শতাব্দীতে ময়নামতি ও মহাস্থানগড়সহ অন্যান্য বৌদ্ধ বিহারগুলোতে গ্রন্থাগারের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। ৩৯৯ খ্রিষ্টাব্দে বিখ্যাত চীনা পর্যটক ফা-হিয়েন এর ভ্রমণ বৃত্তান্ত থেকে বাংলাদেশে গ্রন্থাগারের অস্তিত্ব সম্পর্কে জানা যায়। ১৮৫৪ খ্রিষ্টাব্দকে বাংলাদেশে গ্রন্থাগার উন্নয়নের ইতিহাসে মাইলফলক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১৮৫৪ খ্রিষ্টাব্দে তিন জেলায় একযোগে গণ-গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠিত হয়। সেগুলো হলো বগুড়া উডবার্ন পাবলিক লাইব্রেরি, রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি ও বরিশাল পাবলিক লাইব্রেরি। ১৮৮৪ ও ১৮৮৫ খ্রিষ্টাব্দে রাজশাহী ও কুমিল্লায় গণ-গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয় নোয়াখালী ও সিলেট পাবলিক লাইব্রেরি। পরবর্তী সময়ে ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চালু হয়। সেই সঙ্গে গ্রন্থাগার সার্ভিসও প্রবর্তন করা হয়।

স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে বাঙালির ইতিহাস ঐতিহ্য ও সাহিত্য সংস্কৃতির মূল্যবান উপাদান সংরক্ষণের জন্য ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ৬ নভেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয় জাতীয় আর্কাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তর যা বর্তমানে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় গ্রন্থাগার ভবনে অবস্থিত। ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে ৩০ অক্টোবর জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস হিসেবে ৫ ফেব্রুয়ারিকে ঘোষণা করা হয়। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ৫ ফেব্রুয়ারি প্রথমবারের মতো জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস উদযাপন করা হয়। মানুষকে গ্রন্থাগারমুখী, মননশীল সমাজ গঠনের কেন্দ্র বিন্দু ও জনগণের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে লাইব্রেরির ভূমিকাকে দৃঢ় করার জন্য গ্রন্থাগার দিবস পালন করা হয়। ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের ৫ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছিলো বিধায় ৫ ফেব্রুয়ারিকে জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস ঘোষণা করা হয়। দেশে সরকারি গ্রন্থাগার ৭১টি এবং নিবন্ধিত বেসরকারি গ্রন্থাগার ৮০০টির অধিক।[inside-ad-2]

গ্রন্থাগার হচ্ছে সভ্যতার বাহন। সভ্যতা টিকিয়ে রাখতে হলে গ্রন্থাগারগুলোকে টিকিয়ে রাখতে হবে। প্রতিটি পরিবারে একটি করে গ্রন্থাগার থাকা জরুরি। যে পরিবারে গ্রন্থাগার থাকে সে পরিবারের কোনো সদস্য জঙ্গিবাদ ও অসামাজিক কাজে জড়িত হতে পারেন না । শিক্ষার্থী ও যুবসমাজকে যদি আমরা বইয়ের মধ্যে ডুবিয়ে দিতে পারি, জ্ঞানের রাজ্যে পৌঁছে দিতে পারি, তাহলে তাদের আত্ম পরিশুদ্ধ হবে, তারা কোনো ধরনের অপকর্মে জড়াবেন না। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, ‘এখানে ভাষা চুপ করিয়া আছে, মানবাত্মার অমর আলোক কালো অক্ষরের শৃঙ্খলে বাধা পড়িয়া আছে। বই হচ্ছে অতীত আর বর্তমানের মধ্যে বেঁধে দেয়া সেতু।’ ভারতের রাষ্ট্রপতি এপিজে আবদুল কালাম বলেন, ‘একটি বই হচ্ছে একশটি স্কুলের সমান।’ অস্কার ওয়াইল্ড বলেন, ‘একজন মানুষ ভবিষ্যতে কী হবে তা অন্য কিছু দিয়ে বোঝা না গেলেও তার পড়া বইয়ের ধরন দেখে তা অনেকাংশে বোঝা যায়।’ তাই, সমৃদ্ধ জাতি গঠনে গ্রন্থাগার আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করে।

লেখক: কবি ও প্রাবন্ধিক

জনপ্রিয়