ঢাকা বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ , ২৯ মাঘ ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

দলান্ধতা: সত্যের সৈনিক, নাকি সুবিধাবাদী

মতামত

রাজু আহমেদ, আমাদের বার্তা

প্রকাশিত: ০৮:৩০, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সর্বশেষ

দলান্ধতা: সত্যের সৈনিক, নাকি সুবিধাবাদী

দলকানা ও দলদাস। এরা নির্দিষ্ট কোনো মতবাদে অন্ধ কিংবা ব্যক্তিপূজারি। অথচ পরিচয়ে লিখে রাখেন কবি, লেখক কিংবা সাহিত্যিক। তাদের জন্য পরামর্শ এসব পাল্টান, পাল্টানো উচিত। নিজের রাজনৈতিক পরিচয় স্পষ্ট করে জানানো দরকার। বন্ধ করা দরকার অপতথ্য ও গুজব। কবিতায় আপনার ছদ্মবেশ কিন্তু আপনি তো নির্দিষ্ট দলের নেতা হতে এসেছেন। দলের প্রচারক সেজেছেন মুখোশে। অথচ কবি-সাহিত্যিকরা অন্ধভাবে কোনো দলের কবি-লেখক হতে পারে না। কবিরা হবেন নিরপেক্ষ। দেখবেন সামগ্রিক সত্য। লেখকরা হবেন সত্যের দূত। দাঁড়াবেন মিথ্যার বিপক্ষে। আজীবন সংগ্রাম করবেন সুন্দরের জন্য। দৃষ্টিতে থাকবে নান্দনিকতা। ছন্দে ফুটিয়ে তুলবেন দুঃখ-দুর্দশা। কায়েম করবেন সমতা।

অথচ অ-কবিরা একেকটি রাজনৈতিক দলের পতাকা নিয়ে দাঁড়াচ্ছেন। অথচ স্পষ্ট পক্ষপাত নিয়ে করছেন ব্যক্তির দালালি। বলছেন নির্জলা মিথ্যা কথা। কবির কবিতায় অসত্যের পূজোর গন্ধ। আংশিক সত্য বলে কবি হওয়া যায় না। ভাঁড় হওয়া যায়। যারা দলের দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন। প্লট-ফ্ল্যাট উপহার পাবেন। মতাদর্শের মন্দির থেকে বিভিন্ন পদক-পুরস্কার পেয়ে ঘর ভরে ফেলবেন। অথচ অভিনেতারাও দলান্ধ হতে পারেন না। তারা সত্যের কোলে দাঁড়িয়ে মিথ্যার বিরুদ্ধে মানুষকে সজাগ করবেন। অথচ করছেন কী? চারদিকে দেখছি কী?

কারো দলপ্রীতি, মতবাদ প্রীতি থাকতে পারে। কিন্তু তিনি যখন কবি হয়ে উঠবেন তখন তাকে হতে হবে সম্যক সত্যের ধারক। তিনি আংশিক সত্য প্রকাশ করে নিজের স্বার্থের থলে ভরলে তাকে কবি-লেখক বলা ও ভাবা যাবে না। যারা প্রকৃত কবি, যারা সত্যিকারের লেখক তারা সবার বন্ধু, সবার শত্রু। তাদেরকে কেউ পর মনে করে না আবার কেউ আপনও ভাববে না। মতবাদের এই লড়াইয়ে তারা সর্বজনীন সত্যের প্রতীক হয়ে ওঠেন। প্রার্থনা করি, কবি-সাহিত্যিকরা কারো ব্যক্তিগত বা দলে সম্পদ না হোক। তারা রাষ্ট্রের সম্পদ হয়ে উঠুক। অথচ আশাভঙ্গের বিষাদে বারবার হতাশ হতে হয়। কেউ কথা রাখে না।

বাজারে কবিতার বই বাড়ছে, উপন্যাসে লাইব্রেরি ঠাসা অথচ দেশে প্রকৃত কবি-সাহিত্যিকের সংখ্যা দিন দিন কমছে। কবিদের সর্বজনীনতা নেই বললেই চলে। হাতেগোনা দু-চারজন দলমত সিলসিলার ঊর্ধ্বে রেখে যাদেরকে ভক্তি করা যায়। বাকিরা রাজনৈতিক দলগুলোর পাণ্ডার ভূমিকায়। বিপক্ষ রাজনৈতিক মতবাদকে কুপোকাত করতে রচনা করছেন গালিময় পংক্তি। অথচ একই কিসিমের রোগে যখন পক্ষ দল আক্রান্ত তখন নিজের পরিচয়ের বিপক্ষে তার যুদ্ধ নেই, করেন না সামান্য প্রতিবাদও। যেনো তার নিশ্চুপ এক ঘোরের মধ্যে। যে কবি-সাহিত্যিকরা একচোখা, বর্ণান্ধের মতো দলান্ধ তাদের দ্বারা সত্যের প্রচার ও প্রতিষ্ঠার কথা ভাবা যায় না। আশা করাও বোকামি। যা আপনি/আমি রোজ করে হৃদয়ে ব্যথা পাই।

কবি-সাহিত্যিকদের রাজনৈতিক মেরূকরণ অতীতেও ছিলো কিন্তু এখন সেটা আরো নগ্নতরও। যারাই সভার নেতা তারাই সবার কবি হতে চায়! নিজের রাজনৈতিক পছন্দের ঊর্ধ্বে উঠে যারা সত্য প্রকাশ করতে অপারগ তাদেরকে রাজনৈতিক নেতা-কর্মী বলা যায় কিন্তু কবি-লেখক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া ঠিক নয়। যে কবি-সাহিত্যিক রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট তাদের কবিতা-গল্প শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার খাতায় লেখা রচনার মতো। তাতে দুটো নম্বর দেয়া যায় কিন্তু কালোত্তীর্ণ করা যায় না। কবি-সাহিত্যিকরা যতোদিন আদর্শিক প্রাণ সঞ্চারক হিসেবে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করতে না পারবেন ততোদিন সর্বজনীন হবেন না। হওয়ার সুযোগ নেই। একজন কবির মধ্যে প্রশংসা, সমালোচনা ও নিন্দার গুণ সমানভাবেই থাকতে হবে। তাকে দেখতে হবে সার্বিক এবং চিন্তা করতে হবে বৃত্তের বাইরে গিয়ে। আজ-কাল পরিচিত-অপরিচিতদের কজনে এমনটা করে?

লেখক: প্রাবন্ধিক  

(মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন)

জনপ্রিয়