ঢাকা শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ , ৯ ফাল্গুন ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

প্রসাধনী পণ্যে সরকারি উপেক্ষা

মতামত

মনোয়ার হোসেন, আমাদের বার্তা

প্রকাশিত: ০৭:০০, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সর্বশেষ

প্রসাধনী পণ্যে সরকারি উপেক্ষা

কোনটা আসল আর কোনটা নকল তা বুঝতে না পেরে ভোক্তারা ‘কসমেটিক’ ‘হোমকেয়ার’ এবং “স্কীনকেয়ার” পণ্য সরল বিশ্বাসে উচ্চমূল্যে একরকম নিয়মিতভাবেই কিনছেন। ক্রেতাদের মধ্যে অনেকেই স্বাস্থ্য সচেতন, কিন্তু তাদের পক্ষেও আসল এবং নকল পণ্য চিহ্নিত করা সম্ভব নয়। ফলশ্রুতিতে তাঁরা একদিকে প্রতারিত হচ্ছেন অপরদিকে স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যেও পরছেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মাঝে মধ্যে অভিযান চালিয়ে নকল ও মানহীন প্রসাধনি পণ্য বাজেয়াপ্ত করছেন ঠিকই। কিন্তু অসাধু ব্যবসার বিশাল প্রসারের কাছে এই সমস্ত অভিযান ফলপ্রসু বলে প্রতীয়মান হয় না।

দুইটি সরকারি সংস্থা-ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্স এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) মাঝে মধ্যেই নকল ও মানহীন কসমেটিকস পণ্যের উৎপাদন ও বিক্রয়ের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে পণ্যজব্দ ও বিক্রেতা/প্রস্তুতকারীদের জরিমানা করছে। কিন্তু এসব অভিযান নিয়মিত নয়। জরিমানার পরিমাণ সামান্য, মামলার কথাও জানা যায় না।

অতি সম্প্রতি একটি বিদেশি ব্যান্ডের কসমেটিকস, হোমকেয়ার ও স্কিনকেয়ার পণ্য উৎপাদন এবং বাজারজাত করার অপরাধে শহরের একটি কনজুমার ইন্ডাস্ট্রিজের মালিককে বিএসটিআই এক লাখ টাকা জরিমানা (অনাদায়ে তিন মাসের কারাদণ্ড) দিয়েছে। প্রসাধনী পণ্য নকল ও বাজারজাত করে ইতোপূর্বে সেই মালিক কতো কোটি টাকা মুনাফা করেছে সে বিষয়টি বিবেচনায় আসেনি।

প্রচলিত ধারণা মতে, দেশে কসমেটিকস বা প্রসাধনী পণ্যের বাজার ৩৪ হাজার কোটি টাকার। ক্রেতাদের মধ্যে অতি উচ্চবিত্ত, উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত সকলেই আছেন। প্রথম তিন শ্রেণির ভোক্তারা নামি দামি দোকান থেকে পণ্য কিনে থাকেন। তাঁরা ব্র্যান্ড দেখে কেনেন। কিন্তু তারা আসল না নকল পণ্য কিনছেন তা জানেন না। অনেক সময় বিক্রেতারাও বুঝতে পারেন না কোনটা নকল। আর নিম্নবিত্ত শ্রেণির নারীরা উঁচু ব্র্যান্ড বা মানহীন পণ্যের এবং এগুলোর স্বাস্থ্য ঝুঁকি কতদূর সে সমন্ধে কোনো ধারণা রাখেন না।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, প্রসাধনী বা কসমেটিকসের বাজার প্রায় ৩৪ হাজার কোটি টাকার। প্রায় দশ হাজার কোটি টাকার প্রসাধনী সামগ্রী আমদানি করা হয়। বাকি ২৪ হাজার কোটি টাকার প্রসাধনীর বাজার চোরাকারবারী বা নকল পণ্য উৎপাদনকারীদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। যে সকল নকল পণ্য চোরাচালান হয়ে আসে তার সিংহভাগই ভারতে প্রস্তুত নিম্নমানের। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রস্তুত পণ্য নিম্নমানের তো বটেই, সাধারণ স্বাস্থ্যের প্রতিও হুমকি। বিভিন্ন প্রকারের চর্মরোগ ছাড়াও শ্বাস-প্রশ্বাসের এবং কিডনি সমস্যার কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে। বৈধপথে যে সব পণ্য দেশে প্রবেশ করে সেগুলোর মান নির্ণয়ে কোন প্রকার পরীক্ষা হয় না।

অপরদিকে নামিদামি ব্র্যান্ডের পণ্য যেগুলো ঘোষণা না দিয়ে আনা হয় (অর্থাৎ চোরাইভাবে) আসা পণ্যগুলোর মূল সংগ্রহ উৎস হচ্ছে হংকং, ব্যাংকক, সিঙ্গাপুর, দুবাই, আমেরিকা ও ইউরোপের কয়েকটি দেশ।

চৌত্রিশ হাজার কোটি টাকার বাজার কোন বিবেচনাতেই ছোট নয়। মানুষের ক্রয় ক্ষমতা ও ফ্যাশন সচেতনতা বৃদ্ধির সাথে এই বাজার আরো সম্প্রসারিত হবে। স্থানীয় পণ্য উৎপাদকদের মতে এই বাজার তিন/চার বছরের মধ্যেই উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু এই বাজারের কতখানি অংশ মানসম্পন্ন প্রসাধনী সামগ্রী প্রস্তুতকারীরা দখল করতে পারবে, আর কত অংশ চোরাচালানীর এবং ভেজাল/নকল মানহীন পণ্যের আওতায় যাবে সেটাই প্রশ্ন। এই ক্ষেত্র থেকে সরকার প্রতিবছর কি পরিমাণ রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে তার কোনো সঠিক বিশ্বাসযোগ্য তথ্য জানা যায় না। যা জানা যায় তা হচ্ছে, সরকারের সঠিক সিদ্ধান্তের অভাবে প্রসাধনী সামগ্রীর উৎপাদকরা বিভিন্নভাবে যে পরিমাণ কর দিয়ে বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করেন তার তুলনায় আমদানিকৃত পণ্যের বিক্রয়মূল্য অনেক কম। তাহলে কি অতি সম্ভাবনাময় প্রসাধনী পণ্যের ক্ষেত্র আমদানিকৃত ও মানহীন এবং চোরাচালানের মাধ্যমে আনা পণ্যের দখলে থাকবে? এই প্রশ্ন সংশ্লিষ্ট সকলের।

লেখক: উপদেষ্টা সম্পাদক, আমাদের বার্তা

জনপ্রিয়