ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ , ১৪ ফাল্গুন ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

নামাজে একাগ্রতা অর্জনের উপায়

মতামত

শামসুদ্দীন সাদী, আমাদের বার্তা

প্রকাশিত: ১৫:২২, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সর্বশেষ

নামাজে একাগ্রতা অর্জনের উপায়

ঈমানের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত নামাজ। কোরআন মাজিদের বহু আয়াতে আল্লাহ তায়ালা নামাজের হুকুম দিয়েছেন। নামাজে বিনয় নম্রতা একাগ্রতা ও ধীরস্থিরতা অবলম্বনের পুরষ্কার ঘোষণা করেছেন এবং নামাজে অবহেলাকারীকে তিরস্কার ও নিন্দা করেছেন।

যেমন খুশি নামাজ আদায় করলেই হয় না; নামাজ হতে হয় প্রাণময় ও সৌন্দর্যময়। বিনয় ও আল্লাহমুখিতা নামাজের প্রাণ। নামাজে যিনি যত বেশি আল্লাহমুখী তার নামাজ ততই প্রাণময়। খুশুখুজু ও একাগ্রতা নামাজের সৌন্দর্য। নামাজে যার মনোযোগ যত বেশি তার নামাজ ততই সৌন্দর্যময়।

আল্লাহ তায়ালা ঈমানদারের উত্তম গুণাবলি উল্লেখ করে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন: সেসব মুমিনগণ সফল হয়েছে যারা নিজেদের নামাজে বিনয়ী ও একাগ্র। (সুরা মুমিনূন : ১-২)
এই আয়াতে ঈমানদারের মধ্যে তাদেরকেই সফল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে যারা নামাজে বিনয় ও একাগ্রতা অবলম্বন করে। খুশুখুজু অর্থ অন্তর ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের স্থিরতা। অন্তরের স্থিরতা হল নামাজে দাঁড়িয়ে কেবল আল্লাহর ভয়ে তাঁরই দিকে মনকে নিবিষ্ট রাখা। নামাজে থাকা অবস্থায় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গসমূহকে অনর্থক নড়াচড়া থেকে বিরত রাখা হল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের স্থিরতা।

নামাজে খুশুখুজুর বড় পুরষ্কার হল পার্থিক জগতে ও পরকালে সফলতা লাভ করা এবং বিশেষত জান্নাতুল ফেরদাউসের উত্তরাধিকারী হওয়া। নামাজে বিনয় অবলম্বনকারীদের পুরষ্কার ঘোষণা করে আল্লাহ তায়ালা বলেন : এরূপ লোকেরা উত্তরাধিকারী; যারা জান্নাতুল ফেরদাউসের উত্তরাধিকারী হবে। এবং তথায় অনন্তকাল থাকবে। (সুরা মুমিনূন : ১০-১১) আরেকটি বিষয় হল নামাজের হেফাজত করা। নামাজ পড়া যেমন জরুরি তেমনি নামাজের হেফাজতও জরুরি। আল্লাহ তায়ালা সুরা মুমিনূনের ৯ নং আয়াতে বলেন : এবং যারা নিজেদের নামাজসমূহের হেফাজত করে। (সুরা মুমিনূন : ৯)  এই আয়াতেও সফল মুমিনের পরিচয় আলোচনা করে বলা হয়েছে। যারা নামাজের হেফাজত করে তারাই সফল মুমিন। কিন্তু নামাজ হেফাজত করার অর্থ কী? মুফাসসিরিনে কেরাম বলেছেন, নামাজ হেফাজতের কয়েকটি অর্থ রয়েছে। যথা :

 ১. নামাজের পাবন্দি করা। নিয়মিত প্রতি দিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ গুরুত্ব সহকারে আদায় করা। এক নামাজের পর অন্য নামাজের জন্য অপেক্ষা করা। মনে চাইলে পড়লাম, মনে চাইল পড়লাম না এমনটা না করা। একদিন পড়লাম আরেকদিন বাদ দিলাম; এক ওয়াক্ত পড়লাম আরেক ওয়াক্ত ছেড়ে দিলাম এভাবে নামাজের প্রতি উদাসীনতা প্রকাশ পায়। 

২. নির্ধারিত সময়ে নামাজ পড়া। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পাঁচটি সময় নির্ধারিত রয়েছে। যেমন : সুবহে সাদেক থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত ফজর নামাজের সময়। দ্বি প্রহর থেকে বস্তুর ছায়া দ্বিগুণ হওয়া পর্যন্ত জোহর নামাজের সময়। জোহরের শেষ সময় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আসর নামাজের সময়। এভাবে প্রতিটি নামাজের একটি নির্ধারিত সময় রয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নামাজ আদায় করা। নির্ধারিত সময়ের পরে বা অলসতা করে শেষ সময়ে এসে নামাজ পড়লে নামাজের হেফাজত হয় না।

৩. জামাতে নামাজ আদায় করা। নামাজ হেফাজতের আরেকটি অর্থ হল পুরুষরা জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করা। যদিও হানাফিগণ জামাতে নামাজ আদায় করাকে ওয়াজিবের কাছাকাছি সুন্নতে মুয়াক্কাদা বলেন কিন্তু অনেক ফোকাহায়ে কেরাম জামাতে নামাজ পড়া ওয়াজিব বলেছেন। সুতরাং ঘরে একাকী নামাজ না পড়ে মসজিদে জামাতে নামাজ পড়লে নামাজের হেফাজত হয়।

আমাদের সমাজে এমন বহু মুসলমান রয়েছেন যারা শুক্রবার ছাড়া মসজিদে যান না। অনেকে ঘরে বা অফিসে একাকী নামাজ পড়ি, অনেকে তাও পড়ে না। সপ্তায় একদিন মসজিদে হাজির হয়েই নিজেকে পাক্কা মুসলমান মনে করে। এটি মুসলমানের রীতি না। এগুলো খ্রিস্টানদের রীতি। খ্রিস্টানরা সারা সপ্তায় দুনিয়াদারি নিয়ে ব্যস্ত থাকে, শুধু রবিবারে গির্জায় হাজির হয়। খ্রিস্টানদের থেকে মুসলমানদের মধ্যে এই ব্যাধি সংক্রমিত হয়েছে। সপ্তায় একদিন মসজিদে হাজির হওয়া মুসলমানের স্বভাব হতে পারে না। মুসলমান দৈনিক অন্তত পাঁচ বার আল্লাহর ঘরে হাজির হয়। মুসলমানের উচিত খ্রিস্টানদের রীতি বর্জন করে ইসলামের বিধান অনুসরণ করা।

নবীজির যুগে শুধুমাত্র মুনাফিকরা মসজিদের জামাতে হাজির হত না। মুনাফিকদের অন্তরে যেহেতু ঈমান ছিল না তাই নানা তালবাহানা করে জামাত ছেড়ে দিত। কিন্তু সাহাবায়ে কেরাম কখনো জামাত ছেড়ে একাকী নামাজ পড়তেন না।

একদিন নবীজি (সা.) ইরশাদ করলেন: আমার মনে চায় একদিন আমার যুবকদের কাঠের স্তুপ জমা করার নিদের্শ দেই, অতঃপর নামাজের ইমামতিতে অন্য কাউকে দাঁড় করিয়ে দেই; তাদেরকে বলি, তোমরা নামাজ শুরু করে দাও; তারপর আমি লোকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে দেখি কারা কারা ঘরে বসে আছে, মসজিদে হাজির হয়নি। আমার মনে চায়, যারা মসজিদে জামাতে শামিল হয়নি তাদের বাড়িঘরে আগুন জ্বালিয়ে দেই। (তিরমিজি: ২১৭)

ঈমানদারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ নামাজ। নামাজে যার অবহেলা সে ইসলামের অন্যান্য বিধানও পালন করে না। নামাজে যে যত বেশি যত্নবান সে ইসলামের অন্যান্য বিধান পালনে তত বেশি মনোযোগী। দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর রাযি. স্বীয় শাসনকালে বিভিন্ন অঞ্চলের গভর্নরদের কাছে একটি জরুরি পত্র লিখেন : আমার কাছে তোমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল নামাজ। যে নামাজের হেফাজত করল এবং নামাজের প্রতি যত্নবান হল সে ইসলাম হেফাজত করল। আর যে নামাজকে নষ্ট করল সে অন্যান্য বিধান আরও বেশি পরিমাণে নষ্ট করবে। (মুয়াত্তা মালেক : ৬)

আসুন, নামাজে মনোযোগী হই। যথাযথভাবে নামাজ পালন করি। 

লেখক: শিক্ষক ও অনুবাদক

জনপ্রিয়