
আমরা শিক্ষকরা অবহেলিত বঞ্চিত, আপনি সেটা জানেন। প্রত্যেক শিক্ষকের কাছে একেকটি টাকা খুবই মূল্যবান। কারণ, তাদের বেতন কম।
এই টাকা দিয়ে কোনমতে সংসার ও জীবনটা বাঁচিয়ে রাখতে হচ্ছে। জাতীয়করণ কর্মসূচিতে যারা যাচ্ছেন, সেই মূল্যবান টাকা খরচ করে পরিবারকে বঞ্চিত করে যাচ্ছেন, একটি নতুন দিনের আশায়। সেই দিনে হয়তো অভাবের প্রকোপ প্রবল সমস্যা কবে আসবে।
একটু স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপন করতে পারবে। সুস্থভাবে সুন্দর মস্তিষ্কে ক্লাস নিতে পারবে। আমরা রাজনৈতিক ব্যক্তি নই। আমাদের স্কুল ও ক্লাসই হল আমাদের সবচেয়ে ভালো জায়গা। আমরা ক্লাসরুমের সৈনিক। আমরা দেশ গড়ি, জাতি গড়ার কারিগর। কিন্তু আমাদের সংসার চালাতে পারি না।
দেশের গরিব মানুষ অনেক রকম ভাতা পায়, ন্যায্য মূল্যে জিনিসপত্র কেনার কার্ড পায়, রিলিফ পায়, আমরা সেগুলো গ্রহণ করতে পারি না। কারণ, আমরা শিক্ষক, আমাদের ইগো আমাদেরকে নিতে দেয় না। কিন্তু এই দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতির বাজারে বেশি দাম দিয়ে কিনতে না পেরে না খেয়ে থাকি। আমি নিজেও অনেকদিন মুড়ি খেয়ে দিন পার করেছি। কোন সরকার শিক্ষকদের কিছু দেয় না।
আপনারা তো শাসক হিসেবে আসেননি। আপনারা যদি শিক্ষকদের কিছু দিয়ে যান তারা আজীবন মনে রাখবে। পরে যারা আসবে ক্ষমতায়, তারা কীভাবে চালাবে সেটা আপনাদের দেখার বিষয় নয়। লুটপাট দুর্নীতি করতে হিসাব লাগে না। শিক্ষকদের বেতন দিতে হিসাবের প্রয়োজন হয়। তাই দেশের আজ এই অবস্থা। আমরা সমাজে মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারছি না।
জাতীয়করণ অথবা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রজ্ঞাপন আকারে ব্যবস্থা করে দেন, যা আগামী জুলাই থেকে কার্যকর হবে, তাহলেও হয়তো আমরা আগামী দিনগুলোতে সুস্থভাবে পরিবার-পরিজন নিয়ে এ পেশায় কাজ চালিয়ে নিতে পারবো। আর এই ঈদে দিলে তো আপনাদের জন্য শুভকামনা অফুরন্ত থাকবে। শ্রদ্ধায় ভরে যাবে মন। এজন্য জীবনের রিস্ক নিয়ে শিক্ষকরা জাতীয় প্রেস ক্লাবে যান, কথা বলেন, আপনার দ্বারে দ্বারে ঘোরেন।
সরকার দেশের উন্নয়নের স্বার্থে যেটা করা দরকার সেটা করে না বলেই আপনাদের কাছে যান। হাত পেতে, বুক পেতে শিক্ষক হয়ে মার খান, রক্ত দেন। তাই আমার এ লেখা আপনাদের দৃষ্টিগোচরে আসলে যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন। কম বেতন বলে কাজ করিয়ে নেয়ার জন্য এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, যে অসুস্থ কার্যকলাপ চাপ ও অমানুষিক নির্যাতন চলে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ম্যানেজিং চাপ, শিক্ষা অফিসারদের চাপ, শিক্ষার্থীদের অবাধ্যতা, রাজনীতির দলের কর্মী ব্যাংক, কিশোর গ্যাঙ সংগ্রহের স্থান হল এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। প্রত্যেকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারিকরণ করা হলে সুস্থ স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় থাকবে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে।
দক্ষ মেধাবী ছাত্র বের হবে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকেও। সরকারি সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্ত হবেন দেশের আনাচে-কানাচে থাকা প্রতিটি শিক্ষার্থী। তাই শুধু শিক্ষক নয় শিক্ষার্থী ও দেশের উন্নয়নের স্বার্থে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করার জন্য অনুরোধ করছি। আপনারা একদিন চলে যাবেন কিন্তু কিছু একটা পদচিহ্ন রেখে যান জাতির জন্য এই কামনা করছি।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, চান্দেরচর দারুল ইসলাম আলীম মাদরাসা, কুমিল্লা
(মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন)