
তিনটি কাজ থেকে বিরত থাকার নাম রোজা। অর্থাৎ খাওয়া থেকে বিরত থাকা, পান করা থেকে বিরত থাকা ও স্ত্রী-সঙ্গম থেকে বিরত থাকা। মূলত এই তিনটির কোনো একটির ব্যত্যয় ঘটলে রোজা ভেঙে যায়। কোনোভাবে যদি খাদ্যনালি বা পাকস্থলিতে খাদ্য বা পানীয় পৌঁছে যায় অথবা স্ত্রী-সঙ্গম হয় তাহলে রোজা ভেঙে যাবে। নিচে এর বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
যেসব কারণে কাজা ও কাফফারা দুটিই ওয়াজিব :
(১) রোজা রেখে স্ত্রী সহবাস করলে রোজা ভেঙে যায়, যদিও বীর্যপাত না হয়।
(২) রোজা রেখে ইচ্ছাকৃত পানাহার করলে রোজা ভেঙে যায়।
(৩) বিড়ি সিগারেট হুক্কা পান করলেও রোজা ভেঙে যায়।
এই তিন কারণে রোজা ভেঙে গেলে কাজা ও কাফফারা উভয়টি জরুরি হবে।
যেসব কারণে শুধু কাজা ওয়াজিব :
(১) উজু বা গোসলের সময় রোজার কথা স্মরণ থাকা অবস্থায় অনিচ্ছাকৃতভাবে গলার ভেতর পানি চলে গেলে রোজা ভেঙে যায়।
(২) দাঁত থেকে রক্ত বের হয়ে থুতুর সঙ্গে ভেতরে চলে গেলে রোজা ভেঙে যায়, যদি রক্তের পরিমাণ থুতুর সমান বা বেশি হয়।
(৩) হস্তমৈথুনের মাধ্যমে বীর্যপাত হলে রোজা ভেঙে যায়।
(৪) মুখে বমি চলে আসার পর ইচ্ছাকৃতভাবে গিলে ফেললে রোজা ভেঙে যায়, যদিও তা পরিমাণে অল্প হয়।
(৫) রোজা অবস্থায় মহিলাদের ঋতুস্রাব বা প্রসব-পরবর্তী স্রাব শুরু হলে রোজা ভেঙে যায়।
(৬) নাকে ওষুধ বা পানি দেওয়ার পর তা গলার ভেতরে চলে গেলে রোজা ভেঙে যায়।
(৭) মলদ্বারের ভেতরে ওষুধ বা পানি ইত্যাদি চলে গেলে রোজা ভেঙে যাবে।
(৮) সুবহে সাদিকের পর সাহরির সময় আছে ভেবে পানাহার বা স্ত্রীসঙ্গম করলে রোজা ভেঙে যাবে।
(৯) ইফতারির সময় হয়েছে ভেবে সূর্যাস্তের পূর্বে ইফতার করলে রোজা ভেঙে যাবে।
(১০) ভুলবশত পানাহার করার পর রোজা নষ্ট হয়ে গেছে ভেবে ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার করলে রোজা ভেঙে যাবে।
এই দশ কারণে রোজা ভেঙে গেলে শুধু কাজা ওয়াজিব হয়, কাফফারা ওয়াজিব হয় না।
যেসব কারণে রোজা ভাঙে না
(১) রোজার কথা ভুলে গিয়ে পানাহার করলে রোজা ভাঙে না।
(২) চোখে ওষুধ, ড্রপ, সুরমা ইত্যাদি লাগালে রোজা ভাঙে না।
(৩) অনিচ্ছাকৃত মুখ ভরে বমি হলেও রোজা ভাঙে না।
(৪) বমি মুখে এসে নিজে নিজে ভেতরে চলে গেলে রোজা ভাঙে না।
(৫) শুধু যৌনচিন্তার কারণে বা কাউকে কল্পনার কারণে বীর্যপাত হলে রোজা ভাঙে না।
(৬) মশা-মাছি, কীট-পতঙ্গ ইত্যাদি অনিচ্ছাকৃত পেটের ভেতর ঢুকে গেলে রোজা ভাঙে না।
(৭) ধোঁয়া বা ধুলোবালি অনিচ্ছাকৃতভাবে গলা বা পেটের ভেতর ঢুকে গেলে রোজা ভাঙে না।
(৮) স্বপ্নদোষ হলে রোজা ভাঙে না।
(৯) সুস্থ অবস্থায় রোজার নিয়ত করার পর অজ্ঞান বা অচেতন হয়ে গেলে রোজা ভাঙে না।
(১০) ইনসুলিন বা যেকোনো ইঞ্জেকশন নিলে রোজা ভাঙে না।
লেখক : শিক্ষক ও অনুবাদক