ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫ , ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

সৎ ও দক্ষ, দুর্নীতিবাজ, পক্ষপাতদুষ্ট, সৎ তবে অদক্ষ ৭৩ বিচারপতি কোথায়!

মতামত

সিদ্দিকুর রহমান খান, আমাদের বার্তা

প্রকাশিত: ২৩:৪৫, ১২ মার্চ ২০২৫

সর্বশেষ

সৎ ও দক্ষ, দুর্নীতিবাজ, পক্ষপাতদুষ্ট, সৎ তবে অদক্ষ ৭৩ বিচারপতি কোথায়!

জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী আদালত অঙ্গনের সংস্কার বিষয়ে সর্বশেষ খবর অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগের ১২ জন বিচারপতির মধ্যে একজন পদত্যাগ করেছেন, দুই বিচারপতি হাইকোর্ট বিভাগের স্থায়ী বিচারক হিসেবে নিয়োগ পাননি, অপর দুজন বিচারপতি ইতোমধ্যে অবসর নিয়েছেন। আর বাকি ৭ জন বিচারপতির বিষয়ে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে অনুসন্ধান চলছে।

এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে ১২ বিচারপতির বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে। এ বিষয়ে আরও বলা হয়, যে সাত বিচারপতির বিষয়ে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে অনুসন্ধান চলছে, তাঁদের মধ্যে চারজনের বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ অনুসন্ধান কার্যক্রম চলমান। অন্য তিনজনের বিষয়ে চলছে প্রাথমিক অনুসন্ধান।

গত বছরের অক্টোবরে হাইকোর্ট বিভাগের ১২ জন বিচারপতিকে ছুটিতে পাঠান প্রধান বিচারপতি। তাঁদের মধ্যে গত ৩০ জানুয়ারি একজন বিচারপতি পদত্যাগ করেন। সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ৩০ জানুয়ারি জানানো হয়, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন অবস্থায় হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিন পদত্যাগ করেছেন। রাষ্ট্রপতি বরাবরে প্রধান বিচারপতির মাধ্যমে তিনি পদত্যাগপত্র দিয়েছেন।

সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি প্রকাশিত হালনাগাদ তথ্যে বলা হয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৬(৫)(বি) অনুসরণ করে রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের কয়েকজন বিচারপতির বিষয়ে তদন্তের জন্য সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছে নির্দেশনা পাঠিয়েছেন। সে অনুযায়ী, কাউন্সিল তদন্ত শুরু করবে। এরপর ৩০ জানুয়ারি এক বিচারপতির পদত্যাগের তথ্য এবং ৮ ফেব্রুয়ারি ১২ বিচারপতির বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য জানানো হয়। এই ছিলো নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাতমাসকালে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও প্রতিকারের সর্বশেষ আপডেট।

এবার আমরা যদি দেড়যুগ পেছনে, মানে ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দের জুন মাসে ফিরে যাই, তাহলে মনে পড়তে পারে দৈনিক মানবজমিনসহ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের কথা। ওই সময়কার মানবজমিনের খবর অনুযায়ী, শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থা ৬৭ জন বিচারক সম্পর্কে একটি মূল্যায়ন প্রতিবেদন তৈরি করেছিলো। এ বিষয়টি নিয়ে আদালত অবমাননার একটি পিটিশন দায়ের করা হয়েছিল। তৎকালীন বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক এটি খারিজ করে দিয়ে মন্তব্য করেছিলেন, বিচারকদের নিয়ে এ ধরনের লেখালেখির স্বাধীনতা সংবাদপত্রের থাকা উচিত। ওই গোয়েন্দা প্রতিবেদনে খায়রুল হক সম্পর্কেই লেখা হয়, ‘তিনি প্রচণ্ডভাবে রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট। মতাদর্শগতভাবে আওয়ামী লীগ।’ তাঁর দক্ষতা বা সততা নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন তোলা হয়নি। সাবেক বিতর্কিত প্রধান বিচারপতি সৈয়দ জে আর মোদাচ্ছির হোসেন খায়রুল হকের রিট ক্ষমতা কেড়ে নেন, যা ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে ফিরে পান।

ওই গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আপিল বিভাগের ছয় ও হাইকোর্ট বিভাগের ৬৭ জন বিচারক সম্পর্কে প্রধানত ‘সৎ ও দক্ষ’, ‘দুর্নীতিবাজ’, ‘পক্ষপাতদুষ্ট’, ‘সৎ তবে অদক্ষ’ ইত্যাদি প্রকৃতির মন্তব্য করা হয়। ১৭ জন সম্পর্কে নির্দিষ্টভাবে বলা হয়েছে, এঁরা ‘বিগত সরকারের আমলে দলীয় ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত।’

ওই গোয়েন্দা রিপোর্টেও ৭৩ জনের মধ্যে ৪৪ জনকেই নির্দিষ্টভাবে ‘সৎ’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। শতকরা হিসাবে এটা ৬০ দশমিক ২৭ ভাগ।

প্রতিবেদনটি ছাপা হওয়ার পর ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সুপ্রিম কোর্টসংশ্লিষ্ট মহলের তৈরি হয়। এ বিষয়ে ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দের জুনে আইন আদালত বিষয়ক লেখক ও সাংবাদিক মিজানুর রহমান খান লিখিত প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে পাই, “সীমাবদ্ধতা ও ত্রুটি-বিচ্যুতি সত্ত্বেও বলা চলে মোটামুটি নির্ভরযোগ্য একটি চিত্র এসেছে।” জনাব খান প্রশ্ন তুলেছিলেন, এই প্রতিবেদন কারও বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে চার্জ গঠনের জন্য কতটা সহায়ক? প্রতিবেদনের বরাতে গণমাধ্যমে যা এসেছে তাতে কিন্তু দুর্নীতি ও অনিয়মের সুনির্দিষ্ট তথ্য খুবই অপ্রতুল।”

গোয়েন্দা সূত্রে পাওয়া মানবজমিনে প্রকাশিত প্রতিবেদনে, আপিল বিভাগের দুজনের বিরুদ্ধে যথাক্রমে ‘আসামিপক্ষের কাছ থেকে বিনা অর্থে ইট’ গ্রহণ এবং এক সাবেক প্রধান বিচারপতির পতিত বাড়ি দখল চেষ্টার ‘তথ্য’ রয়েছে। ওই প্রতিবেদনভুক্ত হাইকোর্ট বিভাগের ৬৭ বিচারকের মধ্যে মাত্র তিনজনের বিরুদ্ধে যথাক্রমে ‘ব্যাপক অর্থ লেনদেন’, ‘সাব-রেজিস্ট্রি বদলি বিষয়ে কোটি কোটি টাকা উৎকোচ গ্রহণ’, ‘কম্পিউটার সরবরাহের কাজে স্বজনপ্রীতি’ ধরনের শুধু মন্তব্য রয়েছে। তাও আবার তাঁদের বিচারক হওয়ার আগেকার। দুই বিভাগের অনধিক ১৫ বিচারক ‘দুর্নীতিবাজ’, ‘অসৎ’ বা ‘দুর্নীতির অভিযোগ’ রয়েছে মর্মে উল্লিখিত হয়েছে।

মিজানুর রহমান খান সংবিধানের ৯৫(২)গ অনুচ্ছেদ সচল করার তাগিদ দিয়েছিলেন। ৯৫(২) অনুচ্ছেদের গ দফায় বলা হয়েছে, ‘সুপ্রিম কোর্টের বিচারক পদে নিয়োগ লাভের জন্য আইনের দ্বারা নির্ধারিত অন্যান্য যোগ্যতা না থাকিলে তিনি বিচারক পদে নিয়োগ লাভের যোগ্য হইবেন না।’ অথচ এই আইনটি নেই। জনাব খান আরো মন্তব্য করেন, ‘যে রাষ্ট্র তার সংবিধান অভ্যাসবশত লঙ্ঘন করেই চলে, তারা মহাপ্রলয় কিংবা সুনামির কবলে না পড়লে আর কারা পড়বে?’

‘অযোগ্য’ বিচারক অপসারণের যেকোনো উদ্যোগের আগে ৯৫(২) অনুচ্ছেদটিতে জীবন সঞ্চার করার তাগিদ দিয়েছিলেন জনাব খান। অধ্যাদেশ দিয়ে একটা আইন তৈরির কথা বলেছিলেন।

আশার কথা, চলতি বছরের ৩ নং অধ্যাদেশটি ‘সুপ্র্রীম কোর্টের বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ ২০২৫’, যা ২১ জানুয়ারি জারি হয়।

২০১০ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে মিজানুর রহমান খান লিখেছিলেন, ‘১৭ বিচারকের নয়জনেরই এলএলবিতে তৃতীয় শ্রেণী’ শিরোনামের সারাজাগানো প্রতিবেদন।

বিচারক নিয়োগের অধ্যাদেশ জারির পর আমরা আশা করতেই পারি অমন নিয়োগ আর হবে না। এমন আশা করার এখনই উপযুক্ত সময়।

জনপ্রিয়