ঢাকা সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫ , ২ চৈত্র ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

ঘৃণা-বিদ্বেষের সঙ্গে জন্ম দিচ্ছে বহু প্রশ্নের

মতামত

মোহাম্মদ সাইফুল আলম চৌধুরী , আমাদের বার্তা

প্রকাশিত: ০৮:৩০, ১৬ মার্চ ২০২৫

সর্বশেষ

ঘৃণা-বিদ্বেষের সঙ্গে জন্ম দিচ্ছে বহু প্রশ্নের

‘কোনো কিছু যদি সমাজের অধিকাংশ মানুষের পছন্দসই হয়, তাহলে তা নিয়ে যদি কেউ মৃদুতম আপত্তিও জ্ঞাপন করেন, সেই ব্যক্তির ওপর তারা হাড়ে হাড়ে চটে যান’–শত বছর আগে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালির চরিত্র ও মানসপট নিয়ে কথাটি বলেছিলেন।

শতবছর আগে বললেও তার হাড়ে হাড়ে প্রতিফলন আমরা এখনো দেখতে পাচ্ছি। বিষয়টিকে নীরদচন্দ্র চৌধুরীর ‘আত্মঘাতী বাঙালি’ তত্ত্বের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। নীরদচন্দ্র চৌধুরী তার ‘আত্মঘাতী বাঙালি’ বইতে লিখেছিলেন, বাঙালি নিজের ভালো করতে চায় না। অন্যের মতকে সহ্য করতে না পেরে বাঙালি সবসময়ই তার সম্ভাবনাগুলোকে কাজে না লাগিয়ে শুধু স্বার্থচিন্তা, গোষ্ঠীবিবাদ আর পরস্পরের অনিষ্ট করতেই ব্যস্ত থেকেছে।

মাত্র সাড়ে ছয় মাস আগে যে অভূতপূর্ব ঐক্য ও প্রতিরোধ বাংলাদেশের মানুষ দেখিয়েছিলো, সেটি ইতিহাস তৈরি করেছে। কিন্তু মাত্র কয়েক সপ্তাহ আর মাসের ব্যবধানে সে ঐক্য ও প্রতিরোধ বহু দূরে চলে গেছে। উল্টো দেশের নানা প্রান্তে ব্যাপক হারে অসহিষ্ণু ও ঘৃণা-বিদ্বেষের ঘটনা এতোটাই বেশি ঘটছে, যেটি শুধু উদ্বেগ বাড়াচ্ছে না, সঙ্গে বহু প্রশ্নেরও জন্ম দিচ্ছে। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মন্দির, মাজারসহ ধর্মীয় উপাসনালয়ে হামলা, ভাঙচুর, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থাপনার ওপর হামলা, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের জানমালের ওপর আক্রমণ যেনো নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির সঙ্গে সঙ্গে মবোক্রেসির বাড়বাড়ন্ত আমরা লক্ষ্য করছি। সমাজের সব স্তরে চরম অসহিষ্ণু ও ঘৃণা-বিদ্বেষমূলক আচরণের প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন গ্রুপ ও গোষ্ঠীগুলো এতোটা অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে যে, কথা বলার ক্ষেত্রে তর্কাতর্কি, তর্কাতর্কি থেকে কলহ-বিবাদ স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিমিষেই কলহ রূপ নিচ্ছে মারামারিতে, মারামারি পরিণত হচ্ছে খুনোখুনিতে। সমাজের উঁচু শ্রেণি থেকে নিম্ন পর্যায় পর্যন্ত একই চিত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, এই প্রশ্ন উত্থাপন করা অমূলক হবে না–ভ্রাতৃত্ব, সৌহার্দ্য, মমতা ও ভালোবাসার মতো মানবিক গুণগুলো কি তাহলে আমাদের মধ্য থেকে লোপ পেয়েছে? পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সহমর্মিতা ও সম্মান প্রদর্শনের বিষয়গুলো যেনো বাঙালির অভিধান থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।

গত সাড়ে ছয় মাসে অসহিষ্ণু ও বিদ্বেষমূলক এবং প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার এতো উদাহরণ বাংলাদেশে দেখা গেছে, যেগুলো তুলে ধরলে দিস্তার পর দিস্তা কাগজ শেষ হয়ে যাবে। আদালত পাড়া থেকে শুরু করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তিগত বাড়ি-ঘর কোনো কিছুই মবোক্রেসির আক্রমণ থেকে বাদ যায়নি। আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার এতো অভ্যাস এতোটা স্বাভাবিক ঘটনা মাৎস্যন্যায় যুগের পর আর দেখা যায়নি। আবার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে মানুষ আইন নিজের হাতে তুলে নিয়েছে। গণপিটুনির অনেকগুলো ঘটনা ঘটেছে গত কয়েক মাসে। বেড়েছে ছিনতাই, খুন ও ডাকাতি। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হলো নারীর ওপর নিপীড়নের মাত্রাও বেড়েছে। একজন নারী কেমন পোশাক পরবেন, তিনি কোথায় কী করবেন তা নিয়ে ‘উগ্রবাদীরা’ প্রকাশ্যে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন এবং সেগুলো না মানলে নারীদের আক্রমণ করা হচ্ছে।

আবার দাবি আদায়ের জন্য মানুষ যখন-তখন রাজপথে নামছে, জনদুর্ভোগ তৈরি করছে এবং কখনো কখনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর আক্রমণ করছে। মোটাদাগে সমাজের সব স্তরে মানুষের মধ্যে চরম অসহিষ্ণুতার বহিঃপ্রকাশ দেখা যাচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ার মানবাধিকার কর্মীদের সংগঠন সাউথ এশিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটস (সাহার)-এর তথ্য মতে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের আগস্ট থেকে ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি পর্যন্ত গণপিটুনিতে বাংলাদেশে ১২১ জন নিহত হয়েছেন। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)-এর হিসাব অনুযায়ী, ২০২০ থেকে ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত পাঁচ বছরের মধ্যে দেশে গণপিটুনিতে সর্বোচ্চ নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে গত বছর। ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দে গণপিটুনিতে নিহত হন ১৪৬ জন, যা আগের বছরের প্রায় তিন গুণ। ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে নিহত হয়েছিলেন ৫১ জন।

গত ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান বাংলাদেশের সামনে প্রকৃতপক্ষে শত ফুল ফোটার একটা সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র তৈরি করেছিলো। কিন্তু সে সম্ভাবনা নস্যাৎ হতে চলেছে মবোক্রেসির উন্মত্ত প্রকাশের মধ্য দিয়ে, জনগোষ্ঠীর একটি অংশের অসহিষ্ণু ও ঘৃণা-বিদ্বেষমূলক আচরণে। কেউ কেউ পরিস্থিতির ভয়াবহতা তুলে ধরতে ‘মগের মুল্লুক’ প্রবাদের প্যারোডি করে ‘মবের মুল্লুক’ শব্দবন্ধও ব্যবহার করছেন। অধ্যাপক ড. আহমদ শরীফ লিখেছিলেন, পঞ্চদশ শতকের প্রথমার্ধে বাংলায় ইন্দো-চীন নিবাসী মগ জাতি এসে সবকিছু লুটপাট করে নিয়ে যেতো, সৃষ্টি করতো নৈরাজ্য। গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটল গণতন্ত্রের বিপরীতের ওখলোক্রেসির ধারণা তুলে ধরেছেন। গণতন্ত্র হলো, জনগণের শাসন বা সাধারণের ইচ্ছের প্রতিফলনের মাধ্যমে রাজনৈতিক ক্ষমতাকে বৈধতা দেয়া। আর ওখলোক্রেসি হলো উচ্ছৃংখল বা উন্মত্ত জনতার বিচার, যেখানে একদল উচ্ছৃঙ্খল মানুষ আতঙ্ক তৈরি করে সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদী কর্তৃত্ব ও দাপটকে প্রতিষ্ঠিত করে। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে যা ঘটছে তার সাথে নাৎসি জার্মানিতে ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দে যা ঘটেছিলো, তার মিল খুঁজে পাওয়া যায়। এটিকে বলা হয়, ক্রিস্টালনাখট, যেটি রাষ্ট্রসমর্থিত মব আক্রমণের উদাহরণ তুলে ধরতে ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশেও গত সাত মাসে, বিশেষ করে গত ৫ ফেব্রুয়ারির পর থেকে অনেক জায়গায় রাষ্ট্রীয় সহযোগিতায় ও কখনো কখনো রাষ্ট্রের নীরবতায় প্রতিপক্ষের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাড়ি-ঘর ও উপসানলয়ের ওপর হামলা এবং আক্রমণ হতে আমরা দেখছি। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায়, কিংবা সরকারের নীরবতায় মবোক্রেসির বিস্তার ঘটলে তা শুধু নাগরিক নিরাপত্তা, সামাজিক শান্তিহানির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং শাসনের স্থিতিশীলতার জন্যও প্রচণ্ড হুমকি ডেকে আনে। রাষ্ট্র ও সরকারের নাকের ডগায় সংঘবদ্ধ কিছু মানুষের নিজের হাতে আইন তুলে যা খুশি করার প্রবণতা সুশাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও চ্যালেঞ্জের শামিল।

প্রশ্ন হলো–মানুষের মধ্যে এই অসহিষ্ণু এবং ঘৃণা-বিদ্বেষমূলক আচরণের বাড়বাড়ন্ত কেনো? বর্তমান বাংলাদেশের পরিস্থিতির সঙ্গে আমরা দার্শনিক ফ্রয়েডের সেই বাস্তবতার মিল খুঁজে পাই, যেখানে সুপার ইগো হারিয়ে মানুষ কেবল বেসিক ইন্সটিংক্টের দিকে ধাবিত হচ্ছে। তার ভেতর থেকে কলুষিত মেজাজের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ ঘটছে। সরকার ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্বলতা এবং ব্যর্থতা, শাসনব্যবস্থার শৈথিল্যের সুযোগে সমাজের নানা পর্যায়ে মানুষ আইন ও বিচার নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে। গোষ্ঠীবদ্ধ হয়ে প্রতিপক্ষের ওপর আক্রমণের প্রবণতার মধ্যে স্ব স্ব ক্ষেত্রে ‘সংখ্যাগরিষ্ঠের’ স্বৈরাচারী মনোভাব আমরা দেখতে পাচ্ছি। সংখ্যা ও শক্তির জোরে মানুষ উত্তেজনা সৃষ্টি করে, আইনের লোকের সামনে আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রতিপক্ষকে দমন করছে। ঘটছে সাংবিধানিক বিচারবিহীন হত্যাকাণ্ড, যেটি মানুষের চরম অসহিষ্ণু আচরণের সর্বোচ্চ মাত্রার বহিঃপ্রকাশ। এটি দেশের সার্বিক আইন পরিস্থিতির দুর্বলতাকে তুলে ধরে। এর ফলে গণতন্ত্র, আইনের শাসন, পরমতসহিষ্ণুতা, মানবাধিকার, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ধারণাগুলোকে বিরাট প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। রাষ্ট্রের কোনো কিছুই সামগ্রিক অবস্থার বাইরে নয়। সুশাসনের ঘাটতি থাকলে সমাজে ও রাষ্ট্রযন্ত্রে নানা উপসর্গ দেখা দেয়। সমাজ নষ্ট হয়ে যায়।

জাতি হিসেবে বাঙালি দিনে দিনে চরম অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে। শুধু রাজনৈতিক পর্যায়ে নয়; এ অসহিষ্ণুতা সামাজিক, ব্যক্তিগত এমনকি পারিবারিক পর্যায়েও দেখা দিচ্ছে। আগে রাজনীতির পাড়ায় বারো মতের মানুষ পাশাপাশি থাকলেও সেটি রণক্ষেত্র হতো না। কিন্তু এখন রাজনীতির সাথে সামাজিক পাড়ায়ও উত্তাপ এবং উচ্ছৃঙ্খলতা দৃষ্টিকটুভাবে বেড়েছে। কেউ কাউকে সহ্য করতে পারছি না। নিজের বাকস্বাধীনতার জন্য আমরা যতোটা সোচ্চার, অন্যের বাকস্বাধীনতা দমনে আবার ততটাই খড়গহস্ত। ভিন্নমতকে ধারণ করার মতো মানসিকতা আমাদের নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। শারীরিক আক্রমণ করতে না পারলে সামাজিক মাধ্যমে ট্রায়াল ও কনভিকশনের ব্যবস্থা করছি। নিজ নিজ ক্ষেত্রে স্বেচ্চাচারিতা বা ক্ষমতার অপব্যবহারে সর্বদা ব্যস্ত থাকছি। এ দৌড়ে গৃহকর্মী থেকে শুরু করে মনিব, পাইক-পেয়াদা, সৈন্য-সামন্ত, ছাত্র-শিক্ষক, ডাক্তার-উকিল, নাজির-উজির কিংবা রাজা-বাদশাহ কেউ পিছিয়ে নেই। মানুষকে সুখী করার পেছনে রাষ্ট্রের ভূমিকা যেমন রয়েছে, ঠিক তেমনি একটি দেশের নিজস্ব সংস্কৃতিতেও থাকতে পারে সুখী হওয়ার উপাদান। বাঙালির মধ্যে এই উপাদানগুলো ছিলো। কারণ, বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো বহুত্ববাদের ভিতের ওপর। এখানে বহু মতের প্রতিফলন বরাবরই ঘটেছিলো। কিন্তু পরিস্থিতি ভয়ানকভাবে পাল্টে গেছে।

জুলাই-আগস্টে আমাদের যে আবেগ ছিলো, সে আবেগকে তাড়িত করছি রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করার দিকে। আবেগের একটা বেগ থাকে। বেগের ধাক্কা দেয়ার ক্ষমতা থাকে। সেই ধাক্কায় পাঁচিলের মতো শক্ত জিনিসও ধসে পড়ে। তাই আবেগকে নিয়ন্ত্রণে না রাখলে, একটি জাতিও ভেঙে পড়ে। মনে রাখতে হবে, এক বোতল মধুর সঙ্গে আরেক বোতল বিষ মেশালে দুই বোতল মধু হয় না, তা বিষ-ই হয়। ভালোকে খারাপের দিকে নেয়ার ক্ষেত্রে মন্দের যে শক্তি, তাতে লাগাম টেনে ধরতে না পারলে অনেক বড় বিপর্যয় নেমে আসবে। একটু গভীরে ভাবলে দেখা যাবে, মানুষকে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য যেসব ব্যবস্থা বা প্রতিষ্ঠান দরকার, সেগুলো ভেঙে পড়ছে। যেমন, পরিবার, শিক্ষাব্যবস্থা, সমাজব্যবস্থা, রাজনৈতিক ব্যবস্থা, বিচারব্যবস্থা ও প্রশাসনিক কাঠামো প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ছে। এই প্রশ্নবিদ্ধ ব্যবস্থায় দূষিত মানুষ তৈরি হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ছে শিশুদের ওপর। সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো যোগ্যতা, কর্মনিষ্ঠা, ন্যায়পরায়ণতা, ন্যায্যতা ও সুশাসনের বদলে চাটুকারিতা, অন্যায্য ও দুর্বৃত্তায়নের শিক্ষা দিচ্ছে। ফলে মূল্যবোধের শিক্ষার পরিবর্তে চতুরতা, হিংসা, বিদ্বেষ, রেষারেষি এসবই শিশুরা বেশি শিখছে। আমাদের শিশুরা এখন বড়দের যে নিষ্ঠুরতা দেখছে তাতে তাদের মনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এতে তাদের মন ও মনন থেকে মানবতাবোধ, মমত্ববোধ লোপ পাচ্ছে। সেজন্য এ অবস্থা চলতে থাকলে মবোক্রেসি ভবিষ্যতে আরো ভয়ঙ্কর পরিণতি ডেবে আনবে।

অপরাধশূন্য রাষ্ট্র নেই, সমাজও নেই। সেজন্য রাষ্ট্রে নানা রকম সমাজবিরোধী শক্তির উপদ্রব ঘটতে পারে। কিন্তু ব্যক্তির অপরাধ আর সংঘবদ্ধ অপরাধকে রাষ্ট্র কখনোই এক চোখে দেখতে পারে না। একই রকম সংঘবদ্ধ অপরাধ যখন বারবার হতে থাকে, তখন তাতে সেই জনগোষ্ঠীর চরিত্র-বৈশিষ্ট্যের প্রকাশ ঘটে। সংঘবদ্ধ অপরাধের লাগাম টেনে না ধরলে মানুষের ধৈর্যচ্যুতি ঘটবেই। পরিস্থিতি তলানিতে ঠেকেছে। তাই এখনই সময় ঘুরে দাঁড়ানোর। এখন ঘুরে দাঁড়াতে না পারলে দেশে অস্থিরতা আরো বাড়বে। মানুষ আরো বেশি অসহিষ্ণু হবে। প্রত্যেক ব্যক্তির বিশ্বাস ও মর্যাদা রাষ্ট্রের কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ। অনুভূতি প্রত্যেকেরই আছে, কারো অনুভূতিতে আঘাতই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার রাষ্ট্রকেই সংরক্ষণ করতে হবে। তা করতে না পারলে শেষ পর্যন্ত কবি কায়কোবাদের মতো আফসোস করে বলতে হবে–‘যে ভুলে তোমারে ভুলে—হীরা ফেলে কাচ তুলে/ ভিখারি সেজেছি আমি/ আমার সে ভুল প্রভু তুমি ভেঙে দাও/ প্রভু ভুল ভেঙে দাও।’

লেখক: শিক্ষক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

 

জনপ্রিয়