
পবিত্র কোরআনুল কারিমে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন : হে মুমিনগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর; যেনো তোমরা মুত্তাকি হতে পারো। (সুরা আল বাকারা: ১৮৩) পবিত্র রমজান এলে আমরা সবাই রোজা রাখি, কিন্তু রোজা যে উদ্দেশ্যে ফরজ করা হয়েছে আমরা কি তা অর্জন করতে পারছি? অথবা আমাদের রোজা কি সে রকম হচ্ছে যা আমাদেরকে মুত্তাকি হতে সাহায্য করে? রোজার হকিকত সম্পর্কে আমরা অনেকেই উদাসীন। অথচ রোজার উদ্দেশ্য লাভের জন্য প্রয়োজন নিজের মধ্যে সংযম সৃষ্টি করা। এই উদ্দেশ্য অর্জনে কিছু করণীয় মেনে চলা আমাদের জন্য জরুরি। তাহলে রোজা আমাদেরকে মুক্তাকি হতে সাহায্য করবে। আমরা জানি রোজার আরবি শব্দ সাউম। সাউম অর্থ সংযম। ছয়টি বিষয়ে নিজেকে সংযত করলে রোজার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য তথা তাকওয়া অর্জন করা আমাদের জন্য সহজ হবে।
১. চক্ষু সংযত রাখা। নবীজি (সা.) ইরশাদ করেন, ‘দৃষ্টি শয়তানের তীরগুলোর একটি তীর। যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে তাকে হেফাজত করে, আল্লাহপাক তাকে ঈমানের বিশেষ নুর দান করেন, যার স্বাদ সে অন্তরে অনুভব করে।' দৃষ্টির হেফাজত করা সর্বাবস্থায় জরুরি। বিশেষত রোজা অবস্থায় তার প্রতি আরো বেশি যত্নবান হওয়া দরকার। বেগানা নারীর প্রতি দৃষ্টি দিব না। নাটক সিনেমা দেখব না।
২. জিহ্বা সংযত রাখা। মিথ্যা বলা, চোগলখুরি করা, বাজে কথা বলা, গিবত করা, শেকায়েত করা, কটুবাক্য উচ্চারণ করা ইত্যাদি থেকে জিহ্বাকে সংযত রাখব। বোখারি শরিফে বর্ণিত আছে, রোজা মানুষের জন্য ঢালস্বরূপ। কাজেই রোজা অবস্থায় জিহ্বাকে অশ্লীল আলাপ থেকে বিরত রাখব। কেউ ঝগড়া করতে চাইলে আমি ঝগড়ায় ঝড়াব না।
৩. কান সংযত রাখা। অশ্লীল গানবাদ্য ইত্যাদি শোনব না। গিতব শোনব না। মিথ্যা কথা শোনব না। মিথ্যা শোনা বিশেষত ইহুদিদের বৈশিষ্ট্য। কোরআন মাজিদে আল্লাহ তায়ালা তাদের কুৎসা করে বলেন : তারা অতি আগ্রহের সঙ্গে মিথ্যা শোনে। (সুরা মায়িদাহ: ৪২) নবীজি (সা.) বলেন, গিবতকারী ও শ্রোতা উভয়ই পাপের মধ্যে শামিল।
৪. শরীরের সকল অঙ্গকে পাপাচার থেকে সংযত রাখা। যেমন হাতকে নিষিদ্ধ বস্তু স্পর্শ করা থেকে বিরত রাখা, পায়ে হেঁটে অবৈধ স্থানে না যাওয়া, পেটকে হারাম এমনকি সন্দেহজনক বস্তু খাওয়া থেকেও রক্ষা করা। যে ব্যক্তি রোজা রেখে হারাম বস্তু দিয়ে ইফতার করে, সে যেন কোনো রোগের জন্য ওষুধ ব্যবহার করল; কিন্তু তাতে বিষও মিশিয়ে দিল। ফলে ওষুধের উপকার তো হবেই না বরং বিষ তার মৃত্যু অনিবার্য করে তোলবে।
৫. ইফতারের সময় হালাল খাদ্য দিয়ে হলেও পেট পূর্ণ করে না খাওয়া। কেননা এতে রোজার উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়। রোজার উদ্দেশ্যই হলো কামভাব ও পশুপ্রবৃত্তিকে দমন করা এবং নুরানি শক্তিকে বর্ধিত করা। ইমাম গাযালী (রহ.) বলেন, রোজার উদ্দেশ্য হলো শয়তান এবং নফসকে দমন করা; কিন্তু ইফতারের সময় যদি বেশি খায়, তবে এর উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়। এতে আমরা শুধু আহারের সময় পরিবর্তন করলাম।
৬. রোজা শেষ পর্যন্ত কবুল হয় কি না, এই ভয়ে সব সময় কম্পিত থাকা এবং কবুল হওয়ার জন্য আল্লাহর দরবারে নিরন্তর মিনতিমাখা দোয়া করতে থাকা।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে পবিত্র রমজানে পরিপূর্ণ সংযম হাসিলের তাওফিক দান করুন। আমিন।
মুহাদ্দিস : মাদরাসাতুল মুমিনাত, উত্তরা ঢাকা।