
অন্তর্বর্তী সরকারের কনসালটেশন কমিটি প্রাথমিক শিক্ষা তথা শিক্ষক কর্মচারীদের চ্যালেঞ্জ দূরীকরণের বিষয়গুলো পাশ কাটিয়ে প্রতিবেদন দাখিল করেছে, যা প্রাথমিক শিক্ষার সঙ্গে জড়িত জনবল, রাজনৈতিক দল, সুধী সমাজসহ কারো আশার প্রতিফলন ঘটেনি। অনেকটা বিগত সরকারের নীলনকশা মোতাবেক প্রাথমিক শিক্ষার অস্তিত্ব বিপন্ন করার ষড়যন্ত্রের প্রতিবেদন। বাস্তবে কনসালটেশন কমিটির আহ্বায়কসহ বেশিরভাগ সদস্য এনজিও কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত। তারা ৪৪টি শিক্ষাকর্মীসহ অনেকের সঙ্গে আলোচনা করেছেন।
অথচ তাদের প্রতিবেদন বেশিরভাগেরই মতামত উপেক্ষিত হয়েছে। প্রতিবেদনে প্রাথমিক শিক্ষা সরকারি, এ ভাবনা কে দূরে রেখে এনজিও ভাবনা ফুটে উঠেছে। বিগত সেনাসমর্থিত সরকারের সময়ে প্রাথমিক গণশিক্ষা সম্মানিত রাশেদা কে চৌধুরী উপদেষ্টা ছিলেন। তখন ব্র্যাকের অধীনে প্রাথমিক শিক্ষা ন্যস্ত করার আদেশ জারি করেছিলেন। সে সময় ব্র্যাকের পক্ষে নেতৃত্ব দেন, কনসালটেশন কমিটির আহ্বায়ক ড. মনজুর আহমদ, ইমেরিটাস অধ্যাপক ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়।
বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছিলাম আমি। সারাদেশের ঐক্যবদ্ধ সংগঠন বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির নেতৃত্বে চলছে, প্রতিবাদ ও সংগ্রাম। সে সময় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আমাদের মানববন্ধনকে দাঁড়াতে দেয়নি, সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আইন শৃঙ্খলাবাহিনী। তখনকার সময়ে আজকের মতো ফেসবুক ও মিডিয়া ছিলো না। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি কম্পোজ করে পত্রিকার অফিসগুলোতে পৌঁছে দিতে হতো।
সে সময় একমাত্র বেসরকারি টেলিভিশন একুশে টেলিভিশন শিক্ষকদের আন্দোলনের মাঝে রাত বারোটায় এক টকশোতে অংশগ্রহণ করেছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক কাবেরী গায়েন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, আজকের কনসালটেশন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মনজুর আহমদ। তখন আমি একুশে টিভির মাধ্যমে দেশবাসীসহ সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলাম, ব্র্যাকের তত্ত্বাবধানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ন্যস্ত করা হলে, জাতীয়করণকৃত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে। সে ষড়যন্ত্রের বহিঃপ্রকাশ আজকের কনসালটেশন কমিটির প্রতিবেদন। এ প্রেক্ষাপটে প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নের চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোকপাত করছি।
স্বাধীনতার দীর্ঘসময় থেকে প্রাইমারি শিক্ষা প্রায় মরি-মরি। বর্তমানে প্রাথমিকের শিক্ষকতা পেশায় উচ্চশিক্ষিত জনবলের সমাহার। উচ্চ শিক্ষিতরা এ পেশায় এলেও মেধাবীদের এ পেশায় আকৃষ্ট বা ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এর অন্যতম চ্যালেঞ্জ সমযোগ্যতাসম্পন্ন ও সমকাজের অন্যান্য সরকারি কর্মচারী বা শিক্ষকদের সঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতনের বিশাল বৈষম্য। তাদের মর্যাদা থার্ড ক্লাস। অন্যদের মর্যাদা সেকেন্ড ক্লাস। কিছু মেধাবী ক্ষণিকের জন্য প্রাথমিকের শিক্ষক হয়ে এলেও তারা বিসিএসসহ সুবিধাজনক পেশায় চলে যান।
ফলে প্রাথমিকে শিক্ষা হয়ে যায় মেধাবীশূন্য। অপরদিকে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতার ফলে অবসর, মৃত্যু, প্রশিক্ষণ, অন্য পেশায় চলে যাওয়াসহ নানা ধরনের ছুটি বা নানা কারণে প্রাথমিক শিক্ষার বেহাল দশা পরিলক্ষিত হচ্ছে। এদিকে ২ বা ৩ বছর পরপর শিক্ষক নিয়োগ হয়। অপরদিকে, বিদ্যালয়ে শিক্ষক শূন্য হয়। এ অবস্থা স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫৪ বছর ধরে চলে আসছে। এ অবস্থা অনেকটা ‘নদীর এ কূল ভাঙে ও কূল গড়ে’- এইতো নদীর খেলা, গানের মতো প্রাথমিক শিক্ষকদের নিয়োগ প্রক্রিয়া। প্রাথমিক শিক্ষার আরেকটি চ্যালেঞ্জ হলো-তৃণমূল থেকে উচ্চ পর্যায় পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষায় অভিজ্ঞ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনবলের সংকট। তৃণমূল পর্যায়ে শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক, সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার, ইউআরসি, পিটিআই ইন্সট্রাক্টর, সহকারী উপজেলা, উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার পদে প্রাথমিক শিক্ষায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নিয়োগ না দিয়ে, সরাসরি প্রশিক্ষণবিহীন জনবল নিয়োগ প্রদান করা হচ্ছে। তৃণমুলের শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষক নিয়োগপ্রাপ্তদের প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য ৪ বছর সময় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া তাদের দীর্ঘ এক বছর বিদ্যালয়ের পাঠদান বঞ্চিত রেখে শিক্ষককে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হয়।
দীর্ঘসময় প্রশিক্ষণবিহীন শিক্ষক দিয়ে শিশু শিক্ষার্থীরা ফলপ্রসু কাঙ্ক্ষিত, আনন্দময় পাঠ থেকে বঞ্চিত করা হয়। অপরদিকে দীর্ঘ এক বছর শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের পাঠদানের সুযোগ পায় না।
শিশু শিক্ষায় অন্য মানন্নোয়নে চ্যালেঞ্জ হলো, কিন্ডারগার্টেন, বেসরকারি প্রাথমিক, বেসরকারি ও সরকারি হাইস্কুলের প্রাথমিক শাখা। উক্ত বিদ্যালয়গুলোতে উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা অধ্যয়ন করে থাকেন। অভিভাবকদের অর্থের সংস্থান আছে বিধায়, তাদের সন্তানদের সুষম খাবারসহ গৃহ শিক্ষক, কোচিং বা নিজেরা যত্ন নিয়ে পরীক্ষায় ভালো ফল অর্জন করিয়ে থাকেন। পাশাপাশি প্রশিক্ষণবিহীন শিক্ষকের পাঠদানে জ্ঞান অর্জনমুখী শিক্ষা গ্রহণ থেকে তারা বঞ্চিত হয়ে থাকে। মুখস্থ করে, না বুঝে পরিপূর্ণ জ্ঞান অর্জন ব্যতিরেকে মেধার বিকাশ সম্ভব হয় না।
তার অন্যতম কারণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাড়া অন্য সব শিশু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক নেই। অথচ আমাদের দেশের সব সরকারের মন্ত্রী, উপদেষ্টা, সচিব, মহাপরিচালকসহ নীতিনির্ধারণকারী ব্যাক্তিসহ প্রায় সবাই উক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর পৃষ্ঠপোষকতা ও সুনাম প্রচারের ব্যস্ত। তারা খুব কমই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু তথা শিক্ষকদের কথা ভাবনায় আনেন। প্রাথমিক শিক্ষার ওপর তাদের জবাবদিহিতা নেই বললেই চলে। কারো জবাবদিহিতা মহাপরিচালক, কারো সচিবের, মন্ত্রী, উপদেষ্টা, কারোর প্রধানমন্ত্রী বা প্রধান উপদেষ্টা সন্তুষ্টির অর্জন। অর্থ কামাই বা পদোন্নতিই লক্ষ্য। প্রবাদ আছে ‘সরকারি মাল দরিয়ামে ঢাল’। তেমনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিশুদের ও শিক্ষকদের দুঃখ-কষ্ট ভাবনা তাদের নয়। তাদের ভাবনা দৃশ্যমান হয় বিপরীতমুখী।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জাতীয়, বিশেষ দিবস ও পবিত্র রমজান ছুটির তালিকা ছুটির দেখিয়ে বিদ্যালয় খোলা রেখে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও অমানবিক আচরণ করা হয়েছে। যেসব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও শিক্ষক রয়েছে, সে স্কুলগুলো সুনামের সঙ্গে চলে আসছে। সে স্কুলগুলো সরকারি বরাদ্দের পাশাপাশি অভিভাবকের কাছ থেকে বিশাল অনুদান নিয়ে থাকেন। সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের জবাবদিহিতার অভাবের, সীমাহীন অদক্ষতার ফলে সাধারণ মানুষের সন্তানদের শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করার সুযোগ পাচ্ছে না। যেমন-শিবরাম আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গাইবান্ধা, বেসরকারি অর্থে সুনামের সঙ্গে চলে আসছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংকটের অন্যতম আরেকটি কারণ, শিশুবান্ধব সময়সূচির প্রবর্তন না করা। কিন্ডারগার্টেনসহ উচ্চবিদ্যালয়গুলোর প্রাথমিক শাখা তাদের পাঠদান কার্যক্রম দুপুর ২টার মধ্যে শেষ করে থাকে। অপরদিকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান চলে ৪.১৫টা পর্যন্ত।
প্রাথমিক বিদ্যালয় দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় প্রাথমিক শিক্ষকের পদোন্নতি বন্ধ। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ৩৪ হাজার প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য। চলতি দায়িত্বের প্রধান শিক্ষকেরা দীর্ঘ সময় ধরে পদোন্নতির না পেয়ে অনেকে কবরে বা কেউ অবসরে চলে গেছেন। অপরদিকে, নব জাতীয়করণকৃত ৫ হাজার একজন জন পদবঞ্চিত প্রধান শিক্ষক দীর্ঘসময় থেকে বিদ্যালয়ের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। পাশাপাশি প্রধান শিক্ষকের পদমর্যাদা পাওয়ার জন্য হাইকোর্টের রিট করেছেন। এতে তাদের আর্থিক ক্ষতিসহ পেশাগত দায়িত্ব পালন বিঘ্ন সৃষ্টি করা হচ্ছে।
প্রাথমিকসহ সর্বস্তরের শিক্ষক সমাজ রাজনীতির বেড়াজালে আবদ্ধ। যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, শিক্ষক সমাজকে তাদের সম্পৃক্ততার বাইরে যাওয়ার উপায় থাকে না। এর ফলে শিক্ষক সমাজকে লাঞ্ছনা পোহাতে হয়। শিক্ষাব্যবস্থা তথা শিক্ষকদের রাজনীতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে করণীয় সম্পর্কে কতিপয় সুপারিশ বাস্তবায়ন করা যেতে পার। ১. বর্তমানে প্রেক্ষাপটে প্রাথমিক শিক্ষায় উচ্চশিক্ষিত মেধাবীদের আকৃষ্ট করা বা ধরে রাখার জন্য সমযোগ্যতাসম্পন্ন সরকারি কর্মচারীর মতো বর্তমান ১০ম গ্রেড দিয়ে দ্রুত বৈষম্যর নিরসন করা প্রয়োজন। এতে সরকারি চাকরিজীবীদের মতো বৈষম্য নিরসনের পাশাপাশি শিক্ষকদের কলঙ্কিত মর্যাদা থার্ড ক্লাস থেকে সেকেন্ড ক্লাসে উন্নীত হবে। পাশাপাশি শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া প্যানেলের মাধ্যমে জিরো টলারেন্স এ নামিয়ে আনতে হবে। বিদ্যালয়ে যোগদান করার পূর্বে শিক্ষককে সিইনএড পেশাগত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হবে। কনসালটেশন কমিটির সুপারিশ মোতাবেক কোনো ট্রেনিংবিহীন অযোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে শিশুর শারীরিক মানসিক বিকাশের পরিবর্তে বিনাশ বন্ধ করতে হবে। যেহেতু বর্তমানে সব শিক্ষক উচ্চশিক্ষিত, সেহেতু পিটিআইগুলো মহাবিদ্যালয় রূপান্তর করা জরুরি।
২. প্রাথমিক শিক্ষায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অভিজ্ঞ জনবল তৃণমূলের শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক পিটিআই, ইউআরসি ইনস্ট্রাক্টরসহ নীতিনির্ধারণী পর্যায় পর্যন্ত থাকবে । সে প্রেক্ষাপটে তৃণমূলের শিক্ষক পদকে এন্টি ধরে শতভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থাকে সমৃদ্ধ করতে হবে।
৩. বেসরকারি বা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাথমিক শাখা বিলুপ্তি করে প্রত্যেকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে অষ্টম শ্রেণির পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। যাতে তৃণমূল জনগণের সন্তানদের শিক্ষা আপাতত অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সহজলভ্য তথা দোরগোড়ায় গিয়ে পৌঁছে। কলসালটেশন কমিটির প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণির বিদ্যালয় বন্ধের প্রস্তাব এদেশের তৃণমূলের খেটে খাওয়া মানুষের শিক্ষা সংকুচিত করার শামিল।
৪. জরুরি ভিত্তিতে কিন্ডারগার্টেন, ইবতেদায়ি মাদনাসার সব শিক্ষককে পিটিআই ট্রেনিংয়ে অংশগ্রহণ করা প্রয়োজন। প্রাথমিকে ধর্ম শিক্ষাব্যবস্থা কার্যকর জোরদার করার লক্ষ্যে দুইজন ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ দেয়া প্রয়োজন। হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ধর্মের জনগণের এলাকা ভেদে তাদের ধর্মীয় শিক্ষক থাকতে হবে।
৫. সর্বস্তরে প্রাথমিক শিক্ষায় জবাবদিহিতা থাকতে হবে। বর্তমান সময়ে জবাবদিহিতা শুধু শিক্ষকদের ওপর দৃশ্যমান। সব পর্যায়ে কর্মকর্তা, মন্ত্রী, উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টা, প্রধানমন্ত্রীও প্রাথমিক শিক্ষার জবাবদিহিতার আওতায় থাকলে শিশুশিক্ষা হবে উন্নত বিশ্বের মতো সমৃদ্ধ।
৬. অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা জলাঞ্জলি দিয়ে অভিভাবকদের মাত্রাধিরিক্ত অর্থ আদায়ের মাধ্যমে বৈষম্য সৃষ্টি করা কাম্য নয়। প্যারা প্রশিক্ষণবিহীন শিক্ষক কোনো অবস্থায় নিয়োগ কাম্য নয়। শিশুশিক্ষার সার্বিক দায়িত্ব থাকবে সরকারের। এই ব্যাপারে রাষ্ট্র দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে শিক্ষকদের মতো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী পর্যন্ত জবাবদিহিতার আওতায় থাকা প্রয়োজন।
৭. শিশু শিক্ষার সব প্রতিষ্ঠান একই (কর্ম ঘণ্টা, তথা সময়সূচি, পাঠ্যপুস্তক, মূল্যায়ন তথা পরীক্ষা ব্যবস্থা) থাকা প্রয়োজন। বিশেষ করে শিশুশিক্ষার ২টার মধ্যে পাঠ সমাপ্ত করতে হবে। ৮. পাঠদান বহির্ভূত সব কাজ থেকে প্রাথমিক শিক্ষকদের অব্যাহতি দিতে হবে। রাষ্ট্রের কোনো জরুরি কাজ করার প্রয়োজন হলে সব সরকারি-বেসরকারি কর্মচারী সমবেতভাবে কাজ করতে হবে।
৯. বর্তমান জরুরি ভিত্তিতে প্রধান শিক্ষকের শূন্যপদে পদোন্নতি দিতে হবে। আদালতের রিট করা, জাতীয়করণকৃত পদোবঞ্চিত প্রধান শিক্ষকের যোগ্যপ্রার্থীদের পদোন্নতির ব্যবস্থা গ্রহণ করে প্রাথমিক শিক্ষার অচল অবস্থা নিরসন করা প্রয়োজন। শিক্ষক, সিনিয়র শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক পদের নামে শিক্ষকদের পদ সৃষ্টি করে পদোন্নতি করে শিক্ষকতা পেশার মধ্যে আবদ্ধ রাখা, কনসালটেশন কমিটি প্রতিবেদন এক নিছক ষড়যন্ত্র। এতে শিক্ষকদের পদোন্নতি বেশি দূর এগিয়ে যেতে পারবে না। যার ফলে অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষণবিহীন কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা সমৃদ্ধ হবে না।
১০. প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থাকে রাজনীতিমুক্ত করার লক্ষ্যে বিদ্যালয়ে ম্যানেজিং কমিটির নাম পরিবর্তন করে বিদ্যালয়ে কল্যাণ কমিটি নামকরণ করা প্রয়োজন, যাতে তাদের বিদ্যালয় পরিচালনা বা ম্যানেজ করার পরিবর্তে কল্যাণ করার মানসিকতা তৈরি হয়। এই কমিটির আহ্বায়ক থাকবেন প্রধান শিক্ষক, সব শিক্ষক, প্রত্যেক শ্রেণির একজন অভিভাবক ও জমিদাতা সদস্য। তাতে প্রাথমিক শিক্ষা অনেকটা রাজনীতি মুক্ত হবে।
১১. সারা দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য সরকারি কর্মচারী হিসেবে একজন প্রহরী, একজন জন দপ্তরি, একজন পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও একজন অফিস সহকারী নিয়োগ দেয়া জরুরি।
অবিলম্বে প্রাথমিক শিক্ষাকে ধ্বংসের প্রক্রিয়া কলসালটেশন কমিটির প্রতিবেদন বাতিল করে প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে মানোন্নয়নের প্রস্তাবগুলো প্রধান উপদেষ্টাসহ উপদেষ্টারা ভেবে দেখবেন।
লেখক: শিক্ষাবিদ