ঢাকা মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫ , ৩ চৈত্র ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

রোজা হোক প্রাণময়

মতামত

শামসুদ্দীন সাদী, আমাদের বার্তা

প্রকাশিত: ১৫:৫৬, ১৮ মার্চ ২০২৫

সর্বশেষ

রোজা হোক প্রাণময়

রোজা আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে রাখা হয় রোজা এমন একটি ইবাদত যার মধ্যে লৌকিকতা সম্ভব নয় লোক চক্ষুর অন্তরালে কেউ যদি পানাহার করে বা স্ত্রী-সঙ্গমে লিপ্ত হয়, যেখানে দুনিয়ার কেউ তাকে দেখবে না কেউ তার ব্যাপারে জানবে না, সেখানেও একজন রোজাদার এসব থেকে বিরত থাকে সামনে খাবার প্রস্তুত, পেটে ক্ষুধা, খাওয়ার চাহিদা আছে, কিন্তু তারপরও রোজাদার খায় না। তার একমাত্র কারণ আল্লাহর ভয় ঈমানদারের অন্তরে সর্বদা জাগ্রত থাকে যে, দুনিয়ার কেউ না দেখলেও আল্লাহ আমাকে দেখছেন দুনিয়ার কেউ না জানলেও আল্লাহ সবকিছু জানেন জন্য রোজার সঙ্গে অন্যান্য ইবাদতের পার্থক্য রয়েছে অন্যান্য ইবাদতে লৌকিকতার সম্ভাবনা থাকে কিন্তু রোজার মধ্যে তা নেই এজন্য রোজার পুরস্কারও বেশি অন্যান্য ইবাদতের প্রতিদান নির্দিষ্টভাবে বর্ণিত আছে কিন্তু রোজার প্রতিদান নির্দিষ্টভাবে বর্ণিত হয়নি আল্লাহ তায়ালা হাদিসে কুদসিতে বলেন, রোজা আমার জন্য, আমি নিজেই এর প্রতিদান দিব

দুনিয়ার নিয়ম আছে, মানুষ যত বড় ও মহান হয় তার প্রতিদানও হয় তত বড় ও বিশাল বড় বড় নদীতে জেলেরা মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে কিন্তু বিশালাকার কোনো মাছ ধরা পড়লে জেলেরা সেই মাছ বাজারে তোলে না সেটি নিয়ে কোনো রাজপ্রাসাদে হাজির হয় তার আশা থাকে, বাজারে এই মাছ কেজি দরে বিক্রি করে যে দাম পাওয়া যাবে, রাজপ্রাসাদ থেকে তার বহুগুণ বেশি পাওয়া যাবে সুতরাং যে প্রতিদান আল্লাহ নিজ কুদরতি হাতে প্রদান করবেন সেটি কত বড় বিশাল হবে তা অনুমান করা আমাদের ক্ষুদ্র চিন্তায় সম্ভব নয়

কিন্তু রাজপ্রাসাদে নিয়ে যাওয়া পণ্যটি রাজপ্রাসাদের উপযোগী হওয়া উচিত। রাজপ্রাসাদে মামুলি পণ্য নিয়ে গেলে বিতাড়িত হবার সম্ভাবনা থাকে। আমাদের উচিত রোজাকে আল্লাহর দরবারের উপযোগী করা। রোজার গুণগত মান উন্নত করা। রোজাকে প্রাণময় করা। যে রোজায় কেবল পানাহার থেকে বিরত থাকে, পাপাচার থেকে বিরত থাকে না, তার রোজা হয় প্রাণহীন অন্তসারশূন্য। শুধু পানাহার থেকে বিরত থেকে অন্যান্য পাপাচারে লিপ্ত থাকলে সেই রোজার গুণগত মান থাকে না। এমন রোজা আল্লাহর দরবারে ‍গৃহীত হয় না। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে মিথ্যা কথা ও অসৎ কর্ম ছাড়ল না তার পানাহার বর্জন আল্লাহর প্রয়োজন নাই। (বুখারি শরিফ: ১৯০৩)

এই হাদিস থেকে বুঝা যায় আল্লাহ তায়ালা নিজ হাতে রোজাদারকে যে অকল্পনীয় পুরস্কারে ভূষিত করবেন সেটির জন্য কেবল পানাহার বর্জন যথেষ্ট নয়। পানাহারের সঙ্গে মিথ্যা কথা, প্রতারণা, অশ্লীলতা, ধোঁকাবাজি, ঠকানো ইত্যাদি অসৎকর্মও বর্জন করতে হবে।

পাপাচার তো সবসময়েই বর্জনীয়। রমজান মাসেও বর্জনীয়, অন্যান্য মাসেও বর্জনীয়। কিন্তু রমজান মাসে রোজা রেখে পাপাচারে লিপ্ত হওয়া অন্যান্য সময়ের তুলনায় অধিক গুরুতর। রমজান মাসকে আল্লাহ তায়ালা সৎকাজে উৎকর্ষ সাধনের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন। যে শয়তান মানুষকে অসৎ কাজে প্ররোচিত করে সেই শয়তানকে শেকলবন্দি করেছেন। রহমত বরকতের দরজা খুলে দিয়েছেন। তারপরও কেউ যদি রমজান মাসে অসৎ কাজে লিপ্ত হয় এবং সৎ কাজে পিছিয়ে পড়ে তাহলে তার মতো হতভাগা আর কেউ নাই।

আকাশ থেকে মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষিত হয়। বৃষ্টির পানিতে দুনিয়া সবুজ শ্যামলে আচ্ছাদিত হয়। জমির উর্বরতা বাড়ে এবং ফল-ফসল উৎপন্ন হয়। কিন্তু সেই পানি পদি পাথরের ওপর বর্ষিত হয় অথবা বালিয়ারিতে, তাহলে সেখান থেকে ফল-ফলাদি ও সবুজ শ্যামলতা আশা করা যায় না। কিছু মানুষ সেই পাথর আর বালিয়ারির মতো। যতই রহমতের বৃষ্টি বর্ষিত হোক, শয়তান শেকলবন্দি হোক, তার থেকে সৎ গুণাবলির উৎকর্ষ আশা করা যায় না। আল্লাহ তায়ালা বলেন, এসব কিছুর পর তোমাদের অন্তর আবার শক্ত হয়ে গেল। এমনকি তা হয়ে গেল পাথরের মতো, বরং তার চেয়েও বেশি শক্ত। (সুরা বাকারা: ৭৪) অন্তর এভাবে শক্ত হয়ে গেলে তার মধ্যে সততা মহানুভবতা নম্রতা সভ্যতা ভদ্রতা কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। আল্লাহ পক্ষ থেকে যতই রহমত বর্ষিত হোক তাতে কোনো পরিবর্তন আসে না। সুতরাং আমাদের উচিত আমাদের অন্তর যেন পাথরে পরিণত না হয সেই দোয়া করা। আল্লাহ তায়ালা কোরআন মাজিদে আমাদের এর জন্য দোয়া শিখিয়েছেন। তিনি বলেন : (এরূপ লোক প্রার্থনা করে) হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি আমাদেরকে যখন হেদায়াত দান করেছে তারপর আর আমাদের অন্তরে বক্রতা সৃষ্টি কর না। (সুরা আলে ইমরান : ৮)  সুতরাং আসুন, আল্লাহর কাছে দোয়া করি এবং রোজাগুলো যথাযথভাবে পালন করি।

 

লেখক : শিক্ষক ও অনুবাদক

জনপ্রিয়