
ঈদ একটি উৎসব। একটি ইবাদত। একটি পবিত্র খুশির দিন। সাম্য ও সম্প্রীতির চিহ্ন। মুসলমানদের হৃদয়ের আনন্দ। হৃদ মাঝে বয়ে যায় ঈদ বসন্তের হিমেল হাওয়া। আনন্দে মেতে ওঠে নগর থেকে শহর। গ্রাম থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চল। ঈদ উৎসবের মাঝে নেই কোন ভেদাভেদ। আমরা সবাই সমান। ধনী-গরীব, কৃষক-শ্রমিক, কুলি-মজুর সবাই মোরা ভাই ভাই। আনন্দ অধিকারে সকলেই এক। এই আনন্দ হবে নিজের মনের হিংসা, ঘৃণা, লোভ, অহংকার, অহমিকা, আত্মম্ভরি, আত্মশ্লাঘা, রাগ-ক্রোধ, বিদ্বেষসহ যাবতীয় কুপ্রবৃত্তি থেকে নিজেকে মুক্ত করার। এই উৎসব হবে সাম্য, ভ্রাতৃত্ব ঐক্য, সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির।
ঈদ মানেই আনন্দ। ঈদ মানেই হাতে হাত রেখে মুসাফাহা। এই আনন্দ-উৎসবের সঙ্গে মিশে আছে আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য। ত্যাগ মহিমার শিক্ষা। ভেদাভেদ ভুলে যাওয়ার মনোবল। শ্রেণিবৈষম্যের মূলোৎপাটন। বুকে বুক রেখে কোলাকুলি।
পর্যায়ক্রমে এ আনন্দ সংক্রমিত হতে থাকে হৃদয় থেকে হৃদয়ে। সদ্যঃপ্রসূত শিশু থেকে বয়োজ্যেষ্ঠ-বৃদ্ধ-বনিতা পর্যন্ত। হতদরিদ্র, এতিম, দুস্থ, নিঃস্ব ও শত শত ছিন্নমূল মানুষের মুখেও হাসি ফোটে কিছু ঈদ সামগ্রী পেয়ে। তাই মুসলমানরা গরিব আত্মীয় স্বজনের দিকে সাহায্যের হাত বাড়ান। খবর নেন নিজের পরিবারের পাশাপাশি তাদেরও। কেনাকাটা করেন ঈদের নতুন পোশাক। বছরজুড়ে খোঁজ না নিলেও ঈদের সময় বাদ পড়ে না। ছুটে যান শহর ছেড়ে গ্রামে। ভুলে যান সকল মান-অভিমান, ঝগড়া বিবাদ হিংসা-বিদ্বেষের কথা। একসাথে পায়ে হেঁটে যান ঈদগাহে। বসে যান সারিবদ্ধ জায়নামাজে। সেজদারত হয় সৃষ্টিকর্তা মহান রবের তরে। সাম্য ও সম্প্রীতির কি এক অপূর্ব দৃশ্য। ঐক্যের অটুট বন্ধন। এভাবেই মুসলিম সম্প্রদায়ের সর্বশ্রেণির মানুষ এ উৎসবে মেতে ওঠে অনাবিল আনন্দে। প্রাণে প্রাণে বহে খুশির জোয়ার।
আমরা অনেকেই সমাজ বিনির্মানের কথা বলি, দিন বদলের কথা বলি। কিন্তু দিন বদলের জন্য সবার আগে যেটি প্রয়োজন, আর সেটিই যদি আমরা ভুলে যাই। তাহলে তো ফলাফল শূন্য। পবিত্র মাহে রমজান এই দিল বদলের শিক্ষাই দিয়েছে।
আজ আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে, আমরা কি পেরেছি হিংসা-বিদ্বেষ আর রাগ ক্রোধ ঝেড়ে ফেলতে। পাপ-পঙ্কিলতা মুছে ফেলতে। পেরেছি কি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সম্প্রীতির বন্ধন তৈরি করতে। সবার মাঝে ঈদের অনাবিল আনন্দ-উল্লাস ছড়িয়ে দিতে। এখন বাঙালি মুসলমানের ঘরে-ঘরে জনে-জনে চলছে ঈদের আনন্দ বার্তা। সৌহার্দের, ভ্রাতৃত্বের আর সম্প্রীতির এই আনন্দধারায় সবাইকে ঈদ মোবারক। মুসলমানের সবচেয়ে বড় এই আনন্দ-উৎসব সামাজিক সম্প্রীতি আর সাম্য-চেতনায় ভাস্বর। ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাই ঈদের আনন্দে শামিল হবে- এটাই এই ঈদের মর্মবাণী।
ঈদ আসে সুশৃঙ্খল আচার-আচরণের তীর ঘেঁষে। নৈতিক, আত্মিক ও সামাজিক পরিশুদ্ধির সীমানা পেরিয়ে সামষ্টিক কল্যাণ নিয়ে। ঈদ আসে কৃচ্ছ্র ও শুদ্ধতার প্রতীক হয়ে। তাকওয়ার শক্তিতে বলীয়ান হয়ে নতুন জীবনে ফেরার অঙ্গীকার নিয়ে। অফুরন্ত কল্যাণের সঙ্গে আলিঙ্গন করে। ঈদ আসে শত্রুতা ও বৈরিতার প্রাচীর ডিঙিয়ে বন্ধুতা ও মিত্রতার হাত বাড়িয়ে। মহামিলনের মহোৎসবে মনকে মাতিয়ে তুলতে। পরিশোধিত হৃদয়কে পরিতৃপ্তি করতে। ঈর্ষা, দ্বেষ, অনৈক্য-দূরত্ব ও বিভাজনের প্রাচীর ভাঙতে। অতএব আমরা এই উৎসবকে কেন্দ্র করে সাম্য ও সম্প্রীতির সুদীর্ঘ আকাশচুম্বী প্রাচীর নির্মাণ করবো।
ঈদের দিন মানে সব বৈষম্য বা ভেদাভেদ ভুলে মানবতার জয়গান গাওয়ার দিন। ঈদ ধর্মীয় উৎসব হলেও শত শত বছরের ইতিহাস নিয়ে জড়িয়ে গেছে বাংলার মাটি ও মানুষের সঙ্গে। যেখানে সব ধর্মের মানুষ একসঙ্গে ঈদের আনন্দে অংশগ্রহণ করে।
তাই ঈদুল ফিতরের মাধ্যমে সকল বিভেদ-বৈষম্য, দূরত্ব ভুলে যদি একে অপরকে সৌহার্দ-সম্প্রীতির বন্ধনে না বাঁধতে পারি, তবে ঈদের প্রকৃত উদ্দেশ্য হারাবে। রমজান যে চিত্তশুদ্ধির পথ বাতলে দিয়েছে তা গ্রহণ করে সমস্ত হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে সাম্য ও সংহতির সমাজ প্রতিষ্ঠাই হোক আমাদের ঈদুল ফিতরের অঙ্গীকার। ঈদের আলোয় আলোকিত হোক সবার হৃদয়। ভালো থাকুক পৃথিবীর সকল মানুষ। বিচ্ছুরিত হোক সাম্যের আলো।