
শবে কদরকে আরবিতে লাইলাতুল কদর বলা হয়। লাইলাতুন অর্থ রাত, কদর অর্থ সম্মানিত। সুতরাং লাইলাতুল কদর অর্থ সম্মানিত রাত বা মহিমান্বিত রাত। বছরের অন্যান্য রাত অপেক্ষা সর্বাধিক মর্যাদাসম্পন্ন বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত ও মহিমান্বিত বলে এ রাতের নামকরণ করা হয়েছে লাইলাতুল কদর। অথবা এ রাতের নাম লাইলাতুল কদর রাখার কারণ হলো, যে কেউ এ রাতে ইবাদত-বন্দেগি, কান্নাকাটি, তাওবা ইস্তিগফারের মাধ্যমে মর্যাদাশীল হতে পারে।
শবে কদরে ইবাদতের ফজিলত
শবে কদরের ইবাদত হাজার মাসের ইবাদত থেকে উত্তম। এই রাতের ইবাদতের মাধ্যমে হাজার মাস ইবাদতের সাওয়াব লাভ হয়। পবিত্র কোরআন মাজিদে আল্লাহ তায়ালা বলেন : তোমরা কি জান লাইলাতুল কদর কী? লাইলাতুল কদর হাজার মাস থেকে উত্তম। (সুরা আল কদর: ২-৩)
হাদিস শরিফে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি ঈমান ও সাওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখবে তার পূর্বের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। এবং যে ব্যক্তি ঈমান ও সাওয়াবের আশায় শবে কদরে রাত জেগে ইবাদত করবে তার পূর্বের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। (বুখারি শরিফ: ২০১৪)
শেষ দশকের বেজোড় রাতে শবে কদর
রমজানের শেষ দশকেরে বেজোড় রাতে শবে কদর রয়েছে। নবীজি (সা.) শেষ দশকের রাতে শবে কদর তালাশ করতে বলেছেন। তিনি বলেন, তোমরা রমজানের শেষ দশকে বিজোড় রাতে লাইলাতুল কদর তালাশ কর। (বুখারি শরিফ: ২০১৭)
শবে কদরে নবীজির ইবাদত
শবে কদর পাওয়ার আশায় নবীজি (সা.) রমজানের শেষ দশকে রাত জেগে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ইবাদত করতেন। উম্মুল মুমিনীন হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, রমজানের শেষ দশক এলে নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লুঙ্গি মজবুত করে কোমরে বেঁধে নিতেন (যেন ইবাদতে বিঘ্ন না ঘটে) এবং রাত জেগে ইবাদত করতেন। আর নিজ পরিবারের লোকজনকেও জাগিয়ে দিতেন। (বুখারি শরিফ: ২০২৪)
শবে কদরের দোয়া
আম্মাজান হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমরা যদি বুঝতে পারি কোন রাত লাইলাতুল কদর তাহলে আমরা কী দোয়া করব? নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তখন তুমি বলবে "আল্লাহুমা ইন্নাকা আফুব্বুন তুহিব্বুল আফওয়া ফা‘ফু আন্নী"। অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি পরম ক্ষমাশীল, ক্ষমা করা পছন্দ করো, তাই আমাকে ক্ষমা করে দাও। (তিরমিজি শরিফ: ৩৫১৩)
শবে কদর থেকে বঞ্চিত হওয়া দুর্ভাগ্যের নিদর্শন
হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার রমাজান মাসের আগমন হলে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের নিকট এই মাস উপস্থিত হয়েছে। এতে এমন একটি রাত আছে যা হাজার মাস থেকে উত্তম। এর থেকে যে বঞ্চিত হলো সে সমস্ত কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো। কেবল বঞ্চিতরাই এই রাত থেকে বঞ্চিত হয়। (ইবনে মাজাহ: ১৬৪৪)
লেখক: শিক্ষক ও খতিব