ঢাকা মঙ্গলবার, ০১ এপ্রিল ২০২৫ , ১৭ চৈত্র ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

‘জন্মদিনে বৃক্ষরোপণ’ বদলে দিতে পারে পৃথিবী

মতামত

সাধন সরকার, আমাদের বার্তা

প্রকাশিত: ১৪:০০, ৩০ মার্চ ২০২৫

সর্বশেষ

‘জন্মদিনে বৃক্ষরোপণ’ বদলে দিতে পারে পৃথিবী

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) থেকে ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ ফেব্রুয়ারি এক চিঠিতে জলবায়ু পরিবর্তনের সম্ভাব্য অভিঘাত মোকাবিলায় মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বৃক্ষরোপণের নির্দেশনা দেয়া হয়। চিঠিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বছরে অন্তত দুইটি করে ফলদ বা বনজ অথবা ভেষজ গাছের চারা রোপণ ও পরিচর্যা করতে বলা হয়। এর আগে ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের ৫ জুন ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবসে’ মাউশি’র এক চিঠিতে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের নির্দেশ জারি করা হয়। ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ১০ জুন মাউশি’র অপর এক আদেশে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ৫০টি করে গাছের চারা রোপণের নির্দেশনা দেয়া হয়। বৈশ্বিক সমস্যা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় এসব উদ্যোগ বেশ কার্যকর তাতে কোনো সন্দেহ নেই ।

বিশেষ করে যদি ভবিষ্যৎ কর্ণধারদের দিয়ে বৃক্ষরোপণের মতো কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা যায় তাহলে তো কথায় নেই। তবে এ ধরনের কর্মসূচি কতটা আগ্রহের সঙ্গে কার্যকর হয়েছে বা হচ্ছে তা হয়তো সময়ই বলবে। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে জর্জরিত বাংলাদেশের মতো দ্বীপ রাষ্ট্রে বৃক্ষরোপণের মতো গুরুত্বপূর্ণ, বাধ্যতামূলক ও মহৎ বিষয়টিকে নোটিশ জারির মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বৃক্ষরোপণ করে উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করা বা জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিদ্যমান সমস্যা মোকাবিলা করা সম্ভব বলে মনে হয় না। দরকার দেশের সব পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত ও ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগ। আর এই উদ্যোগে সবচেয়ে ভালো সমাধান হতে পারে ‘জন্মদিনে বৃক্ষরোপণে’র মতো কর্মসূচি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা যদি তাদের যার যার জন্মদিনে একটি করে বৃক্ষরোপণ করে তাহলে প্রতিদিন লাখ লাখ বৃক্ষরোপণ করা হবে। সর্বপ্রথম রাষ্ট্রীয় পর্যায় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে জন্মদিনে বৃক্ষরোপণের ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

গাছ ছাড়া মানুষের বেঁচে থাকা সম্ভব নয়-এটা শিক্ষার্থীরা জানলেও সে অনুযায়ী ভূমিকা রাখতে খুব একটা দেখা যায় না। গাছ থেকে অক্সিজেন প্রাপ্তি, গাছের অর্থনৈতিক মূল্য ও পরিবেশগত প্রভাব শিক্ষার্থীদের বেশি বেশি করে জানাতে হবে। বিশদভাবে বললে বলা যায়, শিশুর জন্মগ্রহণের প্রথম পাঁচ বছরে প্রাথমিকভাবে পিতামাতা সন্তানের নামে বৃক্ষরোপণ করবে। পাঁচ বছরের পর থেকে মা-বাবার দেখানো পথ অনুসরণ করে সন্তানও স্বাভাবিকভাবে প্রতিবছর বৃক্ষরোপণে উদ্যোগী হবে। পরিবারের অন্য সদস্যরাও তাদের নিজেদের জন্মদিনে বৃক্ষরোপণ করলে সন্তানও এ কাজে বেশি উদ্বুদ্ধ হবে। সহজ কথায় সমাজের সব স্তরের মানুষকে যে যার জায়গা থেকে যার যার জন্মদিনে বৃক্ষরোপণে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। ধরা যাক একজন শিক্ষার্থীর বয়স যখন ১২, তখন তার নামে আগে থেকে রোপণ করা ১২টি গাছ থাকবে। প্রথম বছর লাগানো গাছ ১২ বছরে কী পরিমাণ অর্থনৈতিক মূল্য নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে তা চিন্তা করা যায়। ১২ বছরে ১২টি গাছ,  এভাবে ২০ বছরে ২০টি গাছ। প্রথম দিকে রোপিত বৃক্ষ পরবর্তীতে বিশাল আকার ধারণ করা গাছ বিক্রি করে শিক্ষার্থী নিজের পড়ালেখার খরচও চালাতে পারবে।

একসময় বড় গাছ বিক্রি করলেও তাতে ক্ষতির কিছু হবে না। কেনোনা শিক্ষার্থী তো প্রতিবছর গাছ লাগাচ্ছেই। গাছের মাধ্যমে শিক্ষার্থী নিজেই তখন নিজের সংস্থান করতে পারবে। এভাবে বেঁচে থাকার আগ পর্যন্ত প্রতি বছর বৃক্ষরোপণের মতো কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। একজন মানুষ ৭০ বছর বাঁচলে সবমিলিয়ে ৭০টি গাছ লাগাবে। নিজের জন্মদিনটা যদি বৃক্ষরোপণের সঙ্গে কাটে তাহলে নিশ্চয় মন্দ হবে না। কাজটা শুরু করতে হবে শিক্ষার্থীদের দিয়ে। কেনোনা শিক্ষার্থীদের দিয়ে সামাজিক আন্দোলন ঘটানো সহজ। মহৎ কাজে সব শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ সর্বস্তরের মানুষকেও বৃক্ষরোপণের মতো সামাজিক আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করবে।

প্রতিবছর আমাদের দেশে নীতিনির্ধারক পর্যায় থেকে নিজেদের নামে কিংবা বিখ্যাত ব্যক্তিদের নামে বৃক্ষরোপণ করতে দেখা যায়। পাশাপাশি দায়সারাভাবে সবাইকে বৃক্ষরোপণ করতে আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। বৃক্ষরোপণের মতো বিষয় শুধু বৃক্ষমেলা কিংবা বৃক্ষরোপণের আহ্বান জানানোর মতো বিষয় নয়। শুধু রাষ্ট্রের একার পক্ষে পুরো জাতিকে বৃক্ষপ্রেমী করা সম্ভবও নয়। তাই রাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সম্পদ ও ভবিষ্যৎ কর্ণধার শিক্ষার্থীদের এ কাজে সম্পৃক্ত করতে হবে। এখন অনেক ধরনের ফলদ, বনজ ও ভেষজ গাছ সারা বছর ধরে লাগানো যায়। তাই যে যার জন্মদিনে গাছ লাগানো কঠিন কোনো বিষয় নয়। দরকার শুধু গণজাগরণ ও সম্মিলিত প্রচেষ্টা। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর অ্যাসাইনমেন্টের বদলে বৃক্ষরোপণের ওপর নম্বর দেয়ার ব্যতিক্রম ও ভালো উদ্যোগও চোখে পড়েছে। এ ধরনের ইতিবাচক উদ্যোগকে এগিয়ে নিয়ে দরকার শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সম্মিলিত প্রয়াস।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম খুললেই দেখা যায়, কেক কেটে জন্মদিন উদযাপনের ছবি। লাখ লাখ মানুষ প্রতিদিন কেট কেটে জন্মদিন উদযাপন করে থাকে। কেক কেটে ও আয়োজন করে জন্মদিন পালন করা বেশ ব্যয়বহুলও বটে। সে তুলনায় বৃক্ষরোপণ কম ব্যয়বহুল ও লাভজনক। সময়টা এখন কেক কাটার নয়, সময়টা এখন বৃক্ষরোপণের। কেনোনা অনেকটা সময় দেরি হয়ে গেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা প্রথম সারির দেশগুলোর একটি বাংলাদেশ। দেশের দক্ষিণাঞ্চল জলবায়ু সমস্যায় রীতিমতো ধুঁকছে। জলবায়ু সমস্যা মোকাবিলায় উন্নয়ন টেকসই হচ্ছে না। জলবায়ুসৃষ্ট দুর্যোগের কবলে মানুষের সাজানো জীবন ওলটপালট হয়ে যাচ্ছে । সমস্যা মোকাবিলায় দেশের বাজেটের বড় একটা অংশ খরচ করতে হচ্ছে। প্রতিবছর ক্ষতি পূরণের আশায় হাত পাততে হচ্ছে উন্নত দেশসমূহের কাছে।

জলবায়ু নিয়ে গবেষণারত জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠান আইপিসির (জলবায়ু সংক্রান্ত আন্তসরকার প্যানেল) তথ্য বলছে, আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশের দ্বীপরাষ্ট্রগুলোতে জলবায়ুসৃষ্ট সমস্যা আরো বাড়বে। জলবায়ু সমস্যার প্রভাব শিক্ষার ওপরও পড়েছে। কোনো কিছুই বাদ যাচ্ছে না জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব থেকে। বৃক্ষরোপণই পারে জলবায়ু সমস্যা মোকাবিলা করে ধরিত্রীকে বাঁচাতে। বৃক্ষ আর মানুষের মধ্যে আদতে কোনো পার্থক্য নেই। বৃক্ষ কার্বন শোষণ করে পৃথিবী নামক আমাদের গ্রহটাকে সুস্থ রাখে। পুরো পৃথিবীতে বৃক্ষসম্পদ যেমন কমছে অপরদিকে মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। তাই আমাদের এই প্রিয় ও একমাত্র গ্রহটিকে টিকিয়ে রাখতে হলে বৃক্ষরোপণের বিকল্প নেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও সর্বস্তরের মানুষের উচিত জন্মেদিনে কেক না কেটে বৃক্ষরোপণের মতো মহৎ কাজে অংশগ্রহণ করা।

যে কাজে সবার লাভ, পৃথিবীকে বাঁচানোর স্বার্থে সে কাজে যার যার অবস্থান থেকে এগিয়ে আসতে হবে। তা ছাড়া সকল ধর্মে বৃক্ষরোপণকে মহৎ কাজ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যে যতো বেশি বৃক্ষরোপণ করবে, সৃষ্টিকর্তার কাছে সে তত বেশি প্রিয় হয়ে উঠবে। বৃক্ষরোপণে শিক্ষার্থীদের উৎসাহ করতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, উপজেলা, জেলা ও জাতীয় পর্যায়ে সবেচেয়ে বেশি বৃক্ষরোপণকারী শিক্ষার্থীকে পুরস্কারের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। শিক্ষার্থীদের বৃক্ষরোপণে উদ্বুদ্ধ করতে প্রতিবছর বৃক্ষরোপণের জাতীয় পুরস্কারে ব্যক্তিগত পর্যায়ে ‘শিক্ষার্থী ক্যাটাগরি’ও রাখা যেতে পারে। নিজেদের পৃথিবী নিজেদেরকেই বাঁচাতে হবে। জন্মদিনে বৃক্ষরোপণের মতো সম্মিলিত উদ্যোগ পৃথিবী বদলে দিতে পারে।

লেখক: শিক্ষক

 

জনপ্রিয়