
ইসলামে ঈদের প্রবর্তন হয়েছে দ্বিতীয় হিজরির মাঝামাঝি সময়ে। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) মদিনায় এসে দেখেন, সেখানকার লোকেরা বছরে দুই দিন আনন্দ ও খেলাধুলা করে। তিনি বললেন, আল্লাহ তায়ালা তোমাদেরকে এ দুই দিনের পরিবর্তে আরও অধিক উত্তম ও কল্যাণকর দুটি দিন দিয়েছেন: ১. ঈদুল আজহা, ২. ঈদুল ফিতর। (আবু দাউদ : ১/১৬১)। [inside-ad-1]
ঈদের দিনের সুন্নত ও মুস্তাহাব
১. মেসওয়াক করা সুন্নত। ২. গোসল করা সুন্নত । ৩. সুগন্ধি ব্যবহার করা সুন্নত । ৪. কিছু খেয়ে ঈদগাহে যাওয়া সুন্নত। বিজোড় সংখ্যায় যে কোনো মিষ্টিদ্রব্য খাওয়া উত্তম; খেজুর অতি উত্তম। ৫. ঈদগাহে পায়ে হেঁটে যাওয়া উত্তম। এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া অন্য রাস্তা দিয়ে আসা মুস্তাহাব। ৬. ঈদগাহে যাওয়ার পথে নিচু স্বরে তাকবীর (আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ) পড়া সুন্নত। ৭. সাধ্যমত উত্তম পোশাক পরিধান করা মুস্তাহাব। ৮. নামাজের জন্য ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে সদকায়ে ফিতর আদায় করা সুন্নত। (দাতা ও গ্রহীতার সুবিধার্থে রমজানেও প্রদান করা যায়)। ৯. ঈদের দিন চেহারায় খুশির ভাব প্রকাশ করা এবং কারো সাথে দেখা হলে হাসিমুখে কথা বলা মুস্তাহাব। ১০. আনন্দ-অভিবাদন বিনিময় করা মুস্তাহাব। (ফাতাওয়া শামি : ১/৫৫৬, ৫৫৭, ৫৫৮, হেদায়া : ২/৭১, বোখারি : ১/১৩০, ইবনে মাজাহ : ৯২)।
ঈদের নামাজ
ঈদের নামাজ দুই রাকাত এবং তা ওয়াজিব। এতে আজান ইকামত নেই। যাদের ওপর জুমার নামাজ ওয়াজিব তাদের ওপর ঈদের নামাজও ওয়াজিব। ঈদের নামাজ খোলা মাঠে পড়া উত্তম। তবে মক্কাবাসীর জন্য মসজিদে হারামে উত্তম। শহরের মসজিদগুলোতেও ঈদের নামাজ জায়েজ আছে। (বোখারি : ১/১৩১, ফাতাওয়া শামি : ১/৫৫৫, ১/৫৫৭, আল মুহাজ্জাব : ১/৩৮৮)।
ঈদের নামাজের সময়
সূর্য উদিত হয়ে এক বর্শা (অর্ধ হাত) পরিমাণ উঁচু হওয়ার পর থেকে শুরু হয়ে দ্বিপ্রহর পর্যন্ত বাকি থাকে। তবে ঈদুল ফিতরের নামাজ একটু দেরিতে পড়া সুন্নত; যেন নামাজের পূর্বেই বেশি থেকে বেশি সদকাতুল ফিতর আদায় হয়ে যায়। (ফাতহুল কাদির : ২/৭৩, আল মুগনি : ২/১১৭)। [inside-ad-2]
ঈদের নামাজের ছয় তাকবীর
ঈদের নামাজে অতিরিক্ত ছয়টি তাকবীর ওয়াজিব। প্রথম রাকাতে তাকবীরে তাহরীমা ও সানার পর তিন তাকবীর। দ্বিতীয় রাকাতে কেরাতের পর রুকুতে যাওয়ার পূর্বে তিন তাকবীর। এ তাকবীরগুলো বলার সময় ইমাম-মুকতাদি সবাইকে হাত উঠাতে হবে। তৃতীয় তাকবীর ব্যতীত প্রত্যেক তাকবীরের পর হাত ছেড়ে দিতে হবে। কেউ যদি এ তাকবীরগুলো না পায় তাহলে সে রুকুতে থাকা অবস্থায় আদায় করে নেবে। কারো পূর্ণ এক রাকাত ছুটে গেলে সে দ্বিতীয় রাকাতে কেরাতের পর তাকবীরগুলো আদায় করে নেবে। কেরাতের পূর্বে আদায় করারও সুযোগ রয়েছে। নামাজ শেষে খুৎবা প্রদান ইমামের জন্য সুন্নত; তা শ্রবণ করা নামাজির জন্য ওয়াজিব। (ফাতাওয়া শামি : ১/৫৫৯, ৫৬০)।
ঈদের জামাত ছুটে গেলে করণীয়
কারো ঈদের নামাজ ছুটে গেলে শহরের অন্য কোনো জামাতে শরিক হওয়ার চেষ্টা করতে হবে। পরিশেষে যদি নামাজ ছুটেই যায় তাহলে এর কোনো কাজা নেই। তবে চার রাকাত এশরাকের নফল নামাজ আদায় করে নেবে এবং তাতে ঈদের নামাজের ন্যায় অতিরিক্ত তাকবীর বলবে না। (ফাতাওয়া শামি : ১/৫৬১)।
ঈদের দিনে কোলাকুলি
পরিচিত কারও সাথে কিছুদিন বা অনেকদিন পর দেখা হলে উভয়ে ডান গলা মিলিয়ে মহাব্বতের সাথে একবার কোলাকুলি করা এবং ‘আল্লাহুম্মা যিদ্ মহাব্বাতী লিল্লাহি ওয়া রাসূলিহ্’ পড়া সুন্নত। তবে ঈদের দিন জরুরি মনে করে কোলাকুলি করা বিদআত। অন্যথায় জায়েজ। (তিরমিজি : ২/১০২, মাহমুদিয়া : ২৮/২১১, ইসলাহি খুতুবাত : ১/১৮৬-১৮৭)।
ঈদ মহান আল্লাহর নেয়ামত। নেয়ামতের চাহিদা হলো, এর শুকরিয়া আদায় করা। নেয়ামত পেয়ে নেয়ামতদাতার অবাধ্য হওয়া তার সাথে বেইমানি করার শামিল। এক মাস আল্লাহর বিধান মেনে চলে পুরস্কার প্রদান দিবসে তাঁর অবাধ্যতা করার চেয়ে নিকৃষ্ট কাজ আর কী হতে পারে? কাজেই এ নেয়ামতের দিন তাঁর কোনো অবাধ্যতা যেন না হয়, সে দিকে লক্ষ্য রাখা সকল মুসলমানের অবশ্য কর্তব্য।
লেখক : মুহাদ্দিস ও খতিব