ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল ২০২৫ , ২৬ চৈত্র ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

শিক্ষকতায় নতুন চ্যালেঞ্জ

মতামত

আহমাদ হোসাইন, আমাদের বার্তা

প্রকাশিত: ০৮:৩০, ৭ এপ্রিল ২০২৫

সর্বশেষ

শিক্ষকতায় নতুন চ্যালেঞ্জ

একুশ শতকের দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বে শিক্ষাক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য রূপান্তর ঘটেছে, যা বিশ্বব্যাপী শিক্ষকদের জন্য নতুন ও অনন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। বিশেষ করে ঘন ঘন কারিকুলামের পরিবর্তন, ভর্তি পদ্ধতিতে লটারির প্রবর্তন, প্রযুক্তির প্রসার, শিক্ষার্থীর মানসিক স্বাস্থ্যের বিবর্তন, শিক্ষার্থীদের জনসংখ্যা কাঠামো এবং ক্রমবর্ধমান শিক্ষাগত চাহিদা শিক্ষার পরিবেশকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করেছে। প্রতিনিয়ত শিক্ষকদের হতে হচ্ছে নতুন অবস্থার মুখোমুখি।

ঘন ঘন কারিকুলাম পরিবর্তন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদর জন্য বেশ কিছু চ্যালেঞ্জিক প্রভাব ফেলছে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-ঘন ঘন কারিকুলাম পরিবর্তনে শিক্ষার্থীদের নতুন নতুন বিষয় নির্ধারণ, পাঠন-পঠনে নতুন নতুন স্ট্র্যাটেজি বা নিয়ম-কানুন, নতুন কনটেন্ট সবকিছুই শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয়ের জন্য মানসিক চাপ সৃষ্টি করছে; ফলে শিক্ষক যেমন চাপের মুখে থাকছেন তেমিন শিক্ষার্থীও পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নের জন্য কারিকুলাম পরিবর্তন করা হলেও ঘন ঘন কারিকুলাম পরিবর্তনের ফলে গুণগত শিক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

বর্তমানে গ্রাম কিংবা শহরের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর মোবাইল আসক্তি প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে, যা তাদের শারীরিক, মানসিক এবং একাডেমিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করছে। অযথা রাত্রিজাগরণ, অপর্যাপ্ত ঘুম, তিরিক্ষি মেজাজ সবমিলিয়ে পড়াশোনায় মনোযোগ ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। এর ফলে তাদের পাঠের প্রতি আগ্রহ হ্রাস ও একাডেমিক পারফরম্যান্স খারাপ হচ্ছে।

এ ছাড়াও দীর্ঘ সময় মোবাইল ফোনে গেমখেলা বা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করায় চোখের সমস্যা, মাড়ির ব্যথা, মাথা ব্যথা এবং ঘুমের সমস্যার মতো নানান সমস্যা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অনেক সময় এক জায়গায় বসে দীর্ঘক্ষণ মোবাইল ব্যবহারের ফলে শারীরিক অস্বস্তি বা পিঠ ও কোমরের ব্যথার মতো রোগের উপসর্গ ব্যাপকহারে লক্ষণীয়।

মোবাইল ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার শিক্ষার্থীদের পারিবারিক, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটছে, গড়ে উঠছে অসামাজিক প্রজন্ম। তারা সামাজিক যোগাযোগের চেয়ে মোবাইলের মাধ্যমে ভার্চ্যুয়াল যোগাযোগে বেশি সময় দেয়, যা তাদের বাস্তব জীবনকে প্রভাবিত করছে।

সোশ্যাল মিডিয়াতে অতিরিক্ত সময় কাটানো এবং অনলাইনে বন্ধুদের তুলনা করার ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ, মানসিক চাপ এবং আত্মবিশ্বাসের অভাব দেখা দিচ্ছে। মোবাইল আসক্তি শিক্ষার্থীদের করে তুলছে আত্মকেন্দ্রিক। এমন প্রজন্মকে শ্রেণিকক্ষে নিয়ন্ত্রণ করতে শিক্ষকদের বাড়তি চাপ মোকাবিলা করতে হচ্ছে।

শিক্ষকদের জন্য বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড়ো চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো শিক্ষাকে আরো কার্যকর করতে প্রযুক্তির সদ্ব্যবহার করা। ডিজিটাল সরঞ্জাম ও অনলাইন সম্পদের ব্যাপক সুযোগ থাকা সত্ত্বেও শ্রেণিকক্ষে এগুলো কার্যকরভাবে সংযুক্ত করা অনেক সময় অনেকের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। শিক্ষকদের অবশ্যই প্রযুক্তিতে দক্ষ হতে হবে যেনো তারা শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করতে পারেন এবং তাদের ক্ষমতায়ন করতে পারেন, একই সঙ্গে প্রযুক্তির সঠিক ও নৈতিক ব্যবহারের বিষয়ও নিশ্চিত করতে হবে।

একুশ শতকের শ্রেণিকক্ষ আগের চেয়ে অনেক বেশি বৈচিত্র্যময়, যেখানে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক, ভাষাগত ও সামাজিক-অর্থনৈতিক পটভূমির শিক্ষার্থীরা একত্রিত হচ্ছে। এই বৈচিত্র্য শিক্ষকদের জন্য যেমন সুযোগ তৈরি করেছে, তেমনি চ্যালেঞ্জও বয়ে এনেছে। শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষাপদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে, যাতে প্রতিটি শিক্ষার্থীর অনন্য চাহিদা পূরণ করা যায় এবং তারা শিক্ষা গ্রহণের সমান সুযোগ পায়। সাংস্কৃতিক সংবেদনশীলতা, পৃথকীকৃত শিক্ষাদান এবং ব্যক্তিকৃত শিক্ষাপদ্ধতি শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করতে সাহায্য করে। একই সঙ্গে, ভাষাগত প্রতিবন্ধকতা, সাংস্কৃতিক পার্থক্য এবং বিভিন্ন শিক্ষাগত পটভূমির শিক্ষার্থীদের মানিয়ে নেয়ার জন্য শিক্ষকদের কৌশলগত পরিকল্পনা করতে হবে।

একুশ শতকে শিক্ষার মূল লক্ষ্য শুধুমাত্র মুখস্থ বিদ্যার ওপর নির্ভরশীল নয়, বরং শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা, সৃজনশীলতা এবং সহযোগিতার ক্ষমতা বৃদ্ধি করাও অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। ফলে, শিক্ষকদের তাদের প্রচলিত শিক্ষাদান পদ্ধতি পরিবর্তন করতে হচ্ছে এবং ‘একই নিয়ম সবার জন্য’ নীতির পরিবর্তে ব্যক্তিকৃত ও অভিজ্ঞতামূলক শিক্ষাদানের দিকে মনোযোগ দিতে হচ্ছে। পৃথকীকৃত শিক্ষা, প্রকল্পভিত্তিক শিক্ষা এবং বাস্তব জীবনের উদাহরণ সংযুক্ত করা শিক্ষার্থীদের শেখার আগ্রহ বৃদ্ধি করতে পারে এবং তাদের ভবিষ্যৎ কর্মজীবনের জন্য প্রস্তুত করতে পারে। তবে, এই নতুন কৌশলগুলো বাস্তবায়ন করা শিক্ষকদের জন্য অত্যন্ত শ্রমসাধ্য এবং তাদের পেশাগত দক্ষতার ক্রমাগত উন্নয়ন প্রয়োজন।

একুশ শতকের শিক্ষকদের জন্য শিক্ষাদানের পথ অনেক চ্যালেঞ্জপূর্ণ হলেও, এটি শিক্ষাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার এক অনন্য সুযোগও তৈরি করেছে। প্রযুক্তিকে গ্রহণ করা, অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা প্রচার করা, শিক্ষণ পদ্ধতিকে পরিবর্তিত চাহিদার সঙ্গে খাপ খাওয়ানো এবং শিক্ষার্থীদের সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনার দক্ষতা বিকাশের মাধ্যমে শিক্ষকরা এই চ্যালেঞ্জগুলো সফলভাবে মোকাবিলা করতে পারেন। অবিরত পেশাগত উন্নয়ন, সহকর্মীদের সঙ্গে সহযোগিতা এবং শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে খোলামেলা যোগাযোগ এই চ্যালেঞ্জগুলোর সমাধানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার ক্ষেত্র ক্রমাগত পরিবর্তিত হচ্ছে, তাই শিক্ষকদেরও অবশ্যই উদ্ভাবনী, অভিযোজনক্ষম ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে। এই গুণাবলির মাধ্যমেই তারা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবেন এবং একুশ শতকের পরিবর্তনশীল বিশ্বে শিক্ষাকে কার্যকর ও অর্থবহ করে তুলতে পারবেন।

লেখক: সিনিয়র শিক্ষক

 

জনপ্রিয়