ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫ , ৩ বৈশাখ ১৪৩২ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

পাবলিক পরীক্ষায় পরিদর্শকের সম্মানী

মতামত

সাধন সরকার, আমাদের বার্তা

প্রকাশিত: ০৮:৩০, ৯ এপ্রিল ২০২৫

আপডেট: ১৬:২৪, ৯ এপ্রিল ২০২৫

সর্বশেষ

পাবলিক পরীক্ষায় পরিদর্শকের সম্মানী

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পাবলিক পরীক্ষা মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা। এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার একটা আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। দশম শ্রেণিতে ওঠার পরপরই একজন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে থাকে।

এটাই (প্রাথমিক সমাপনী ও জুনিয়র সার্টিফিকেট পরীক্ষা থাকা না থাকা সাপেক্ষে) একজন শিক্ষার্থীর জীবনে প্রথম পাবলিক পরীক্ষা। এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষাকে উচ্চশিক্ষার সোপান হিসেবে ধরা হয়। এই পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে একটা আশাব্যঞ্জক অনুভূতি কাজ করে। 

এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় মাঠ পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করে থাকেন মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকরা। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো পরীক্ষার হলে দায়িত্ব পালন। এ গুরুদায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে থাকেন কক্ষ পরিদর্শক তথা শিক্ষকেরা। আজকের এ লেখায় কক্ষ পরিদর্শকদের স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন ও তাদের যৌক্তিক সম্মানী নিয়ে আলোকপাত করবো।

কক্ষ পরিদর্শকদের দায়িত্ব পালনে স্বাধীনতা: আমার এক শিক্ষক মজা করে বলতেন, পরীক্ষায় পাস-ফেল শুধু পড়ালেখার ওপর নয়, পরীক্ষার হলে কক্ষ পরিদর্শকের দায়িত্ব পালনের ওপরও কিছুটা নির্ভর করে। বোধকরি শিক্ষক পরীক্ষার হলে স্বাভাবিক দায়িত্ব পালন ও স্বাভাবিকের চেয়ে কম দায়িত্ব পালন তথা শিক্ষার্থীদের ছাড় দেয়ার কথা বলেছেন! বলতে শোনা যায়, পিতামাতার পরেই শিক্ষকের অবস্থান।

কিন্তু বর্তমান সময়ে শিক্ষকের সেই অবস্থান আছে কি না সেটা যথেষ্ট আলোচনার দাবি রাখে। একজন শিক্ষক কখনোই শিক্ষার্থীর খারাপ চান না। পাবলিক পরীক্ষার হলে অনেক সময় কক্ষ পরিদর্শক তার দায়িত্ব স্বাধীনভাবে পালন করতে পারছেন না। একজন শিক্ষার্থী যখন পরীক্ষার হলে দেখাদেখির সুযোগ খুঁজতে থাকে তখন তাকে এটা নির্দেশনার বাইরের কাজ বলে প্রাথমিক অবস্থায় সতর্ক করা হয়।

কিন্তু দেখাদেখির কাজটি যখন একাধিকবার হয় তখন শিক্ষক নিয়ম অনুসারে তার উত্তরপত্র নির্দিষ্ট সময়ের জন্য রেখে দেয়াসহ নানাবিধ ব্যবস্থা নিতে পারেন। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় বিভিন্ন কারণে দায়িত্বরত কক্ষ পরিদর্শক পরীক্ষার হলে স্বাভাবিকভাবে দায়িত্ব পালন করলেও অনেক আদুরে শিক্ষার্থী শিক্ষকের বিরুদ্ধে সুবিধা না দেয়ার অভিযোগ আনেন।

ক্ষেত্রবিশেষে মুষ্টিমেয় শিক্ষার্থীর অসদাচরণের শিকার হতে হয় কক্ষ পরিদর্শককে। স্বাভাবিক দায়িত্ব পালন করার ফলে কিছু শিক্ষার্থীরা সুবিধা না পেলে পরের দিন ওই শিক্ষককে কক্ষ পরিদর্শকের দায়িত্ব পালনে আর ডাকা হয় না বলেও শোনা যায়। অনেক সময় দেখা যায়, কক্ষ পরিদর্শকের দায়িত্ব কিছু শিক্ষার্থীর মনোপুত না হলে পরীক্ষা চলাকালীন বাইরে যাওয়ার নাম করে অফিসে গিয়ে সুবিধা না পাওয়ার অভিযোগ করার মতো ধৃষ্টতাও দেখায়। কেন্দ্রের ভেতরে পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা দু-একজন নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকের কারণে শিক্ষার্থীরা এমন দুঃসাহস দেখাতে পারে।

সব কেন্দ্রে যে এই পরিস্থিতি তৈরি হয় বিষয়টা এমন না। কিছু কিছু কেন্দ্রে এমন অসংগতি দেখা যায়। মাধ্যমিক শাখার অংশ হিসেবে যখন উচ্চ মাধ্যমিকের পাবলিক পরীক্ষায় কক্ষ পরিদর্শকের দায়িত্ব পালন করতে হয় তখন এহেন পরিস্থিতি মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। অনেক শিক্ষক তথা কক্ষ পরিদর্শক এমন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির কারণে ভেতরে ভেতরে অপমানিত বোধ করেন আবার অনেকে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় মেনে নিয়ে মুখ বুঁজে এড়িয়ে চলেন।

এসব কারণে অনেক শিক্ষক পাবলিক পরীক্ষায় দায়িত্ব পালন থেকে এড়িয়ে চলতে চান। পরিস্থিতি দেখে মনে হয় কিছু শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে এসেছে অন্যেরটা দেখে পাস করবে বলে। তবে পরীক্ষার হলে সুবিধা পাওয়া কিংবা দায়িত্বরত কক্ষ পরিদর্শকের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনার মতো কাজ প্রথম সারির শিক্ষার্থীরা করেন না। সুবিধা না পাওয়ার যন্ত্রণায় কাতরান পেছনের সারির মুষ্টিমেয় শিক্ষার্থী।

সেই পেছনের সারির শিক্ষার্থীরা যদি একই রুমে অবস্থান করে তাহলে তো অবস্থা বেগতিক। প্রশ্ন হলো, সুবিধা নিয়ে পাবলিক পরীক্ষায় কৃতকার্য হওয়ার মনোভাব কিছু শিক্ষার্থীদের মনে তৈরি হলো কী করে? কেন্দ্র সচিব ও স্থানীয় পরীক্ষা সংশ্লিষ্টরা যে বিষয়টির ব্যাপারে অবগত না-তাও নয়। তারা অনেক সময় জেনেও না জানার মতো এড়িয়ে চলেন। মনে রাখা দরকার, দায়িত্বরত শিক্ষক শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থেই স্বাভাবিক দায়িত্ব পালন করে থাকেন। কেনোনা যেকোনো সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এসে সামান্যতম অনিয়ম দেখা মাত্রই শিক্ষার্থী বহিষ্কারের মতো ঝুঁকি তৈরি হয়।

একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট যখন কেন্দ্র ভিজিট সাপেক্ষে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করেন তিনি তার চোখের সামনে ত্রুটি পেলেই সেটার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক অ্যাকশন নেন। তাই শিক্ষার্থীসহ সার্বিক সতর্কতার স্বার্থেই শিক্ষককে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে হয়। তিন ঘণ্টার এক একটা পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে দীর্ঘ সময়ব্যাপী শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতি নিতে হয়েছে। সামান্য ভুলের জন্য সেই পরিশ্রম বা সময় কিংবা অর্থের বিনিয়োগ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। প্রতিবছর এসএসসি বা সমমানের পাবলিক পরীক্ষায় শত শত শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অসদাচরণের দায়ে বহিষ্কার হয়।

অনেক শিক্ষক শিক্ষার্থীকে নকল সরবরাহ বা নিয়ম লঙ্ঘনের দায়ে বহিষ্কার কিংবা দায়িত্ব থেকে অব্যাহিত পান। পরীক্ষায় নকল করা বা নকল সরবরাহের ভিডিয়ো অনেক সময় ভাইরাল হয়। বেশিরভাগ কেন্দ্রে পরীক্ষার রুমগুলোতে ক্যামেরা রয়েছে। সেসব ক্যামেরা সচল রেখে সুন্দর পরীক্ষা আয়োজনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। সর্বোপরি কর্তৃপক্ষ চাইলেই পাবলিক পরীক্ষায় সঠিক ব্যবস্থাপনা সম্ভব। 

আমার এক সহকর্মী বলেছিলেন-শিক্ষার্থীরা কেমন জ্ঞান, দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধের শিক্ষা অর্জন করলো তা যাচাই করার জন্য পরীক্ষার হল থেকে একটু বের হয়ে দেখুন, উত্তর পেয়ে যাবেন। পরীক্ষার হলে কক্ষ পরিদর্শক কর্তৃক সুবিধা দেয়া বা নেয়া ও অনিয়ম করে মুষ্টিমেয় শিক্ষার্থীদের সহায়তা করাসহ বিভিন্ন কারণে শিক্ষকদের সম্মান আজ তলানিতে।

শিক্ষকদের সম্মান শিক্ষকরাই নষ্ট করছেন বলে বিভিন্ন সময় প্রশ্ন উঠেছে। যে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের অনিয়মের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে ফেলছেন বা সহায়তা করছেন তিনি অজান্তেই নিজেকে তো বটেই বোধকরি শিক্ষক সমাজকেই হেয় করছেন। পাবলিক পরীক্ষার সময় শিক্ষার্থীদের মধ্যে যদি একটু ভয় ভয় কাজ করে সেটা দোষের না। এই ভয়কে জয় করার মাঝেও আনন্দ আছে। পাবলিক পরীক্ষা পরীক্ষার মতো হোক। যোগ্য শিক্ষার্থীরাই এগিয়ে যাক।

কক্ষ পরিদর্শকের সম্মানী: এসএসসির মতো এতো বড় পাবলিক পরীক্ষায় কক্ষ পরিদর্শকের সম্মানী নিয়ে নানা প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে। দুঃখের বিষয় হলো, বোর্ড থেকে একক কোনো দৈনিক সম্মানী নির্ধারণ করা নেই। বাংলাদেশের বিভিন্ন উপজেলায় এসএসসি পরীক্ষায় কক্ষ পরিদর্শকের দৈনিক সম্মানীর ভিন্নতা রয়েছে। কোনো উপজেলায় ১৫০ টাকা, কোথাও ১৭০ টাকা, আবার কোথাও ২০০ টাকার ওপরে।

মোটকথা কক্ষ পরিদর্শকের এই সম্মানী উপজেলাভিত্তিক সর্বনিম্ন ১৫০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা পর্যন্ত। প্রশ্ন হলো, একই পরীক্ষায় একই সময় ডিউটি করে কেনো সম্মানী প্রাপ্তির ক্ষেত্রে এই বৈষম্য হবে? কেন্দ্রে শিক্ষার্থী সংখ্যা কমবেশি হলে কক্ষ পরিদর্শকের সংখ্যাও কমবেশি হবে-এটাই স্বাভাবিক।

তাতে কক্ষ পরিদর্শকের সম্মানীর ক্ষেত্রে বৈষম্য হওয়ার কথা নয়। তিন ঘন্টা কক্ষ পরিদর্শকের দায়িত্ব পালন করে ১৫০ টাকা সম্মানী কতোটা যৌক্তিক? কক্ষ পরিদর্শকের সম্মানী নিয়ে দেশের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কেন্দ্রে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির মতো ঘটনা ঘটেছে বলে পত্রিকায় এসেছে। কক্ষ পরিদর্শকদের জন্য একটা যৌক্তিক একক সম্মানী নির্ধারণ করা সময়ের দাবি। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, যতো বছর পঞ্চম শ্রেণির প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী হয়েছে সেখানে সারাদেশে কক্ষ পরিদর্শকের দৈনিক একক সম্মানী ছিলো ২০০ টাকা করে। সেটাও বেশ কয়েক বছর আগের ঘটনা। তাই এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় কক্ষ পরিদর্শকের একক ও যৌক্তিক সম্মানী নির্ধারণ করার ব্যাপারে সব বোর্ডের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

লেখক: শিক্ষক

 

জনপ্রিয়