
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিজেই উচ্চশিক্ষিত মেধাবী গবেষক। তার সুনিপুণ দক্ষতায় সর্বদলীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জাতীয় সরকার গঠনের মাধ্যমে বিভিন্ন সেক্টরে উচ্চশিক্ষিত মেধাবী দক্ষ গবেষকদেরকে দেশের উন্নয়নে কাজে লাগিয়ে খুব দ্রুত দেশকে উন্নতির শিখরে নিয়ে যাবেন এই আশা করতেই পারি।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দেশ পরিচালনায় এই নয় মাসের সফলতা ব্যর্থতা বিশ্লেষণ না করার মত এমন মানুষজন খুব কমই আছে।
বাস্তবতার নিরিখে, অনলাইন অফলাইন পত্র পত্রিকা আর সামাজিক গণমাধ্যমের বদৌলতে যতটুকু জানা ও বোঝা যায়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সফলতার পাল্লাটাই বেশ ভারী। এক্ষেত্রে প্রধান উপদেষ্টাসহ বেশ কয়েকজন বয়স্ক অভিজ্ঞ দক্ষ উপদেষ্টা ক্রেডিট পাওয়ার যোগ্য ।
দেশের আর্থিক খাত বিবেচনা করলেই সামগ্রিক একটা সফলতার চিত্র ফুটে উঠে। প্রথমদিকে শিক্ষা থেকে শুরু করে সবক্ষেত্রে যেরকম অস্থিরতা নৈরাজ্য সৃষ্টি করার পাঁয়তারা চলছিলো তার অনেকাংশে কমে গেছে।
যতটুকু অস্থিরতা চাঁদাবাজি দখলদারিত্ব এখনও বিদ্যমান তার বেশিরভাগই সেইসব লুটেরা সন্ত্রাসী যারা নিজেদের স্বার্থে নিজেদের ফায়দা হাসিলে বাংলাদেশ জন্মের পর থেকে আজ অবধি সুযোগের সন্ধানে ঘুরে বেড়ায় অহরহ।
আর একটা কথা তো সবারই জানা যে কিছু রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় থেকে দলের নিষেধাজ্ঞা তোয়াক্কা না করে, কর্মী নামক দুষ্কৃতকারীরা সর্বক্ষেত্রেই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দখলদারিত্ব চাঁদাবাজি করছে। যা জনগণের চেয়ে দেখার ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না। যদিও সরকার কঠোর হস্তে এসব দমন করতে চেষ্টা করে যাচ্ছে অনবরত।
যা বলছিলাম, সফলতার প্রাথমিক পর্যায়ে যা লক্ষনীয়ভাবে জনগণের মাঝে পরিলক্ষিত হয়েছে তা সবার চোখ এড়িয়ে যাওয়ার মতো কোনো বিষয় নয় বরং পুরো রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে থাকায় জনমনে স্বস্তিসহ ঈদের আমেজে দেশের মানুষ খুব খোশমেজাজেই ছিলো।
উপরন্তু রাজধানী ছেড়ে গ্রামে ঈদ করা ঘরমুখো মানুষগুলোও যেনো আসা-যাওয়ায় অত্যন্ত দ্বিধা শঙ্কাহীনভাবে পার করেন তাও লক্ষণীয়। জনগণ কিন্তু উপস্থিত ও বর্তমানে চোখের সামনে ভালো কিছু যা দেখতে পায় তাতেই বুঝে ফেলে এই হলো জনগণের সরকার, এই ইউনূস সরকারই জনগণের জন্য উপযুক্ত, দেশের অগ্রগতির জন্য ড. ইউনূসকেই দরকার।
আবার জনগণের মাঝে আশার সঞ্চার হয়েছে যেহেতু আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য যার যার দায়িত্বশীল আচরণ ও কর্তব্যের কোন ঘাটতি ইদানীং চোখে পরে না বরং জনগণের জানমালের নিরাপত্তাসহ প্রশাসনে অফিসিয়াল হয়রানি ঘুষ দূর্নীতি ইত্যাদি কমে গেছে বহুলাংশে। দেশের প্রতিটি জেলার ডিসি এসপি যেহেতু মাঠপর্যায়ে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধি তাই অধিকাংশ ডিসি এসপি তাদের দক্ষতা ও কর্মস্পৃহার মাধ্যমে জনগণের কাছে পৌছানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন এবং অনেক জেলায় তা দৃশ্যমান।
তবে শিক্ষা ক্ষেত্রে আশানুরূপ সাফল্য কবে নাগাদ আসতে পারে তা জানা না থাকলেও সরকার কিন্তু শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতিবাজ অসৎ কর্মকর্তাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে যাতে শিক্ষা দপ্তর কালিমা মুক্ত করা যায়। জাতির মেরুদণ্ডকে সোজা করে দাড় করানোর জন্য শিক্ষা ক্ষেত্র থেকে দুর্নীতিবাজ ঘুষখোরদের মূলোৎপাটন করা একান্তই জরুরি এবং সময়ের দাবি।
পাঠ্যবই নিয়ে শিক্ষার্থী অভিভাবক ও শিক্ষকদের মধ্যে এখন আর কোন দ্বিধাসংকোচ বা দুশ্চিন্তা নেই যেহেতু বই বিতরণ প্রায় সমাপ্তির পথে। সফলতার আরেক ধাপ বিমসটেক সম্মেলনে ড. ইউনুসের যুগান্তকারী পদক্ষেপ ও উপস্থাপনা, সেইসঙ্গে বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলনের আয়োজন যা যুগান্তকারী ঘটনা এবং এই সম্মেলনই বাংলাদেশকে যে অনেক দূর নিয়ে যাবে তা সহজেই অনুমেয়।
তাছাড়া সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার চীন সফর পুর্বের সবকিছুকেই অতিক্রম করে আশার সঞ্চার সৃষ্টি হয়েছে। দেশের রিজার্ভ নিয়ে জনগণ এখন খুশি যা পঁচিশ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে আর রেমিট্যান্স যেভাবে অর্থনীতির চাকা সচল করছে তা দেখে নিন্দুকেরাও আর নিন্দা করার খেই পায় না।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস একজন পথপ্রদর্শক, যিনি বাংলাদেশের জনগণ আর সব রাজনৈতিক দলকে এক কাতারে এনে রাজনীতির মোড় ঘুড়িয়ে দিয়ে সৃষ্টি করতে পারেন জাতীয় জাগরণ। এই গণজাগরণের মাধ্যমে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে গড়ে তুলতে পারেন এক জাতীয় সরকার। যার ফলে হয়তো বাংলাদেশকে উন্নতির মহা সোপানে পৌঁছাতে খুব বেশিদিন অপেক্ষা করতে হবে না।
লেখক: সিনিয়র শিক্ষক
(মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন)