ঢাকা সোমবার, ১৪ এপ্রিল ২০২৫ , ৩০ চৈত্র ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

ফিলিস্তিনি নিষ্পাপ শিশুদের কী দোষ

মতামত

সাধন সরকার, আমাদের বার্তা

প্রকাশিত: ০৮:৩০, ১৩ এপ্রিল ২০২৫

সর্বশেষ

ফিলিস্তিনি নিষ্পাপ শিশুদের কী দোষ

শিশুদের আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠেছে গাজার আকাশ-বাতাস। চারদিকে শুধু হাহাকার আর নিঃসঙ্গতা। গাজা যেনো বিধ্বস্ত নগরী। মৃত্যুর মিছিল চলছেই। নির্বিচারে শিশু হত্যা চলছে। ফিলিস্তিনের এই উপত্যকাটিতে শিশুদের যেনো বাঁচার অধিকার নেই।

ইসরায়েলের বর্বর হামলায় পাখির মতো প্রাণ হারাচ্ছে শিশুরা। গাজার পরিস্থিতি এমন যে কখন কোন শিশু মারা যাবে তা কেউ বলতে পারে না। নির্মম হামলায় শিশু, নারীসহ সব বয়সী মানুষ মারা যাচ্ছে। বাড়িঘর গুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। হাজার হাজার শিশু হত্যার বিষয়টি বিশ্ববাসীর কাছে জঘন্যতম অপরাধ বলে আলাদাভাবে নজরে এসেছে। এভাবে কী ‘জোর যার মুল্লুক তার’ মতো করে শিশু হত্যা করা যায়?

ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলের বিবাদ বেশ পুরনো। ফিলিস্তিনিরা তাদের অধিকার ও ভূমি রক্ষার জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েল একটু একটু করে ফিলিস্তিনিদের ভূমি দখল করছে বলে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের নিজ নিজ ভূখন্ডে দুটি আলাদা জাতি গঠনের চেষ্টা বারবার ভেস্তে গেছে।

যদিও নিজ ভূখন্ডে স্বাধীনভাবে বসবাস করার দীর্ঘদিনের অভিপ্রায় ফিলিস্তিনিদের। দুই ভূখন্ডে এক অপরের ওপর হামলা পুরনো খবর। সর্বশেষ গাজায় ইসরায়েলের হামলা শুরু হয় ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর মাসে। সেদিন থেকে থেমে থেমে বিভিন্ন সময়ের হামলায় ৫০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে কয়েক লাখ। মিসর, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক মাসের আলোচনার পর চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধ বিরতি কার্যকর হয়।

গাজা উপত্যকায় একের পর এক বোমা হামলা প্রসূতি মা ও নবজাতকদের জন্য মহাসংকট বয়ে নিয়ে এসেছে। ‘ওয়ার চাইল্ড অ্যালায়েন্স ও গাজাভিত্তিক কমিউনিটি ট্রেনিং সেন্টার ফর ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্টের’ একটি প্রতিবেদন বলছে, উপর্যুপরি হামলায় ৯৬ শতাংশ শিশু মনে করে তাদের মৃত্যু আসন্ন। প্রায় অর্ধেক শিশু আক্রমণের কারণে ‘মরে যাওয়ার ইচ্ছা’ প্রকাশ করেছে। একের পর এক হামলায় ফিলিস্তিনি উপত্যকার শিশুরা মানসিক ট্রমার ভিতর দিয়ে যাচ্ছে।

বলা হচ্ছে, মানসিক আঘাতে জর্জরিত একটি প্রজন্ম গড়ে উঠছে ফিলিস্তিনে। চারপাশের ধ্বংসলীলা দেখতে দেখতে বেঁচে থাকা শিশুরা হয়তো মনে করছে তাদেরও মৃত্যু সন্নিকটে। এই যুদ্ধটা মনে হচ্ছে শিশুদেরই বিরুদ্ধে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শৈশবের বিরুদ্ধে। শিশু হত্যার এই পরিকল্পিত ব্যবস্থার মাধ্যমে আসলে কী স্বার্থসিদ্ধি করা সম্ভব হবে? ক্ষোভে-দুঃখে-কষ্টে ফুঁসছে ইসরায়েল।

কোলের সবচেয়ে প্রিয় ধনকে হারিয়েও ফিলিস্তিনিরা যেনো আরো বেশি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে উঠছে। শোককে তারা শক্তিকে পরিণত করছে। যে কারণে তাদের সন্তানদের হারাতে হচ্ছে সেই স্বাধীনতার দাবিতে তারা যেনো আরো ঐক্যবদ্ধ। শিশুদের ওপর রক্তাক্ত হামলা ও হত্যা করে কোনো জাতি যুদ্ধে সফল হয়েছে বলে জানা নেই।

সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় এতিম হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার শিশু। জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার (ইউএনআরডব্লিউএ) তথ্য মতে, গাজায় গড়ে প্রায় প্রতিদিন ১০০ শিশু হতাহত হচ্ছে। খাদ্য ও পানির সংকটে শিশুদের জীবন সংকটাপন্ন। পৃথিবীর মানুষকে বোবা বানিয়ে এক জঘন্য শিশু নিধনযজ্ঞে নেমেছে ইসরায়েল।

ঈদের আগে ও পরে ব্যাপক হামলা গাজাবাসীর দুর্ভোগ বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ইতোমধ্যেই শোকের মাতম চলছে গাজায়। জেনেশুনে শিশু হত্যা মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধ। জাতিগত নিধনের পরিকল্পিত এই খেলা বন্ধ না হলে গাজার শিশুদের জীবন রক্ষা কঠিন হয়ে পড়বে।

পাশাপাশি বেঁচে যাওয়া শিশুদেরও আগামী প্রজন্ম হয়তো মারাত্মক মানসিক আঘাতের মধ্য দিয়ে জীবন কাটাবে। শিশুদের প্রতি এই নৃশংসতা বন্ধে নৈতিক ও আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ রয়েছে বিশ্ববাসীর। জাতিসংঘ এই হত্যাকাণ্ডের দায় এড়াতে পারে না। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্য যেনো শুধু নিজেদের স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত। তাদের নিজেদের স্বার্থের বাইরে অন্যকিছু নিয়ে ভাবে বলে মনে হয় না। ভাবলে হাজার হাজার শিশুর করুণ মৃত্যু তাদের হৃদয়কে নাড়া দিতো। নিষ্পাপ শিশুরা এই হত্যাকাণ্ডে কোনো প্রকার অপরাধের সঙ্গে জড়িত নয়। তাদের কেনো করুণভাবে মৃত্যুবরণ করতে হবে?

একবিংশ শতাব্দীর মানবাধিকার রক্ষার এই সময়টাতে শিশুরা কেনো যুদ্ধের বলি হবে? প্রশ্ন জাগে, গাজার শিশুদের কী বেঁচে থাকার অধিকার নেই? তারা কী প্রাণে বাঁচার ন্যূনতম অধিকারটুকু পেতে পারে না? নিষ্পাপ শিশুদের রক্ষা করতে না পারলে হয়তো আহত ও নিহতের আত্মার অভিশাপ পৃথিবীর বিবেকহীন মানুষকে আজীবন বয়ে বেড়াতে হবে।

লেখক: শিক্ষক

 

জনপ্রিয়