ঢাকা বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫ , ৯ বৈশাখ ১৪৩২ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

কালো টাকার চাপ থেকে মুক্তি কবে

মতামত

মনোয়ার হোসেন, আমাদের বার্তা

প্রকাশিত: ০৬:০০, ২২ এপ্রিল ২০২৫

সর্বশেষ

কালো টাকার চাপ থেকে মুক্তি কবে

একই দেশের অভ্যন্তরে মূল ধারার বা ফর্মাল বা অফিসিয়াল অর্থর্নীতির পাশাপাশি সমান্তরাল কোনো অর্থনীতির অস্তিত্ব থাকলে সেই দেশের অর্থনীতি সব সময়ই ঝুঁকি সৃষ্টি করে থাকে। যদি সেই সমান্তরাল অর্থনীতির পরিমাণ বা বিস্তার বড় হয় তাহলে ঝুঁকিও বড় রকমের থাকে। এ কারণে সংশ্লিষ্ট সরকারকে সব সময় যতদূর সম্ভব সচেতন থাকতে হয়, যাতে সেই সমান্তরাল অর্থনীতি মূলধারার অর্থনীতিকে বিপদে ফেলতে না পারে। অর্থাৎ অর্থনীতিকে যেনো বিপদগ্রস্ত করতে না পারে। এ কারণে পুঁজিবাদি সকল রাষ্ট্রকেই মূলধারার অর্থনীতির গতি বা ফাংশনের উপর সর্বদা তীক্ষ্ণ নজরদারি করতে হয়।

সমান্তরাল অর্থনীতি কালো অর্থনীতি বা ‘ব্ল্যাক ইকোনমি’ হিসাবেই সর্বত্র পরিচিত। কালো অর্থনীতির সৃষ্টি হয় যদি অস্তিত আয়কর কর্তৃপক্ষের কাছে গোপন রেখে যে কোনো একটি ঘোষণা দিয়ে আয়কর দেয়া হয়। আয়ের যে অংশ কর অনারোপিত থাকে জাতীয় আয়ের হিসাবে যুক্ত হয় না, এই অপ্রদর্শিত আয়ই কালো অর্থনীতি বা অনানুষ্ঠানিক আয়ের জন্ম দেয়। এই কালো অর্থনীতি অত্যন্ত বেপরোয়া এবং রহস্যজনকভাবে দ্রুত বর্ধনশীল। একই সাথে এই অর্থনীতি অত্যন্ত ক্ষমতাশীল। দেশের এবং দেশের বাইরে অর্থাৎ পৃথিবীব্যাপী সকল প্রকার বে-আইনি, ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ কালো অর্থনীতির টাকা দিয়েই অর্থায়ন করা হয়ে থাকে বলে সকল অর্থনীতিবিদ, গবেষক এবং সু-সরকারেরা বিশ্বাস করে থাকেন।

কালো অর্থনীতির নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারের উদ্দেশ্যে, অর্থনৈতিক পরিকল্পনা/নীতি এবং তার সঠিক বাস্তবায়নের উপর। সরকার যদি চায় তবে পরিকল্পনা বা নীতিতে কিছু ভুল ত্রুটি থাকলেও উল্লেখযোগ্যভাবে কালো টাকার সৃষ্টি এবং বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা না গেলেও।

এখন প্রশ্ন, বাংলাদেশে কালো টাকার পরিমাণ কতো বা জাতীয় অর্থনীতির তুলনায় কতো অংশ। কালো টাকার লেনদেন যেহেতু গোপনে বা লোক চক্ষুর আড়ালে হয়ে থাকে সে কারণে পরিমাণ নির্দিষ্ট করা দূরূহ ব্যাপার। বিভিন্ন গবেষণা সংস্থা এবং গবেষকদের মতে বাংলাদেশের জিডিপির শকতরা ৩৫ ভাগ নিয়ন্ত্রণ করে কালো টাকা। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে কালো টাকার পরিমাণ সম্ভবতঃ সব চাইতে বেশী। পৃথিবীর সব দেশেই, দুই বা তিনটি দেশ ব্যতীত, কালো টাকা বা “ব্ল্যাক ইকোনমির” অস্তিত্ব রয়েছে।

কালো টাকার বিরূপ প্রভাবে দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতা আসছে না, সামাজিক ন্যয় বিচারে প্রতিবন্ধকতা আসছে, উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ হ্রাস পাচ্ছে, মুদ্রাস্ফীতি বাড়ছে, দ্রব্যমূল্য বাড়ছে, আইনের শাসন দুর্বল হচ্ছে, সমাজে দুর্বৃত্তায়ন বাড়ছে। এই সমস্ত নেতিবাচক প্রভাব স্বীকার করেছে, কিন্তু কি উপায়ে এই ধ্বংসাত্মক প্রক্রিয়া বন্ধ করা যায় তা এখন পর্যন্ত কোনো সরকারই নির্ধারণ করতে পারেনি। কালো টাকাকে অর্থনীতির মূলধারায় নিয়ে আসার জন্য সরকার বিভিন্ন উপায়ে চেষ্টা করেছে। কিন্তু ফল মোটেই আশাব্যঞ্জক নয়। কালো টাকায় মালিকেরা সরকার ঘোষিত ইনসেন্টিভ বা প্রণোদনায় মোটেও আকৃষ্ট নয়। এই প্রেক্ষিতে সরকারকে নতুন কোনো পন্থা অবলম্বনের চেষ্টা করতে হবে যা অর্থনৈতিক নীতির ফাঁক-ফোকরের কারণে প্রয়োগকালীন সময়ে বাধাগ্রস্ত হবে না।

লেখক : উপদেষ্টা সম্পাদক, দৈনিক আমাদের বার্তা

জনপ্রিয়