ঢাকা শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫ , ১২ বৈশাখ ১৪৩২ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ব্যাঙের ভূমিকা

মতামত

সাধন সরকার, আমাদের বার্তা

প্রকাশিত: ০৮:৩০, ২৬ এপ্রিল ২০২৫

সর্বশেষ

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ব্যাঙের ভূমিকা

আজ ২৬ এপ্রিল ‘বিশ্ব ব্যাঙ সংরক্ষণ দিবস’। প্রতি বছর এপ্রিল মাসের শেষ শনিবার পালন করা হয় ‘বিশ্ব ব্যাঙ রক্ষা দিবস’। সব প্রজাতির ব্যাঙ সংরক্ষণে সচেতনতা তৈরিতে দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে।

প্রকৃতি-পরিবেশের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ ব্যাঙ। বর্ষা মৌসুমে ব্যাঙের ‘ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ’ সবার কাছে পরিচিত। গ্রাম-বাংলার যাপিত জীবনের সাথে ব্যাঙ গুরুত্বপূর্ণ এক অনুষঙ্গ। বাংলা সাহিত্যে ও সামাজিক রীতিনীতিতেও ব্যাঙের প্রসঙ্গ এসেছে। 

বর্ষাকালে ডোবা-নালায় ঝিঁঝি ও কোলা ব্যাঙের চিরচেনা শব্দের সাথে সবাই পরিচিত। গ্রাম-বাংলার পরিবেশ ব্যাঙের প্রধান আবাসস্থল হলেও শহরেও দেখা যায় অনেক প্রজাতির ব্যাঙ। একটা সময় ছিল যখন ব্যাঙের টিকে থাকা ও সংরক্ষণ নিয়ে ভাবা লাগতো না। কিন্তু সময় বদলেছে।

জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা প্রকৃতি বিরুদ্ধ কর্মকাণ্ডে প্রাণ-প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্যের উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মহাসংকট। ব্যাঙের কিছু প্রজাতি সংগ্রাম করে এখনো শহরে টিকে আছে। আবার কিছু প্রজাতি বিপন্নপ্রায় তালিকায় স্থান পেয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন, ব্যাঙের আবাসস্থল ধ্বংস ও মানুষের অসচেতনতার কারণে ব্যাঙের মতো প্রাণীদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।

ব্যাঙ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মানুষের বন্ধু। ব্যাঙ মানুষের উপকার ছাড়া কখনো ক্ষতি করে না। একথা এখন বলতে শোনা যায় যে, শহরে ব্যাঙ কমে যাওয়ায় মশার উপদ্রব বেড়েছে। বেশি দিন আগের কথা নয়, মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে ঢাকা শহরে মশা কমাতে ব্যাঙ ছাড়ার পরিকল্পনা করা হয়েছিল।

এমনকি ব্যাঙ ছাড়াও হয়েছিল। ব্যাঙ তার দেহের তুলনায় প্রতিদিন দ্বিগুণ খাবার ভক্ষণ করে। এর অর্ধেকের বেশি থাকে ক্ষতিকর পোকামাকড়। সে হিসাবে এক তথ্যে বলা হয়েছে, ব্যাঙ তার জীবনে পোকা দমনের মাধ্যমে প্রায় ৪ লাখ টাকার ফসল রক্ষা করে কৃষককে সহায়তা করে থাকে।

ফসল ও মাটির গুণগত মান রক্ষায়ও ব্যাঙের ভূমিকা রয়েছে। এরা খাদ্যশৃঙ্খলে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে থাকে। গবেষণায় পাওয়া গেছে, ব্যাঙের মূত্রে ইউরিয়া জাতীয় পদার্থ থাকে। যা মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে ফসল উৎপাদনে ভূমিকা রাখে। ব্যাঙের সবচেয়ে বড় উপকার মশা নিধনে। শহর এলাকায় ডেঙ্গু ও চিকনগুনিয়ার মতো রোগ দমনে ব্যাঙ খুবই কার্যকরী।

মশার বংশ ধ্বংস করে ব্যাঙ ক্ষতির হাত থেকে উপকার করে থাকে। কিন্তু দুঃখের কথা জলাভূমি ভরাট, শিল্পায়ন, নগরায়ণ ও দূষণের কবলে পড়ে ব্যাঙের প্রজাতি বিনষ্ট হচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, ব্যাঙ যে প্রাণ-প্রকৃতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ এটাই অনেকে মানতে পারে না। আর মানলেও গুরুত্ব দেয় না! 

সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি প্রতিটি প্রাণীর প্রকৃতিতে কোনো না কোনো অবদান রয়েছে। ব্যাঙ প্রকৃতির আশীর্বাদ। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন)-এর ২০১৫ সালের এক তথ্য বলছে, বাংলাদেশে ৪৯ প্রজাতির ব্যাঙ আছে। এর মধ্যে ১০ প্রজাতির ব্যাঙ বিপন্ন তালিকায় রয়েছে।

আরেক আন্তর্জাতিক সংস্থার তথ্য বলছে, বিশ্বের ব্যাঙের প্রজাতির সংখ্যা সাত হাজার ৬০০ এর কাছাকাছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াইল্ডলাইফ রিসার্চ ল্যাবরেটরির তথ্য মতে, বাংলাদেশে ৬৪ প্রজাতির ব্যাঙ রয়েছে। পরিচিত ব্যাঙের প্রজাতির মধ্যে রয়েছে কোলা ব্যাঙ, কুনো ব্যাঙ, গেছো ব্যাঙ, ঝিঁঝি ব্যাঙ, কটকটি ব্যাঙ, লাউ বিচি ব্যাঙ, সবুজ ব্যাঙ, মুরগি ডাকা ব্যাঙ ইত্যাদি।

ব্যাঙের বড় একটি অংশ রাস্তাঘাটে গাড়ি চাপা পড়ে মারা যায়। আবার দেশের কোনো কোনো স্থানে বর্ষা মৌসুমে ব্যাঙ খাওয়ার মতো খারাপ কর্মকাণ্ড দেখা যায়। ব্যাঙ ধরে মাংসের মতো খাওয়ার জন্য দুই পা কেটে রেখে দিয়ে বাকি অংশ ফেলে দেওয়া হয়।

এই ধরনের অভ্যাস ও কর্মকাণ্ড রোধ করতে হবে। সহজ কথায় ব্যাঙের প্রতি সদয় আচরণ করতে হবে। সচেতন হলে ব্যাঙ রক্ষা করা সম্ভব। তা না হলে শহরাঞ্চলে ব্যাঙের যে প্রজাতি এখনো জীবিত আছে তাও হারিয়ে যেতে সময় লাগবে না।

ক্ষতিকর পোকামাকড় দমন, খাদ্যশৃঙ্খল রক্ষায় ব্যাগ অপরিহার্য। তাই ব্যাঙের মতো উপকারী প্রাণীটি কমতে থাকলে জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা কঠিন হয়ে পড়বে। আর পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা না পেলে মানুষের টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।

লেখক: শিক্ষক

 

জনপ্রিয়