ঢাকা সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫ , ১৪ বৈশাখ ১৪৩২ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

অভিব্যক্তি প্রকাশের ইসলামি পরিভাষা

মতামত

আমাদের বার্তা, মুনীরুল ইসলাম

প্রকাশিত: ১৮:২৯, ২৮ এপ্রিল ২০২৫

সর্বশেষ

অভিব্যক্তি প্রকাশের ইসলামি পরিভাষা

মানুষের পুরো জীবনকে সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনা করার দিকনির্দেশনা রয়েছে ইসলামে। এমনকি যাপিত জীবনে চলাফেরা, কথাবার্তা ও কাজকর্মে মানুষের সঙ্গে অভিব্যক্তি প্রকাশের চমৎকার নির্দেশনাও রয়েছে এখানে। আল্লাহর বান্দা হিসেবে মানুষ নিজের খেয়াল-খুশিমতো চলতে পারে না। জিন ও মানুষকে আল্লাহ তায়ালা শুধু তাঁর ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। তাই মুসলমানের কোনো কাজ ইবাদত-বহির্ভূত হতে পারে না। তাদের অভিব্যক্তি প্রকাশও যেন ইবাদতে গণ্য হয়। তাই বিজাতীয় পরিভাষা পরিহার করে ইসলামি পরিভাষা ব্যবহার করা উচিত।

কাজকর্মে-কথাবার্তায় যথাস্থানে আলহামদুলিল্লাহ, ইনশাআল্লাহ, মাশাআল্লাহ, সুবহানাল্লাহ ইত্যাদি ইসলামি পরিভাষাগুলো ব্যবহার করব। এর দ্বারা আল্লাহর জিকির বা স্মরণের সওয়াব পাওয়া যাবে। কারণ, এগুলোও আল্লাহর জিকিরের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘(তারাই বুদ্ধিমান) যারা উঠতে, বসতে ও শয়নে সর্বাবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আকাশ ও পৃথিবীর গঠনাকৃতি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে (আপনা-আপনি বলে ওঠে), হে আমাদের রব! এসব আপনি অনর্থক ও উদ্দেশ্যহীন সৃষ্টি করেননি। বাজে ও নিরর্থক কাজ করা থেকে আপনি পবিত্র ও মুক্ত। কাজেই হে প্রভু! জাহান্নামের আজাব থেকে আমাদের মুক্ত করুন।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৯১) ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রহ.) বলেন, দুনিয়াতে মানুষের ওপর আল্লাহর সবচেয়ে বড় শাস্তি হচ্ছে তার জিহ্বাকে আল্লাহর জিকির থেকে বিরত রাখা।

Thank You, Good Bye, Tata, Good Morning, Congratulation ইত্যাদি ইসলামি সংস্কৃতি বা পরিভাষা নয়। জিকির তো নয়ই। এগুলো মানুষের জীবনে কোনো সুফল বয়ে আনে না। বর্তমানে কোনো কোনো মুসলমানও বিজাতীয় পরিভাষায় অভিব্যক্তি প্রকাশ করে নিজেদেরকে স্মার্ট ভাবতে চায়। মূলত ইসলামি পরিভাষা ব্যবহারের মধ্যেই মুসলমানদের স্মার্টনেস নিহিত। তাই মুসলমানদের জন্য বিজাতীয় পরিভাষা পরিহার করে ইসলামি পরিভাষা গ্রহণ করা উচিত। এখানে দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত ইসলামি সংস্কৃতির কিছু পরিভাষা উল্লেখ করা হলো। এগুলো নিজেদের প্রাত্যহিক জীবনে চালু করতে পারলে জীবনধারায় ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে, ইনশাআল্লাহ।

কারো সঙ্গে দেখা হলে কিংবা ম্যাসেঞ্জারে কথা বলার সময় Hi/Hello না বলে ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলুন। যার অর্থ- আপনার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। প্রতিউত্তরে বলুন ‘ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’। (মুসলিম শরিফ: ২০৫৫) কেউ ‘কেমন আছেন?’ জানতে চাইলে Fine/Nice, ভালো আছি, ভালো নেই, অসুস্থ, আছি মোটামুটি, আছি কোনোরকম- এমন অকৃতজ্ঞতা ও হতাশাজনক উত্তর না দিয়ে প্রথমে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলুন। যার অর্থ- সব প্রশংসা আল্লাহর। এরপর আপনার সমস্যার কথা বলতে পারেন। তেমনি কোনো ভালো সংবাদ বা ভালো কিছু অর্জনের সংবাদ শুনে Good News না বলে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলুন। (ইবনে মাজাহ: ৩৮০৩-৩৮০৫) ভবিষ্যতে কোনো কাজ করার ক্ষেত্রে All Right, I will try না বলে ‘ইনশাআল্লাহ’ বলুন। অর্থ- যদি আল্লাহ চান। (সুরা কাহাফ : ২৩-২৪) কোনো বিপদের কথা শুনলে Very Sad না বলে ‘ইন্না লিল্লাহ’ বলুন। অর্থ- নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্য। (মুসলিম শরিফ: ২১২৬) কারো প্রশংসা করার সময় Well done না বলে ‘মাশাআল্লাহ’ বলুন। অর্থ- আল্লাহ যেমন চেয়েছেন। (মুসলিম শরিফ: ৩৫০৮) ব্যতিক্রম ও আশ্চর্য কোনো কিছু দেখলে বা শুনলে Oh my God না বলে ‘সুবহানাল্লাহ’ বলুন। অর্থ- আল্লাহ পবিত্র ও মহান। (বুখারি শরিফ: ৬২১৮)

তেমনি আল্লাহর মহত্ব বড়ত্ব অথবা কারো দুঃসাহসিক কোনো কাজ দেখলে Wow! না বলে, ‘আল্লাহু আকবার’ বলুন। অর্থ- আল্লাহ মহান। (বুখারি শরিফ: ৬২১৮) কারো কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ক্ষেত্রে Thank you না বলে ‘জাযাকাল্লাহ’ বলুন। অর্থ- আল্লাহ আপনাকে এর প্রতিদান দিন। প্রতিউত্তরে হাইয়্যাকাল্লাহ বলুন। অর্থ- আল্লাহ আপনাকে দীর্ঘজীবী করুন। (বুখারি শরিফ: ৩৩৬) সম্মানিত কারো আগমনে Welcome না বলে ‘আহলান সাহলান’ বলুন। অর্থ- আপনার প্রিয়জনদের কাছে মনোরম পরিবেশে এসেছেন। কাউকে বিদায় দেওয়ার সময় Good Bye, Tata না বলে ‘আল্লাহ হাফেজ’ বলুন। সকালে ঘুম থেকে উঠে Good Morning এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে Good Night না বলে ‘ফি আমানিল্লাহ’ বলুন। অর্থ- আপনি আল্লাহর নিরাপত্তায় থাকুন। তখন সালাম বিনিময়ও করা যায়। কেউ দোয়া চাইলেও ‘ফি আমানিল্লাহ’ এবং ‘বারাকাল্লাহ’ বলুন। অর্থ- আল্লাহ আপনাকে বরকত দান করুক। (সুনানুল কুবরা লিন-নাসায়ি : ১০১৩৫)

এছাড়া যেকোনো ভালো কাজের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ বলুন। অর্থ- আল্লাহর নামে শুরু করলাম। (বুখারি শরিফ: ৫৩৭৬) হাঁচি দিয়ে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলুন। (তিরমিজি শরিফ: ২৭৪১) হাঁচিদাতাকে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলতে শুনলে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলুন। অর্থ- আল্লাহ আপনার প্রতি রহম করুন। (বুখারি শরিফ: ৬২২৪) কোনো ভুল বা গুনাহর কথা বলে ফেললে ‘আসতাগফিরুল্লাহ’ বলুন। অর্থ- আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই। (সুরা মুহাম্মদ : ১৯) উপরে ওঠার সময় ‘আল্লাহু আকবার’ এবং নিচে নামার সময় ‘সুবহানাল্লাহ’ বলুন। (বুখারি শরিফ: ২৯৯৩) কোনো বাজে কথা কিংবা আল্লাহর আজাব-গজবের কথা শুনলে বা মনে পড়লে ‘নাউজুবিল্লাহ’ বলুন। অর্থ- আমরা আল্লাহর কাছে মুক্তি চাই। (বুখারি শরিফ: ৬৩৬২)

অভিব্যক্তি প্রকাশের এমন আরো ইসলামি পরিভাষা রয়েছে। বর্ণিত আরবি পরিভাষাগুলো নিছক প্রশংসা-কৃতজ্ঞতা, সুখ-দুখ প্রকাশের ভাষাই নয়, এগুলোর প্রায় সবই দোয়া ও জিকির। এগুলোর মাধ্যমে একে অপরের জন্য দোয়া করা হয়। যার জন্য দোয়া করা হয় তিনি তো উপকৃত হনই, যিনি দোয়া করেন তিনিও উপকৃত হন। দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা দুজনকেই নিরাপদে রাখেন। তাদের ওপর আল্লাহর রহমত বরকত নাজিল হতে থাকে। জিকিরের মাধ্যমে আমলনামায় প্রচুর নেকি জমা হয়। সমৃদ্ধ হয় সওয়াবের ভাণ্ডার। আর ইসলামি সংস্কৃতির অনুশীলন তো হয়ই।

লেখক: সভাপতি, বাংলাদেশ ইসলামি লেখক ফোরাম

জনপ্রিয়