ঢাকা শনিবার, ০৬ জুলাই ২০২৪ , ২১ আষাঢ় ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

nogod
nogod
bkash
bkash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
nogod
nogod
bkash
bkash

‘দ্য ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সী’ খ্যাত আর্নেস্ট হেমিংওয়ের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

বিবিধ

আমাদের বার্তা ডেস্ক

প্রকাশিত: ০০:০০, ২ জুলাই ২০২৪

সর্বশেষ

‘দ্য ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সী’ খ্যাত আর্নেস্ট হেমিংওয়ের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

বিখ্যাত মার্কিন সাহিত্যিক ও সাংবাদিক আর্নেস্ট মিলার হেমিংওয়ের মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি আর্নেস্ট হেমিংওয়ে নামেই বেশি পরিচিত। তার আইসবার্গ তত্ত্ব নামে পরিচিত নির্মেদ ও নিরাবেগী লেখনী বিংশ শতাব্দীর কথাসাহিত্যের ভাষাশৈলীতে ব্যাপক প্রভাব ফেলে; অন্যদিকে তার রোমাঞ্চপ্রিয় জীবন ও ভাবমূর্তি পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তাকে প্রশংসিত করে তোলে। বিংশ শতাব্দীর বিশের দশকের মাঝামাঝি থেকে পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত সময়ে তিনি তার অধিকাংশ সাহিত্যকর্ম রচনা করেছিলেন। তিনি সাতটি উপন্যাস, ছয়টি ছোটগল্প সংকলন এবং দুইটি অকল্পিত সাহিত্য গ্রন্থ প্রকাশ করেছিলেন। তার মৃত্যুর পরে আরো তিনটি উপন্যাস, চারটি ছোটগল্প সংকলন এবং তিনটি অকল্পিত সাহিত্য গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছিলো। তার প্রকাশিত গ্রন্থের অনেকগুলোই মার্কিন সাহিত্যের ধ্রুপদী বা চিরায়ত গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত হয়।

আর্নেস্ট হেমিংওয়ে ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ২১ জুলাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের শিকাগো শহরের অন্তর্গত ওক পার্কে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ক্লেরেন্স এডমন্ডস হেমিংওয়ে পেশায় একজন চিকিৎসক এবং তার মাতা গ্রেস হল হেমিংওয়ে একজন সঙ্গীতজ্ঞ ছিলেন। দুজনেই ওক পার্কের উচ্চ শিক্ষিত ও সম্মানিত ব্যক্তি ছিলেন। হেমিংওয়ের নামকরণ করা হয় তার মাতামহের নামে। যদিও পরবর্তী কালে হেমিংওয়ে বলেন যে তিনি এই নাম পছন্দ করেননি। কারণ অস্কার ওয়াইল্ডের নাটক দি ইমপোর্টেন্স অব বিয়িং আর্নেস্ট-এর সাদাসিধে, বোকাসোকা ধরনের প্রধান চরিত্রের নাম ছিল আর্নেস্ট।

হেমিংওয়ের পিতা বালক হেমিংওয়েকে উত্তর মিশিগানের বনে ও হ্রদে শিকার, মাছ ধরা, ক্যাম্প করা শিখেছিলেন। তার বাল্যকালের এই সব অভিজ্ঞতাই ধীরে ধীরে তাকে রোমাঞ্চকর অভিযানে অণুরক্ত করে তুলেছিল এবং দূরবর্তী-জনবিচ্ছিন্ন এলাকায় বসবাসে উদ্বুদ্ধ করেছিলো।

 

১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি হ্যাডলি রিচার্ডসনকে বিয়ে করেন এবং প্যারিস চলে যান। সেখানে তিনি বিদেশি প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করেন এবং ‘হারানো প্রজন্ম’ নামে আধুনিক লেখক ও শিল্পীদের প্রবাসী সম্প্রদায় দ্বারা প্রভাবিত হন। তার প্রথম উপন্যাস দ্য সান অলসো রাইজেস ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয়।

১৯১৩ থেকে ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত হেমিংওয়ে ওক পার্ক অ্যান্ড রিভার ফরেস্ট হাই স্কুলে পড়াশোনা করেন। সেখানে তিনি মুষ্টিযুদ্ধ, ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড, ওয়াটার পোলো ও ফুটবলসহ নানা ধরনের খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করতেন। তিনি ইংরেজি বিষয়ে অসাধারণ ফলাফল অর্জন করেন। বিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে সাংবাদিকতা বিষয়ে হেমিংওয়ের একটি পাঠ্য ছিলো, যেখানে শ্রেণিকক্ষের পরিবেশ ছিলো সংবাদপত্র অফিসের মত। ভালো লেখকরা স্কুলের দেয়াল পত্রিকা ট্রাপিজির জন্য লেখা জমা দিতেন। তিনি ও তার বোন মার্শেলিন লেখা জমা দিতেন। শিকাগো সিমফনি অর্কেস্ট্রার স্থানীয় একটি পরিবেশনা সম্পর্কিত হেমিংওয়ের প্রথম লেখা ১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারিতে প্রকাশিত হয়। তিনি ক্রীড়া সাংবাদিকদের লেখা অনুকরণ করে শিকাগো ট্রিবিউনের রিং লার্ডনারের নামানুসারে রিং লার্ডনার জুনিয়র ছদ্মনামে ট্রাপিজি ও ট্যাবুলা পত্রিকা সম্পাদনার কাজও করতেন। মার্ক টোয়েন, স্টিভেন ক্রেন, থিওডোর ড্রাইজার, ও সিনক্লেয়ার লুইসদের মত হেমিংওয়ে উপন্যাস রচনা শুরুর পূর্বে সাংবাদিকতা করেন। উচ্চ বিদ্যালয় ছাড়ার পর তিনি শিক্ষানবিশ সংবাদদাতা হিসেবে দ্য ক্যানসাস সিটি স্টার সংবাদপত্রে কাজ শুরু করেন।

১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে  হেমিংওয়ে ইউরোপ ভ্রমণে যান। তিনি কিছুদিন ভেনিস শহরে অবস্থান করেন। সেখানে হেমিংওয়ে ১৯ বছর বয়সী আদ্রিয়ানা ইভানচিচের প্রেমে পড়েন। এই প্রেমের সম্পর্ক তাকে অ্যাক্রস দ্য রিভার অ্যান্ড ইনটু দ্য ট্রিজ উপন্যাস লেখার অনুপ্রেরণা যোগায়। কিউবায় অবস্থানকালে ম্যারির সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে থাকাকালীন তিনি এই বইটি রচনা করেন। বইটি ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হওয়ার পর নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া অর্জন করে। উপন্যাসটির সমালোচনামূলক প্রতিক্রিয়ার ক্ষুব্ধ হেমিংওয়ে পরের বছর মাত্র আট সপ্তাহে ‘দ্য ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সী’ উপন্যাসের পাণ্ডুলিপি রচনা করেন। তিনি বলেন, ‘এটি ছিলো আমার লেখার সাধ্যের মধ্যে আমার জীবনের সেরা বই।’ দ্য ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সী বইটি মাসের সেরা বইয়ের নির্বাচনে তালিকাভূক্ত হয়। হেমিংওয়ে আন্তর্জাতিক তারকা হয়ে ওঠেন এবং ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে তিনি এই বইয়ের জন্য পুলিৎজার পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবরে তিনি সাহিত্যজগতের সবচেয়ে সম্মানজনক নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

তার বিখ্যাত উপন্যাস দ্য ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সী প্রকাশের কিছুদিন পর হেমিংওয়ে আফ্রিকায় সাফারি ভ্রমণে যান। সেখানে তিনি পরপর দুটি বিমান দুর্ঘটনায় প্রায় মৃত্যুর হাত থেকে রেহাই পেলেও বাকি জীবনের বেশির ভাগ সময় তিনি শারীরিক পীড়া নিয়ে কাটান। তিনি ১৯৩০-এর দশকে ফ্লোরিডার কি ওয়েস্টে এবং ১৯৪০ ও ১৯৫০-এর দশকে কিউবায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। ১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি আইডাহোর কেচামে একটি বাড়ি ক্রয় করেন এবং সেখানে ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করেন।

পরিবারের সদস্য ও বন্ধুগণ তার শেষকৃত্যে অংশগ্রহণ করেন। স্থানীয় ক্যাথলিক যাজক শেষকৃত্য পরিচালনা করেন এবং তিনি বিশ্বাস করেন হেমিংওয়ের মৃত্যু একটি দুর্ঘটনা ছিলো। তাকে কেচাম সেমেটারিতে সমাহিত করা হয়।

 

জনপ্রিয়