ঢাকা রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ২৩ ভাদ্র ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

nogod
nogod
bkash
bkash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
nogod
nogod
bkash
bkash

খ্যাত দ্বিজেন্দ্রলাল রায় এর জন্মদিন আজ

বিবিধ

আমাদের বার্তা ডেস্ক

প্রকাশিত: ০০:০০, ১৯ জুলাই ২০২৪

আপডেট: ১০:৩৩, ২৪ জুলাই ২০২৪

সর্বশেষ

খ্যাত দ্বিজেন্দ্রলাল রায় এর জন্মদিন আজ

জনপ্রিয় দেশাত্মবোধক গান ‘ধনধান্য পুষ্প ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা’ এর গীতিকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায় এর জন্মদিন আজ। তিনি ১৮৬৩ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা কার্তিকেয়চন্দ্র রায় ছিলেন কৃষ্ণনগরের দেওয়ান এবং মাতা প্রসন্নময়ী দেবী ছিলেন অদ্বৈত প্রভুর বংশধর। তার দুই অগ্রজ রাজেন্দ্রলাল ও হরেন্দ্রলাল এবং এক ভ্রাতৃজায়াও সাহিত্যিক হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন।

দ্বিজেন্দ্রলাল হুগলি কলেজ থেকে বিএ এবং প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এমএ পাস করেন। পরে কিছুদিন চাকরি করে তিনি সরকারি বৃত্তি নিয়ে কৃষিবিদ্যা শেখার জন্য লন্ডন যান এবং সেখানে ১৮৮৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত অবস্থান করেন। লন্ডনের সিসিটার কলেজ থেকে তিনি কৃষিবিদ্যায় এফআরএএস ডিগ্রি এবং রয়েল এগ্রিকালচারাল কলেজ ও এগ্রিকালচারাল সোসাইটির এমআরএসি ও এমআরএসএ উপাধি লাভ করেন। বিলেত থেকে ফিরে তিনি মধ্যপ্রদেশে জরিপ ও রাজস্ব নিরূপণ ট্রেনিং নেন এবং সরকারি ডেপুটির চাকরি পান; পরে তিনি দিনাজপুরে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট নিযুক্ত হন।

দ্বিজেন্দ্রলাল ছিলেন একজন স্বাধীনচেতা মানুষ; এজন্য কর্মক্ষেত্রে তিনি অনেক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন। ১৮৯০ খ্রিষ্টাব্দে বর্ধমান এস্টেটের সুজামুটা পরগনায় সেটেলমেন্ট অফিসারের দায়িত্ব পালনকালে তিনি প্রজাদের স্বার্থে ছোটলাটের বিরোধিতা করতে কুণ্ঠিত হননি। বিলেত থেকে ফেরার পর প্রায়শ্চিত্ত করার প্রশ্ন উঠলে তিনি তা অস্বীকার করেন এবং এজন্য তাকে অনেক বিড়ম্বনা সইতে হয়। সেই অভিজ্ঞতার বর্ণনা আছে তার একঘরে নামক পুস্তিকায়।

দ্বিজেন্দ্রলাল কৈশোরেই কাব্যচর্চা শুরু করেন। ছাত্রজীবনে তার আর্য্যগাথা এবং বিলেতে থাকাকালে Lyrics of Ind কাব্য প্রকাশিত হয়। ১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি মূলত কাব্যই রচনা করেন এবং এ সময় পর্যন্ত তার প্রকাশিত গ্রন্থ বারোটি।

এরমধ্যে  প্রহসন, কাব্যনাট্য, ব্যঙ্গ ও হাস্যরসাত্মক কবিতাও রয়েছে। জীবনের শেষ দশ বছর তিনি প্রধানত নাটক রচনা করেন। পৌরাণিক, সামাজিক, ঐতিহাসিক সব ধরনের নাটক রচনায়ই তিনি অসাধারণ দক্ষতা দেখিয়েছেন। স্বদেশী আন্দোলনের ফলে তার মধ্যে যে দেশাত্মবোধ জাগ্রত হয়েছিল, ঐতিহাসিক নাটকগুলোতে তার প্রতিফলন ঘটেছে। তিনি ষোলোটি নাটক রচনা করেন। তার প্রবন্ধমূলক রচনাগুলিও অসাধারণ প্রতিভার স্বাক্ষর বহন করছে। দ্বিজেন্দ্রলালের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থ হলো: কাব্য আর্য্যগাথা, মন্দ্র, আলেখ্য, ত্রিবেণী; নকশা-প্রহসন, একঘরে, সমাজ-বিভ্রাট ও কল্কি অবতার প্রভৃতি। সাহিত্যকর্ম হিসেবে তার অনেক নাটক উচ্চশিক্ষার পাঠ্যতালিকাভুক্ত হয়েছে।
বাংলা গানের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী কথা ও সুরের অপূর্ব সমন্বয়ে গান রচনা করার ক্ষমতা ছিলো দ্বিজেন্দ্রলালের সহজাত। তদুপরি ওস্তাদ পিতার নিকট থেকে ভারতীয় মার্গসঙ্গীতে তালিম নেয়ার ফলে সঙ্গীত রচনায় পাশ্চাত্য সুর আহরণ ও আত্তীকরণ তার জন্য সহজসাধ্য হয়েছিলো।
১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে  বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশে যে গণজাগরণমূলক গান রচনার প্রচলন শুরু হয়, তাতে দ্বিজেন্দ্রলালের অবদান ছিলো অসামান্য। এ সময় তিনি প্রচুর  দেশাত্মবোধক গান রচনা করেন যা স্বদেশীদের প্রচন্ডভাবে উদ্দীপিত করে। পরবর্তীকালে দেশাত্মবোধক গান রচনাতেই তার সঙ্গীতপ্রতিভার পূর্ণ বিকাশ ঘটে। 

দ্বিজেন্দ্রলাল রচিত জনপ্রিয় দেশাত্মবোধক গানগুলোর মধ্যে ‘বঙ্গ আমার জননী আমার’, ‘ধনধান্যপুষ্পভরা’ ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। 
অসাধারণ শিল্পকর্মের মূলতত্ত্ব যে সত্য, সুন্দর ও আনন্দ- দ্বিজেন্দ্রলালের সঙ্গীতকর্মে তার সার্থক প্রকাশ ঘটেছে; তাই তার গানে রয়েছে মৌলিকত্বের ছাপ। বাংলা কাব্যসঙ্গীতে তথা আধুনিক বাংলা গানে সুর, ভাব ও বিষয়ভিত্তিক রচনায় বিভিন্ন ধারার সমন্বয়করণ দ্বিজেন্দ্রলালের এক মহৎ কীর্তি। দ্বিজেন্দ্রলাল রায় ১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ মে কলকাতায় পরলোকগমন করেন।

জনপ্রিয়