ঢাকা শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪ , ২ কার্তিক ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

সাংবাদিক লেখক বেবী মওদুদের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

বিবিধ

প্রকাশিত: ০০:০০, ২৫ জুলাই ২০২৪

সর্বশেষ

সাংবাদিক লেখক বেবী মওদুদের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

বিশিষ্ট সাংবাদিক, লেখক ও রাজনীতিবিদ বেবী মওদুদ এর মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি নারী অধিকার আন্দোলনের অন্যতম একজন নারী সংগঠক ও বিশ্লেষক এবং কমনওয়েলথ জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের (সিজেএ) ইন্টারন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট ইমেরিটাস ছিলেন। বেবী মওদুদ ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের একজন সংসদ সদস্য এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বা দশম জাতীয় সংসদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ বাল্য বন্ধু ও সজ্জন। এছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বেবী মওদুদের হৃদ্যতা পূর্ণ সম্পর্ক ছিলো।

বেবী মওদুদ ছিলেন অদম্য বাঙালি ও জাতীয়তাবাদী। বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় অনেক দৈনিক পত্রিকায় সাংবাদিকতাসহ শিশু কিশোরদের নিয়েও প্রচুর লেখালেখি করেছেন তিনি। তাকে শিশুসাহিত্যিক হিসেবেও অনেকে মনে করে থাকেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অবস্থায় তিনি প্রগতিশীল রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হন এবং নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংরক্ষিত মহিলা আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

বেবী মওদুদ ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ জুন কলকাতার বর্ধমান জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পুরো নাম এ এন মাহফুজা খাতুন হলেও তাকে সবাই বেবী মওদুদ নামে চেনেন। তার পিতা আবদুল মওদুদ ছিলেন পাকিস্তান সরকারের আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব।

জন্মের সময় আকিকা দিয়ে তার নাম রাখা হয় আফরোজা নাহার মাহফুজা খাতুন। জন্মের পর তার মা তাকে বেবী জনসন পাউডার মাখাতেন, সেটা দেখে তার বড় ভাই তাকে বেবী বলে ডাকতে শুরু করে। এত বড় নাম ভালো লাগত না বলে বড় হয়ে লেখালেখি করতে এসে তিনি নিজেই নিজের নাম বেবী মওদুদ রাখেন। বেবী মওদুদ সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি মারজি-উল হকের ছোট বোন।

ব্যক্তিগত জীবনে স্বাধীনতার পরপরই ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে ঠাকুরগাঁও জেলার সাংবাদিক হাসান আলীর সঙ্গে বেবী মওদুদের বিয়ে হয়। হাসান আলী দৈনিক সংবাদের একজন অভিজ্ঞ রিপোর্টার ছিলেন। পরবর্তীতে হাসান আলী মুখ্য রিপোর্টার, নগর সম্পাদক ও বার্তা সম্পাদক হয়েছিলেন এবং তিনি বাংলাদেশের একজন সাম্যবাদী দলের সদস্য ছিলেন। ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে চারটি বাদে সব পত্রিকা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে সাংবাদিকতা ছেড়ে দিয়ে আইন পেশায় মনোনিবেশ করেন।

১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে অনার্সসহ ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে মাস্টার্স সম্পূর্ণ করেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রাবস্থায় তিনি প্রগতিশীল রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হন। নারীর অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত করার সংগ্রামে একনিষ্ঠ, সমাজসেবায় অগ্রণী, সাহিত্য সাধনায় নিবেদিতপ্রাণ কিংবা রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকা সত্ত্বেও বেবী মওদুদ ছিলেন মূলত পেশাদার সাংবাদিক।

মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থাকার সময়কালীন বেবী মওদুদ পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সদস্য হিসেবে ছাত্র রাজনীতিতে যোগদান করেন। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে বাংলায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করার পূর্বে ১৯৬৭-৬৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত রোকেয়া হলের ছাত্রী সংসদের সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি।

১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দ থেকে পেশাগত জীবনে সাংবাদিকতায় জড়িত বেবী মওদুদ দৈনিক সংবাদ, সাপ্তাহিক ললনা, দৈনিক ইত্তেফাক ও দৈনিক মুক্তকন্ঠে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। বিবিসির বাংলা বিভাগের সঙ্গেও সম্পৃক্ত ছিলেন। বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) বাংলা বিভাগ গড়ে তোলার প্রসঙ্গে প্রধান ভূমিকা পালন করেন তিনি। নতুন কলেবরে যখন সাপ্তাহিক বিচিত্রা প্রকাশিত হয় তখন তিনি এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। মৃত্যুকাল পর্যন্ত অনলাইন নিউজপোর্টাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে সোস্যাল অ্যাফেয়ার্স সম্পাদক ছিলেন বেবী মওদুদ। এই সাময়িকীর সম্পাদক ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ রেহানা।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ তৈরি করার ক্ষেত্রে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যাবতীয় আন্দোলনের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তিনি ছিলেন ঘনিষ্ঠ সহযোগী। অতীতের সমস্ত প্রতিবন্ধকতায় বেবী মওদুদ পথভ্রান্ত না হয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতি অটল আস্থা রেখেছিলেন। ১৯৮০-এর দশকের শেষ এবং ১৯৯০-এর দশকের শুরুতে পাকিস্তানের করাচীতে বেবী মওদুদ জাতিসংঘের নতুন স্থায়ী প্রতিনিধি ড: এ কে এম আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বাংলাদেশের নারী ও শিশু পাচার বিষয়ে সম্মিলিতভাবে কাজ করেন।

২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে নবম জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কর্তৃক সংসদ সদস্য মনোনীত হোন। বাংলাদেশের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি এবং লাইব্রেরি কমিটির সদস্য হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন। সাংবাদিকতার পাশাপাশি রকমারি বিষয়ে নিয়মিত লেখালেখি করতেন বেবী মওদুদ। তিনি কয়েকটি শিশুতোষ ও আত্মকথন গ্রন্থ রচনা করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে দুরারোগ্য ব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে বেবী মওদুদ মৃত্যুবরণ করেন ।

জনপ্রিয়