তেভাগা আন্দোলনের কিংবদন্তি নেত্রী বিপ্লবী ইলা মিত্রের ২২তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০০২ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ অক্টোবর মারা যান বাংলার এই মহীয়সী নারী। জমিতে মোট উৎপাদিত ফসলের তিন ভাগের দুইভাগ পাবেন চাষি, এক ভাগ জমির মালিক—এই দাবিতেই সূত্রপাত তেভাগা আন্দোলনের।
১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ অক্টোবর কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন ইলা মিত্র। ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুরের জমিদার পরিবারের সন্তান রমেন্দ্র নাথ মিত্রের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে ১৯৪৬ থেকে ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত চলা তেভাগা আন্দোলনের মূল অংশে নেতৃত্ব দেন ইলা মিত্র। এই আন্দোলনের কারণে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন তিনি। তাঁর ওপর চালানো হয় মধ্যযুগীয় নির্যাতন।
২২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তেভাগা আন্দোলনে ইলা মিত্রের স্মৃতিবিজড়িত স্থান নাচোলের নেজামপুর ইউনিয়নের রাওতাড়ায় ‘ইলা মিত্র স্মৃতি সংগ্রহশালা’ প্রাঙ্গণে আলোচনা ও প্রার্থনার আয়োজন করেছে ‘রানী ইলা মিত্র স্মৃতি সংসদ’।
তেভাগা আন্দোলনের এই বিপ্লবীর স্মৃতি ধরে রাখতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার দূরে গড়ে তোলা হয়েছে ইলা মিত্র স্মৃতি সংগ্রহশালা। সংগ্রহশালাটির অবস্থান তেভাগা আন্দোলনস্থল নাচোল উপজেলার কেন্দুয়া-রাওতারা গ্রামে।
পিচ ঢালা সড়ক ছেড়ে ইট বিছানো পথ দিয়ে কিছুটা যেতেই সবুজ ধানখেতের মাঝখানে মাটির সুরম্য দ্বিতল ভবন। রঙিন দেয়ালে খড়িমাটি দিয়ে আলপনা আঁকা। ভবনের সামনে কাঠ-মাটির সিঁড়ি। দৃষ্টিনন্দন এ ভবনে চোখ আটকে যাবে যে কারোর। এটিই ইলা মিত্র স্মৃতি সংগ্রহশালা।
দ্বিতল ভবনের নীচ তলায় দুটি আর উপর তলায় একটি বড় কক্ষ। সংগ্রহশালায় স্থান পেয়েছে ইলা মিত্রের দুর্লভ ছবি, তাঁকে নিয়ে লেখা বিভিন্ন বই। তবে সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে একটি ভ্যানিটি ব্যাগ। কারণ তেভাগা আন্দোলনের নেত্রী কিংবদন্তি ইলা মিত্রের ব্যবহৃত ব্যাগ এটি। সংগ্রহশালায় এই ব্যাগটিই ইলা মিত্রের সরাসরি ব্যবহৃত একমাত্র জিনিস। ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে ভারতে বসবাসরত ইলা মিত্রের পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়।
ইলা মিত্র স্মৃতি সংগ্রহশালাটি গড়ে তোলা হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে। চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি সংগ্রহশালাটি উদ্বোধন করা হয়। সংগ্রহশালার জন্য ইলা মিত্রের ব্যবহৃত আরও জিনিসপত্র সংগ্রহের চেষ্টা চলছেন।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আহমেদ মাহবুব-উল ইসলাম বলেন, ‘এরই মধ্যে আমরা একজন প্রতিনিধি পাঠিয়েছিলাম ভারতে। তিনি ইলা মিত্রের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং একটি ভ্যানিটি নিয়ে এসেছেন। আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বা অন্য কোন উপায়ে সরাসরি যোগাযোগের চেষ্টা করছি। ইলা মিত্রের বংশধরদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁর ব্যবহৃত জিনিসপত্র সংগ্রহ করব। আমাদের আশা শিগগিরই সংগ্রহশালাটি আরও সমৃদ্ধ হবে।’