ঢাকা বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪ , ২৮ কার্তিক ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

অনলাইন তথ্যের সত্যতা যাচাই করে ৫ শতাংশ মানুষ

বিবিধ

আমাদের বার্তা প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১২:১৫, ১০ নভেম্বর ২০২৪

আপডেট: ১২:৩৯, ১০ নভেম্বর ২০২৪

সর্বশেষ

অনলাইন তথ্যের সত্যতা যাচাই করে ৫ শতাংশ মানুষ

বাংলাদেশে ২০ জনের ১ জন অনলাইন তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে পারেন।

চলতি বছরের মাঝামাঝি সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ব্যথা কমানো ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের নামে ওষুধের ভুয়া প্রচার শুরু হয় ব্যাপকভাবে। সাধারণ লোকজনের কাছে বিশ্বাসযোগ্য করতে ওষুধের প্রচারে পত্রিকার ওয়েবসাইট ও লোগো নকল করে অণুজীববিজ্ঞানী সেঁজুতি সাহার ভুয়া সাক্ষাৎকারও বানানো হয়।

ভুয়া একটি ওষুধ বিক্রির এ প্রচারণার বিরুদ্ধে গত ১ জুলাই রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন সেঁজুতি সাহা। তিনি জানান, ওই পণ্য সম্পর্কে তাঁর কিছুই জানা নেই। বানিয়ে বানিয়ে তাঁর সাক্ষাৎকার তৈরি করে প্রচার করা হয়েছে।

আগস্টে পূর্বাঞ্চলে ব্যাপক হারে বন্যা ছড়িয়ে পড়লে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই ব্যবহার করে ভুয়া ছবি ও খবর প্রচার হয় ব্যাপক হারে। ‘ফেনীতে বাচ্চাসহ ৪২৮ জনের মৃত্যু, নোয়াখালীতে ৩৮৫ জনের মৃত্যু, কুমিল্লাতে ১০৩ জনের মৃত্যু’—এমন ভুয়া তথ্য একটি টেলিভিশন চ্যানেলের লোগো ব্যবহার করে ফটোকার্ড তৈরি করে ছড়িয়ে দেওয়া হয় ফেসবুকে।

রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও প্রায়ই এমন ভুয়া তথ্য ছড়ানো হয়। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় ও অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময় গণমাধ্যমকে জড়িয়ে ব্যাপক হারে অপতথ্য ছড়ানো হয়।

শুক্রবার জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো প্রকাশিত ‘বৈশ্বিক শিক্ষা পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন ২০২৪-২৫’–এ বলা হয়েছে, অনলাইনে পাওয়া তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা যাচাই করতে পারেন এমন তরুণ ও প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের হার বাংলাদেশে ৫ শতাংশের বেশি নয়। অর্থাৎ দেশের তরুণ ও প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতি ২০ জনের মধ্যে একজন অনলাইনের তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা যাচাই করতে পারেন। ইরান ও ভিয়েতনামের অবস্থাও বাংলাদেশের মতোই। অপর দিকে উন্নত দেশগুলোতে ৩৮ শতাংশ তরুণ ও প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ অনলাইনের তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাই করতে পারেন।

১৬টি উচ্চ আয়ের দেশ এবং বাংলাদেশসহ ৭টি মধ্যম আয়ের দেশের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে নির্ভরযোগ্যতা যাচাইয়ের উপাত্ত তালিকায়। মধ্যম আয়ের দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ছাড়াও রয়েছে ইরান, ভিয়েতনাম, আলবেনিয়া, সার্বিয়া, মঙ্গোলিয়া ও মরোক্কো। উচ্চ আয়ের দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, সুইজারল্যান্ড, বাহরাইন, সুইডেন, ডেনমার্ক, স্লোভেনিয়া, কুয়েত, রাশিয়া, গ্রিস, স্লোভাকিয়া, জার্মানি, সিঙ্গাপুর, মাল্টা, লুক্সেমবার্গ ও রোমানিয়া।

তথ্যব্যবস্থায় প্রযুক্তির প্রভাব নিয়ে গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান ‘ডিজিটালি রাইট’-এর তথ্য যাচাইয়ের উদ্যোগ ডিসমিসল্যাবের প্রধান গবেষক মিনহাজ আমান বলেন, সামাজিক বা রাজনৈতিক অস্থিরতার সময়ে মানুষ তথ্য পেতে চায়। ওই সময় মানুষের পছন্দ-অপছন্দ, আবেগ-অনুভূতিকে লক্ষ্য করে অপতথ্য ও ভুল তথ্য ছড়ানো হয়। তিনি আরও বলেন, মতের সঙ্গে মিললে মানুষ সেই তথ্য দ্রুত বিশ্বাস করেন এবং তা ছড়াতে থাকেন।

ইউনেসকোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশগুলোর ভেতরে বয়স, লিঙ্গ ও স্থানের ওপর তথ্যের সত্যতা যাচাই করার দক্ষতার হেরফের রয়েছে। তরুণদের চেয়ে বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে ভুয়া তথ্য শেয়ারের প্রবণতা বেশি।

স্মার্টফোনের সঙ্গে সম্পর্কিত নতুন প্রযুক্তিতে দক্ষতার ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, উচ্চ আয়ের দেশের ৫১ শতাংশ তরুণ ও প্রাপ্তবয়স্ক নিজেদের ডিজিটাল ডিভাইসে নিরাপত্তা ধাপগুলো সেট করতে পারে। এ হার মধ্যম আয়ের দেশে ৯ শতাংশ। উচ্চ আয়ের দেশের ৩৮ শতাংশ এবং মধ্যম আয়ের দেশের ১০ শতাংশ তরুণ ও প্রাপ্তবয়স্ক অনলাইন তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে পারেন। তবে মধ্যম আয়ের দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে এ হার ৫ শতাংশ।

অপতথ্য কী পরিমাণ ছড়ায়, তার একটি তথ্য উঠে এসেছে সম্প্রতি রিউমার স্ক্যানারের এক প্রতিবেদনে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাসে অভ্যুত্থানের পূর্ববর্তী সময়ে গণমাধ্যমকে জড়িয়ে ১৯৯টি এবং অভ্যুত্থানের পর থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১২৫টি ফ্যাক্ট চেকে অপতথ্য তুলে ধরেছে প্রতিষ্ঠানটি। এসব ঘটনায় বিদেশি তিনটিসহ ২৮টি গণমাধ্যমকে জড়ানো হয়েছে।

প্রযুক্তি সম্পর্কে জ্ঞান কম থাকায় অনেকে ভুল তথ্য বা অপতথ্য যাচাই করতে পারেন না বলে মনে করেন রিউমার স্ক্যানারের হেড অব অপারেশন সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী। তিনি বলেন, ভুল তথ্য বা অপতথ্য বিশ্বাস করার আগে তা যাচাই করার বেশ কিছু উপায় আছে। ভুঁইফোড় কোনো প্রতিষ্ঠানের দেওয়া তথ্য শেয়ার না করে গণমাধ্যমের মূল পেজগুলো ঘুরে আসা, নিউজফিডে আসা ভুয়া তথ্য ঠেকাতে সেসব তথ্যে আগ্রহ না দেখানোর অপশনে ক্লিক করা এবং ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিষ্ঠানের সহায়তা নিতে পারেন যে কেউ। তাঁর মতে, ভবিষ্যতে এ বিষয়ে দক্ষ প্রজন্ম গড়ে তুলতে স্কুলে তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ের বইয়ে ফ্যাক্ট চেকিং নামে আলাদা অধ্যায় রাখা উচিত।
 

জনপ্রিয়