বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও ভাষাবিজ্ঞানী মুহম্মদ আবদুল হাই এর আজ জন্মদিন। তিনি ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে মুর্শিদাবাদের রাণীনগর থানার মরিচা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আব্দুল গণি ও মাতা ময়মুন্নেসা খাতুন। তার শিক্ষাজীবন শুরু হয় মরিচা গ্রামের কাছে বর্ধনপুর জুনিয়ার মাদরাসায়।
তিনি ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দে এ মাদরাসার পাঠ সমাপ্ত করে রাজশাহী হাই মাদরাসায় ভর্তি হন এবং ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে হাই মাদরাসা, ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে আইএ পাস করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দে বাংলায় বিএ অনার্স এবং ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর তিনিই ছিলেন বাংলা বিভাগের প্রথম মুসলমান ছাত্র।
মুহম্মদ আবদুল হাইয়ের কর্মজীবন শুরু হয় ঢাকা ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজে। এ কলেজে এক মাস শিক্ষকতা করে তিনি ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে বাংলার লেকচারার পদে বেঙ্গল জুনিয়ার এডুকেশন সার্ভিসে যোগ দেন। একই পদে তিনি ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দে কৃষ্ণনগর কলেজ, ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের ১১ সেপ্টেম্বর রাজশাহী সরকারি কলেজে অধ্যাপনা করেন। ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে প্রভাষক পদে তিনি নিয়োগ লাভ করেন
মুহম্মদ আবদুল হাই ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজে ভাষাতত্ত্বে অধ্যয়ন ও গবেষণার জন্য গেলে ভাষাতত্ত্ব, ধ্বনিতত্ত্ব ছাড়াও ইংরেজি, আরবি, সংস্কৃত, দ্রাবিড় প্রভৃতি ভাষা শিক্ষার সুযোগ লাভ করেন এবং ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে A Phonetic and Phonological Study of Nasal and Nasalization in Bengali শীর্ষক অভিসন্দর্ভ রচনা করে ডিস্টিংশনসহ এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। তার এ অভিসন্দর্ভটি ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত হয়।
১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারিতে বিভাগে ফিরে এসে প্রথমে তিনি যোগ্য ও দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে বাংলা বিভাগকে পুনর্গঠিত করেন। তার আগ্রহে সৈয়দ আলী আহসান, মুনীর চৌধুরী, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, আহমদ শরীফ, আনিসুজ্জামান, আবু হেনা মোস্তফা কামাল প্রমুখ কৃতিমান শিক্ষক বাংলা বিভাগে যোগদান করেন।
বিদেশের বৌদ্ধিক সমাজের সঙ্গে জ্ঞানের অংশীদার হওয়ার জন্য তিনি বহু আন্তর্জাতিক সেমিনার-সিম্পজিয়ামে, প্রশিক্ষণমূলক প্রোগ্রামে যোগদান ও সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে তিনি দশ মাস মেয়াদে ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দের ১ সেপ্টেম্বর আমেরিকার মিসৌরি বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান করেন। ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ৩ জুন এই ভাষাবিজ্ঞানী ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।