ঢাকা বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪ , ১২ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১ আর্কাইভস ই পেপার

bkash
bkash
udvash
udvash
uttoron
uttoron
Rocket
Rocket
bkash
bkash
udvash
udvash

মুনীর চৌধুরীর জন্মদিন আজ

বিবিধ

আমাদের বার্তা ডেস্ক

প্রকাশিত: ০০:০০, ২৭ নভেম্বর ২০২৪

সর্বশেষ

মুনীর চৌধুরীর জন্মদিন আজ

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর জন্মদিন আজ। তিনি ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দের আজকের এই দিনে মানিকগঞ্জ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস নোয়াখালী জেলায়। বাবা খানবাহাদুর আবদুল হালিম চৌধুরী ছিলেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট।

১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দে মুনীর চৌধুরী ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করেন। তারপর আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইএসসি এবং  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে বিএ অনার্স ও এমএ  পাস করেন। ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি বাংলায় এবং ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাষাতত্ত্বে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন।

মুনীর চৌধুরী খুলনার ব্রজলাল কলেজ (বিএল কলেজ)-এ অধ্যাপনার মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে ঢাকার জগন্নাথ কলেজ এবং শেষ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি ও বাংলা বিভাগে অধ্যাপনা করেন।

মুনীর চৌধুরী শিক্ষা ও পেশাগত জীবনে বামপন্থী রাজনীতি ও প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ঢাকার প্রগতি লেখক ও শিল্পী সংঘ,  কমিউনিস্ট পার্টি,  ভাষা আন্দোলন ইত্যাদির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতায় অনুষ্ঠিত কমিউনিস্ট পার্টির সম্মেলনে তিনি যোগদান করেন এবং ওই বছরেরই শেষ দিকে প্রগতি লেখক ও শিল্পী সংঘের সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের ২১ ফেব্রুয়ারির হত্যাকাণ্ড এবং পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদে ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের যে সভা হয় তাতে তীব্র ভাষায় বক্তৃতা দেয়ার অভিযোগে নিরাপত্তা আইনে সরকার তাকে বন্দি করে। ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি জেলে ছিলেন এবং বন্দি অবস্থায়ই পরীক্ষা দিয়ে তিনি বাংলা বিষয়ে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। পরে তিনি আরও দুবার বন্দি হন। জেলে বন্দী অবস্থায়ই তিনি ভাষা আন্দোলনের পটভূমিকায় রচনা করেন তার শ্রেষ্ঠ নাটক কবর (১৯৫৩)। শুধু রচনাই নয়, জেলের বন্দিদের দ্বারা এ নাটকের প্রথম মঞ্চায়নও হয় জেলের মধ্যেই।

বাঙালি সংস্কৃতিতে শ্রদ্ধাশীল মুনীর চৌধুরী সংস্কৃতির ওপর কোন আঘাতকে সহ্য করেননি। ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে পাকিস্তান সরকার রেডিও-টেলিভিশনে রবীন্দ্রসঙ্গীত প্রচার বন্ধের নির্দেশ দিলে তিনি তার প্রতিবাদ জানান। পরের বছর সংস্কারের নামে বাংলা বর্ণমালা বিলোপের উদ্যোগ নেয়া হলে তিনি তারও প্রতিবাদ করেন।

মুনীর চৌধুরী সমকালীন জাতীয় আন্দোলনের সঙ্গেও নিজেকে সম্পূর্ণরূপে সম্পৃক্ত করেছিলেন। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের মার্চে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন, তার সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে তিনি পাকিস্তান সরকারের দেয়া সিতারা-ই-ইমতিয়াজ খেতাব বর্জন করেন।

মুনীর চৌধুরী সাহিত্যচর্চায় কৃতিত্ব অর্জন করেন মূলত প্রগতি লেখক ও শিল্পীসংঘের সঙ্গে যুক্ত থাকা অবস্থায়। প্রথম জীবনে তিনি বেশ কিছু  ছোটগল্প রচনা করেছিলেন, কিন্তু সেগুলি সংগৃহীত হয়নি। তার প্রধান আকর্ষণ ছিলো নাটকের প্রতি। নাটকের মধ্যে আবার একাঙ্কিকার প্রতিই তার ঝোঁক ছিলো বেশি। ছোটগল্পের মতো তার অধিকাংশ একাঙ্কিকারই বিষয় সমকালীন সমাজজীবনের বৈষম্য ও বিকার। এসব একাঙ্কিকার মধ্যে বারোটি সংকলিত হয়েছে কবর, দন্ডকারণ্য এবং পলাশী ব্যারাক ও অন্যান্য গ্রন্থে। সাম্প্রদায়িকতা, বৈপ্লবিক আন্দোলন এবং নিম্নবিত্ত জীবনের করুণ কাহিনী নিয়ে তিনি নাটক রচনা করেছেন। তার কবর নাটকের মতো রাজনৈতিক চেতনার এমন সূক্ষ্ম প্রকাশ বাংলা সাহিত্যে খুব কমই দেখা যায়।

পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধের পটভূমিকায় লেখা তার মৌলিক নাটক রক্তাক্ত প্রান্তর-এর  মূল চেতনায় আছে যুদ্ধবিরোধী এবং সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদের ঊর্ধ্বে নরনারীর প্রেম। তার আরেকটি মৌলিক নাটক চিঠি-তে  আন্দোলনের নামে এক শ্রেণির লোকের স্বার্থবোধ ও অগণতান্ত্রিক আচরণ ধরা পড়েছে। মুনীর চৌধুরী বিদেশি নাটকের অনুবাদেও অসাধারণ কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। কেউ কিছু বলতে পারে না, রূপার কৌটা, মুখরা রমণী বশীকরণ  ইত্যাদি নাটকে তার প্রমাণ পাওয়া যায়। মুনীর চৌধুরীর নাটক কৌতুকপ্রবণতা, ঘটনাবিন্যাস এবং বুদ্ধিদীপ্ত সংলাপের কারণে খুবই উপভোগ্য। এক কথায় বলা যায়, ১৯৪৭-পরবর্তী বাংলাদেশের সাহিত্যে মুনীর চৌধুরী ছিলেন নবনাটকের উদ্গাতা।

সাহিত্য-সমালোচনার ক্ষেত্রে মুনীর চৌধুরী এক নতুন পথের সন্ধান দিয়েছেন। মীর-মানস ও তুলনামূলক সমালোচনা গ্রন্থদুটিতে তার পরিচয় পাওয়া যায়। কোন কিছুর নিরাসক্ত মূল্যায়ন, দুটি ভাষার সাহিত্যকর্মের তুলনা, আবার একই চরিত্র বিভিন্ন নাট্যকারের হাতে কেমন রূপলাভ করে ইত্যাদি বিশ্লেষণ তার সমালোচনার মৌলনীতি। তার বাংলা গদ্যরীতি নামক গ্রন্থে বাংলা গদ্যের, বিশেষত পূর্ব বাংলার সমকালীন বাংলা গদ্যরীতির পরিচয় পাওয়া যায়।

মুনীর চৌধুরী মঞ্চ, বেতার, টেলিভিশন এবং চলচ্চিত্র মাধ্যমে নাট্যকার, নির্দেশক, অভিনেতা ও সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন। তার একটি বিশেষ কীর্তি বাংলা টাইপ রাইটারের কি-বোর্ড উদ্ভাবন, যা ‘মুনীর অপটিমা’ নামে পরিচিত। তিনি নাটকে বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও দাউদ পুরস্কার লাভ করেন। ঢাকার থিয়েটার নাট্যগোষ্ঠী তার স্মরণে মুনীর চৌধুরী সম্মাননা পদক প্রবর্তন করে। ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়ের দুদিন আগে ১৪ ডিসেম্বর তিনি পাকবাহিনীর সহযোগীদের দ্বারা অপহৃত ও নিহত হন। 

জনপ্রিয়