বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ মওলানা আবদুর রশীদের জন্মদিন আজ। তিনি ১৯০০ খ্রিষ্টাব্দের আজকের এই দিনে সিরাজগঞ্জ জেলার তরুটিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। স্থানীয় ডায়মন্ড জুবিলী হাইস্কুলে এন্ট্রান্স ক্লাসে অধ্যয়নকালে তিনি খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন। এ সময় তিনি সভা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আন্দোলনের সপক্ষে জনমত গড়ে তোলেন এবং সলঙ্গাহাটে কংগ্রেসের অফিস প্রতিষ্ঠা করেন।
১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে তার নেতৃত্বে এক কৃষক বিদ্রোহ সংঘটিত হলে তিনি গ্রেফতার হন এবং ছয় মাসের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন। তিনি উত্তর ভারতের দেওবন্দ মাদরাসায় শিক্ষালাভ করেন। লাহোরের এরশাদ ইসলামিয়া কলেজে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় সেরা বাগ্মীর স্বীকৃতি লাভ করে তিনি ‘তর্কবাগীশ’ হিসেবে পরিচিত হন।
মওলানা তর্কবাগীশ ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে মুসলিম লীগে যোগ দেন এবং ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গীয় আইনসভার সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের ২১ ফেব্রুয়ারি ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচার গুলিবর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদে তিনি পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের অধিবেশন থেকে ওয়াক আউট করেন এবং পরে মুসলিম লীগ পার্লামেন্টারি পার্টি থেকে পদত্যাগ করেন। ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ ফেব্রুয়ারি তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং ঐ বছর ১ জুন তিনি মুক্তিলাভ করেন। এরপর তিনি আওয়ামী মুসলিম লীগে যোগ দেন।
১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে তিনি প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য এবং ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী হিসেবে পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৫৫ ও ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে যথাক্রমে মারি ও লাহোরে অনুষ্ঠিত গণপরিষদের অধিবেশনে বাংলায় বক্তৃতা প্রদান করে তিনি বাংলা ভাষার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন। তিনি ১৯৫৭ থেকে ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। আওয়ামী লীগ তখন ছয়দফা-পন্থি ও পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (পিডিএম)-পন্থি এ দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়ে। ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি পিডিএম-পন্থি আওয়ামী লীগের পূর্ব পাকিস্তান শাখার এডহক কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন। কিন্তু ১৯৬৯-এর গণআন্দোলনের পর তিনি ছয়দফা-পন্থি আওয়ামী লীগে প্রত্যাবর্তন করেন।
১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তিনি পাবনা-২ আসন থেকে জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মুজিবনগরে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে কাজ করেন। ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ অধিবেশনে তিনি সভাপতিত্ব করেন। ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তিনি জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর মাসে তিনি গণ আজাদী লীগ নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন এবং এ দলের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ জানুয়ারি তার সভাপতিত্বে ১৫টি রাজনৈতিক দলের এক যৌথসভায় ১৫ দলীয় জোট গঠিত হয়। জোটের অন্যতম প্রধান নেতা হিসেবে তিনি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে বিশিষ্ট ভূমিকা রাখেন। মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন আপসহীন। ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দের ২০ আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ২০০০ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ সরকার তাকে মরণোত্তর স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করে।
